আজকাল ওয়েবডেস্ক: অষ্টমীর অঞ্জলি হোক বা সন্ধিপুজোর ব্রত, দুর্গাপুজোর এই দিনগুলিতে উপোস রাখা বহু বাড়িরই চিরাচরিত রীতি। ভক্তিভরে দিনভর না খেয়ে থেকে উপোস করার পর কী খাবেন, তার উপরেই নির্ভর করে আপনার শরীর কতটা সুস্থ থাকবে। ভুলটা হয় ঠিক এইখানেই। দীর্ঘক্ষণ খালি পেটে থাকার পর হঠাৎ করে ভারী, তেল-মশলাযুক্ত খাবার খেলে শরীর বিগড়োতে বাধ্য। অম্বল, বদহজম আর ক্লান্তিতে উৎসবের আনন্দই মাটি হতে পারে।
তাই উপোস ভাঙার সময় কোন কোন খাবার খাবেন এবং কী কী এড়িয়ে চলবেন, তা নিয়ে সতর্ক করছেন পুষ্টিবিদ এবং চিকিৎসকেরা।

কেন প্রয়োজন সতর্কতা?
পুষ্টিবিদদের মতে, দীর্ঘক্ষণ খালি পেটে থাকলে আমাদের পাকস্থলীতে পাচক রসের ক্ষরণ বাড়তে থাকে এবং অ্যাসিডের পরিমাণও বেড়ে যায়। এই অবস্থায় হঠাৎ করে ভারী খাবার খেলে তা হজম করতে শরীরকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়। এতে একদিকে যেমন বদহজমের আশঙ্কা থাকে, তেমনই রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত ওঠানামা করতে পারে, যা শরীরের উপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করে।
আরও পড়ুন: স্ত্রীর পিঠ জিভ দিয়ে চেটে দেয় পুরুষ, স্ত্রী যদি পাল্টা লেহন করে, তবেই হয় মিলন! পৃথিবীর একমাত্র জীবিত ড্রাগন এরাই

উপোস ভাঙার সঠিক পদ্ধতি
বিশেষজ্ঞরা উপোস ভাঙার জন্য একটি ধীর এবং সুচিন্তিত পদ্ধতির কথা বলছেন।
১। শুরুটা হোক তরল দিয়ে: দিনভর জলের অভাবে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তাই উপোস ভাঙার শুরুটা করুন তরল খাবার দিয়ে। ডাবের জল এক্ষেত্রে সবচেয়ে উপকারী। এটি শরীরে জলের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থও সরবরাহ করে। এছাড়া নুন-চিনি দিয়ে লেবুর শরবত বা তাজা ফলের রস (প্যাকেটজাত নয়) খাওয়া যেতে পারে। তবে খুব ঠান্ডা জল বা পানীয় এড়িয়ে চলুন।
২। এর পর সহজপাচ্য খাবার: তরল খাওয়ার ১০-১৫ মিনিট পর এমন কিছু খান যা সহজে হজম হয় এবং শরীরে দ্রুত শক্তি জোগায়। খেজুর এক্ষেত্রে খুব ভাল বিকল্প হতে পারে। খেজুরে থাকা প্রাকৃতিক চিনি শরীরকে চাঙ্গা করে তোলে। এছাড়া পাকা কলা, আপেল বা পেঁপের মতো ফলও খেতে পারেন। জলে ভেজানো কয়েকটি আমন্ড বা আখরোটও দারুণ কাজ করে।
৩। কিছুক্ষণ পর হালকা খাবার: ফল খাওয়ার অন্তত আধ ঘণ্টা পর হালকা রান্না করা খাবার খেতে পারেন। সাবুর খিচুড়ি, ওটস, সুজি বা সব্জির স্যুপ এক্ষেত্রে আদর্শ। সঙ্গে টক দই খেতে পারেন, কারণ এতে থাকা প্রোবায়োটিক হজমে সাহায্য করে। যাঁরা ভাত খেতে চান, তাঁরা নরম ভাতের সঙ্গে হালকা কোনও তরকারি বা সেদ্ধ সব্জি খেতে পারেন।

কোন কোন খাবার একেবারেই নয়?
উপোস ভাঙার পরেই কয়েকটি খাবার কঠোরভাবে এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
১। ভাজাভুজি ও তেল-মশলাযুক্ত খাবার: লুচি, পরোটা, আলুভাজা, বেগুনি বা অতিরিক্ত মশলাদার কোনও খাবার খাবেন না। এগুলি হজম করা কঠিন এবং এতে অম্বলের সমস্যা প্রায় নিশ্চিত।
২। অতিরিক্ত মিষ্টি: অনেকেই প্রসাদে মিষ্টি দেন। কিন্তু খালি পেটে একগাদা মিষ্টি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা হুট করে বেড়ে যেতে পারে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। 
৩। কড়া চা বা কফি: খালি পেটে ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় গ্যাস-অম্বলের সমস্যা বাড়াতে পারে।
৪। ঠান্ডা পানীয়: কৃত্রিম ঠান্ডা পানীয় হজমের প্রক্রিয়াকে আরও ধীর করে দেয়।
মনে রাখবেন, উপোস ভাঙার মূল মন্ত্র হল- ধীরে ধীরে শরীরকে খাবারের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া। সঠিক নিয়ম মেনে চলুন আর সুস্থ শরীরে উপভোগ করুন পুজোর বাকি দিনগুলো।