ঝাল খাবার খেলে পেটের ক্যানসার হয়—এই ধারণা বহু বছর ধরেই প্রচলিত। লঙ্কা খাওয়ার সময় যে জ্বালা অনুভূত হয়, তা এই ভুল ধারণাকে আরও জোরালো করে। তবে বৈজ্ঞানিক গবেষণা বলছে, বিষয়টি অনেক বেশি জটিল। অতিরিক্ত ঝাল বা অতিরিক্ত আচারজাত খাবার পাকস্থলীতে জ্বালা বা প্রদাহ তৈরি করতে পারে ঠিকই, কিন্তু ঝাল খাবার সরাসরি পেটের ক্যানসার ঘটায়—এমন কোনও প্রমাণ নেই। বরং হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি সংক্রমণ, জিনগত কারণ, খাদ্যাভ্যাস এবং ধূমপান–মদ্যপানের মতো জীবনযাপনের অভ্যাসই প্রধান ঝুঁকির কারণ। থানের কিমস হাসপাতালের অনকোলজিক্যাল সায়েন্সেসের ডিরেক্টর ড. অনিল হিরুর জানালেন প্রয়োজনীয় তথ্য।

পেটের (গ্যাস্ট্রিক) ক্যানসার তখনই হয় যখন পাকস্থলীর কোষ অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে গিয়ে টিউমার তৈরি করে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকির কারণ হল হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি সংক্রমণ, যা পাকস্থলীতে দীর্ঘদিন প্রদাহ বা আলসার তৈরি করে। চিকিৎসা না হলে এই প্রদাহ ধীরে ধীরে ক্যানসারের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
এছাড়া অতিরিক্ত নোনতা বা প্রক্রিয়াজাত খাবার বারবার খেলে ঝুঁকি বাড়ে, কারণ এসব খাবারে নাইট্রোসামিনসহ নানা ধরনের কার্সিনোজেন থাকে।

মশলাদার খাবার যেমন লঙ্কা, হলুদ, গোলমরিচের প্রভাবও দ্বিমুখী হতে পারে। লঙ্কার ‘ক্যাপসাইসিন’ বেশি খেলে পেটের জ্বালা বা প্রদাহ বাড়তে পারে, বিশেষ করে যাদের আগে থেকেই গ্যাস্ট্রাইটিস বা আলসার আছে। তবে পরিমিত মাত্রায় ক্যাপসাইসিনের কিছু অ্যান্টি–ইনফ্ল্যামেটরি এবং সম্ভাব্য অ্যান্টি–ক্যানসার বৈশিষ্ট্যও রয়েছে বলে গবেষণায় দেখা গিয়েছে। এটি অস্বাভাবিক কোষ ধ্বংস করতে এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সহায়তা করতে পারে।

মূল বিষয় হল সামগ্রিক খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনধারা। কোনও একটি উপাদান নয়। প্রচুর ফল, সবজি এবং ফাইবারযুক্ত খাবার—যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দিয়ে শরীরকে রক্ষা করে—এসব পেটের ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। বিপরীতে অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত মাংস, পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট এবং পুষ্টিহীন খাবার ঝুঁকি বাড়ায়। অতিরিক্ত অ্যালকোহল এবং ধূমপান পাকস্থলীর কোষ ক্ষতিগ্রস্ত করে ক্যানসারের সম্ভাবনা আরও বাড়িয়ে দেয়।
পরিবেশগত এবং জিনগত কারণও গুরুত্বপূর্ণ। পূর্ব এশিয়া এবং লাতিন আমেরিকার মতো অঞ্চলে পেটের ক্যানসার তুলনামূলক বেশি দেখা যায়। সেখানে ঝাল খাবারের পাশাপাশি অতিরিক্ত নোনতা বা আচারজাত খাবার খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। অর্থাৎ লবণ, নাইট্রেট এবং দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ—এই মিশ্রণই প্রকৃত বিপদ তৈরি করে, ঝাল নিজে নয়।

সব মিলিয়ে স্পষ্ট যে ঝাল খাবার নিজে ক্যানসারের কারণ নয়। মূল ঝুঁকি লুকিয়ে থাকে সংক্রমণ, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং দীর্ঘদিনের ভুল খাদ্যাভ্যাসে। তাই ভয় পাওয়ার প্রয়োজন নেই। বরং প্রয়োজন সচেতনতা, সঠিক চিকিৎসা এবং পরিমিত, ভারসাম্যপূর্ণ খাবার বেছে নেওয়ার অভ্যাস। প্লেটে ঝাল থাকতেই পারে। বিপদ ডেকে আনে অবহেলা।