আজকাল ওয়েবডেস্ক: স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের ডায়েট চার্টে এখন হামেশাই উঁকি দেয় সুপারফুডের তকমা পাওয়া নানা ধরনের বীজ। তার মধ্যে চিয়া এবং ফ্ল্যাক্স (বা তিসি) বীজ নিয়ে উৎসাহ সবচেয়ে বেশি। ওজন কমানো থেকে শুরু করে সার্বিক স্বাস্থ্যের উন্নতি, এই দুই বীজের গুণের শেষ নেই। কিন্তু যখন হৃদযন্ত্রের সুরক্ষার প্রশ্ন আসে, তখন কার পাল্লা বেশি ভারী? চিয়া সিড না ফ্ল্যাক্স সিড, হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য কোনটি বেছে নেবেন?

পুষ্টিবিদ এবং গবেষকদের মতে, এই দুই বীজই হার্টের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এই বীজের মধ্যে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। পাশাপাশি এগুলি ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভান্ডার। তবে পুষ্টিগুণের সামান্য তারতম্যের কারণে এদের কার্যকারিতাতেও কিছুটা পার্থক্য দেখা যায়।

ফ্ল্যাক্স বীজ
ফ্ল্যাক্স বা তিসির বীজকে হৃদয়ের বন্ধু বলার অন্যতম কারণ হল এতে থাকা আলফা-লিনোলেনিক অ্যাসিড। এটি এক প্রকার উদ্ভিদজাত ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। এই ফ্যাটি অ্যাসিড রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে, রক্তনালীর প্রদাহ কমাতে এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। একাধিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, নিয়মিত ফ্ল্যাক্স বীজ খেলে ‘খারাপ’ কোলেস্টেরল (এল ডি এল) এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমে।
তবে ফ্ল্যাক্স বীজের সবচেয়ে বড় সম্পদ হল ‘লিগনান’। এটি এক প্রকার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা অন্য কোনও উদ্ভিজ্জ খাবারে এত বেশি পরিমাণে পাওয়া যায় না। এই লিগনান ধমনীকে সুস্থ রাখতে এবং অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস (ধমনীর দেওয়াল শক্ত হয়ে যাওয়া) প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
কিন্তু একটা বিষয় মনে রাখা জরুরি। ফ্ল্যাক্স বীজের বাইরের আবরণ বেশ শক্ত, তাই গোটা খেলে এর পুষ্টিগুণ শরীর ঠিকমতো শোষণ করতে পারে না। এর সম্পূর্ণ উপকার পেতে হলে ফ্ল্যাক্স বীজকে গুঁড়ো করে খাওয়া আবশ্যক।

আরও পড়ুন: পৃথিবীর একমাত্র সাদা জিরাফ কোথায় থাকে? কার ভয়ে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তায় মুড়ে রাখা হয় তাকে? জানলে চোখে জল আসবে

চিয়া বীজ
অন্যদিকে, চিয়া বীজও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে ভরপুর। ফ্ল্যাক্স বীজের তুলনায় এতে আলফা-লিনোলেনিক অ্যাসিড-এর পরিমাণ সামান্য কম হলেও অন্যান্য পুষ্টিগুণে এটি কম যায় না। চিয়া বীজের সেরা গুণ হল এর মধ্যে থাকা দ্রবণীয় ফাইবার। জলে ভেজালে এটি একটি জেলি জাতীয় পদার্থে পরিণত হয়। এই ফাইবার অন্ত্রে গিয়ে খারাপ কোলেস্টেরলকে ভেঙে ফেলে এবং শরীর থেকে বের করে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
এছাড়াও, এই ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে, যা পরোক্ষভাবে হার্টের উপর চাপ কমায়। চিয়া বীজের আরও একটি সুবিধা হল, এটি গোটা অবস্থাতেই খাওয়া যায় এবং শরীর সহজেই এর পুষ্টি শোষণ করতে পারে। ফ্ল্যাক্স বীজের মতো এটিকে গুঁড়ো করার কোনও ঝক্কি নেই।

আরও পড়ুন: পৃথিবীর একমাত্র সাদা জিরাফ কোথায় থাকে? কার ভয়ে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তায় মুড়ে রাখা হয় তাকে? জানলে চোখে জল আসবে

কোনটা বাছবেন?
তাহলে শেষ পর্যন্ত হার্টের জন্য সেরা কে? পুষ্টিবিদদের মতে, এই প্রশ্নের কোনও সহজ উত্তর নেই। ফ্ল্যাক্স বীজে ওমেগা-৩ এবং বিশেষ করে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লিগনানের পরিমাণ বেশি, যা সরাসরি হার্টের অসুখ প্রতিরোধে সাহায্য করে। অন্যদিকে, চিয়া বীজে ফাইবারের পরিমাণ বেশি এবং এটি হজম করা সহজ, যা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকর।
তাই কোনও একটিকে ‘সেরা’ বলার পরিবর্তে, দু’টিকেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খাদ্যতালিকায় রাখাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। হয়তো সপ্তাহের কয়েক দিন ফ্ল্যাক্স বীজের গুঁড়ো দই বা আটার সঙ্গে মিশিয়ে খেলেন, আর বাকি দিনগুলোয় চিয়া বীজ ভেজানো জল স্মুদিতে যোগ করে খেলেন। এতে দুই বীজেরই সম্পূর্ণ পুষ্টিগুণ পাওয়া যাবে এবং হৃদযন্ত্রও থাকবে সুরক্ষিত। পছন্দ আপনার, তবে হৃদয়ের যত্ন নিতে এই দুই বন্ধুর সঙ্গ ছাড়লে কিন্তু চলবে না।