আপনি কি আপনার টুথব্রাশ ব্যবহারে অসাবধান? পুরনো টুথব্রাশ বারবার ব্যবহার করছেন, অথবা বন্ধুর বাড়িতে রাত কাটিয়ে তাঁর টুথব্রাশ ধার নিচ্ছেন? টুথব্রাশকে হালকাভাবে নিলে বড় স্বাস্থ্যঝুঁকির দরজা খুলে দেবেন। যেমন হৃদরোগ এবং ডায়াবিটিস।
টুথব্রাশের গুরুত্ব নিয়ে বিশেষজ্ঞের মত
চিকিৎসক বিমল অরোরা বলেন, “টুথব্রাশ আপনার শরীরকে নানা রোগ এবং সংক্রমণ থেকে রক্ষা করার প্রথম সারির রক্ষাকবচ।”
তিনি ব্যাখ্যা করেন, “যখন কেউ দাঁত মাজে, তখন সে জীবাণুর এক জৈব শৃঙ্খল প্রতিক্রিয়াকে থামিয়ে দেয় — যা মুখ থেকে নিঃশব্দে হৃদয়ে পৌঁছে যেতে পারে, এমনকি শরীর কীভাবে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে তাতেও প্রভাব ফেলতে পারে।”
এই ছোট্ট অভ্যাস শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোকে রক্ষা করে। অর্থাৎ, আপনার টুথব্রাশ একরকম ‘প্রহরী’র মতো কাজ করে, যা মুখের সংক্রমণকে বড় রোগে রূপ নেওয়া থেকে থামায়।
মুখের ব্যাকটেরিয়ার ভয়াবহতা
ডঃ অরোরার মতে, আমাদের মুখে প্রায় ৭০০ প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া থাকে। যদি নিয়মিত দাঁত না মাজা হয়, এই ব্যাকটেরিয়াগুলো দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে এবং মাড়ির ধারে জমে আঠালো প্লাক তৈরি করে — যা প্রদাহের কারণ হয়।
তিনি সতর্ক করেন, “এই ব্যাকটেরিয়া ও প্রদাহজনক অণুগুলি রক্তপ্রবাহে ঢুকে পড়লে, তা হার্ট, লিভার ও অগ্ন্যাশয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে পৌঁছে গিয়ে শরীরে নিম্নমাত্রার দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।”
ডায়াবিটিসের ঝুঁকি
ডঃ অরোরার মতে, “রক্তে অতিরিক্ত শর্করা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়, ফলে মাড়ির সংক্রমণ সহজে হয়। আবার মাড়ির সংক্রমণ থেকে উৎপন্ন টক্সিন ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়, ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা আরও বেড়ে যায়।”
এইভাবে দুটোই একে অপরকে প্রভাবিত করে — খারাপ মুখের স্বাস্থ্য রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ কঠিন করে তোলে, আর অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবিটিস মাড়িকে দুর্বল করে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। এই দুষ্টচক্র থেকে মুক্তির সহজ উপায়গুলির মধ্যে অন্যতম হলো নিয়মিত দাঁত-মাজা ও মুখ পরিষ্কার রাখা।
হৃদরোগের আশঙ্কা
তিনি বলেন, “মাড়ির ক্রনিক ইনফ্লেমেশন শুধু রক্তপাতই ঘটায় না, বরং ধমনীগুলোকে শক্ত ও সংকীর্ণ করে তোলে— যাকে বলে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস।”
এই প্রদাহ হার্টের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে।
জনস হপকিন্স মেডিসিনের মতে, অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস হলো ধমনীর ভিতরে প্লাক জমে যাওয়ার ফলে ধমনীর ঘন এবং শক্ত হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া।
ডঃ অরোরা আরও বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে মুখের সংক্রমণের বিরুদ্ধে শরীরের লড়াই হৃদয়ের প্রতিরোধক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়। যাঁদের অনিয়ন্ত্রিত মাড়ির রোগ আছে, তাঁদের কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ হওয়ার আশঙ্কা সুস্থ মাড়ির লোকদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।”
অর্থাৎ, প্রদাহ যতদিন ধরে চলে, হৃদয় তত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় — আর ততই বাড়ে হৃদরোগের ঝুঁকি।
সুস্থ অভ্যাসই রক্ষা করবে
ডেন্টিস্ট পরামর্শ দেন—
দিনে দু’বার দাঁত মাজুন,
নিয়মিত ফ্লস করুন,
সুষম খাদ্যগ্রহণ করুন,
এবং রুটিন ডেন্টাল চেক-আপে যান।
টুথব্রাশ কত ঘন ঘন বদলাবেন?
ডঃ অরোরার পরামর্শ, “প্রতি তিন মাসে একবার টুথব্রাশ বদলানো উচিত।”
পুরনো টুথব্রাশে জীবাণু জমে থাকে, যা মুখের স্বাস্থ্য আরও খারাপ করে দিতে পারে। এছাড়া সময়ের সঙ্গে ব্রাশের ব্রিসল নরম হয়ে যায় বা বাঁক নেয়, ফলে তা দাঁতের ফাঁকে ঠিকমতো পরিষ্কার করতে পারে না। এতে ব্যাকটেরিয়া সহজেই বাড়ে।
অবশেষে তিনি সতর্ক করেন— তামাক সেবন ও অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার থেকে দূরে থাকুন, কারণ এগুলি দাঁত ও মাড়ির সবচেয়ে বড় শত্রু।
