আমরা অনেক সময়েই প্রিয়জনকে ‘পিঙ্কি প্রমিস’ করি। বন্ধুত্ব, বিশ্বাস আর ভালবাসার প্রতীক এই ‘পিঙ্কি প্রমিস’। বন্ধুর বা প্রিয়জনের সঙ্গে ছোট আঙুল জোড়া লাগিয়ে কথা রাখার প্রতিশ্রুতি দেন অনেকে। কিন্তু জানেন কি, এই সামান্য অঙ্গীকারের পেছনে এক ভয়ংকর ইতিহাস লুকিয়ে আছে যা একসময় প্রাণহানির শপথ হিসেবে প্রচলিত ছিল?
‘পিঙ্কি প্রমিস’ শব্দটির শিকড় প্রাচীন জাপানের সামুরাই সংস্কৃতিতে। তখন একে বলা হত ‘ইউবিকিরি’ যার অর্থ, ‘আঙুল কেটে প্রতিশ্রুতি দেওয়া’। বিশ্বাস করা হত, কেউ যদি প্রতিশ্রুতি ভাঙেন, তবে তাকে নিজের ছোট আঙুল কেটে ফেলতে হবে। এই নিয়ম ছিল শুধু শাস্তি নয়, বরং সম্মানের প্রতীকও।
কিন্তু কেন ছোট আঙুল কাটারই নিয়ম চালু ছিল? আসলে জাপানের যোদ্ধাদের তরোয়াল ধরার সময় এই আঙুলটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। ছোট আঙুল হারালে তাদের তরোয়াল ধরা দুর্বল হয়ে পড়ত। ফলে যুদ্ধক্ষেত্রে লড়াই করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যেত। অর্থাৎ আঙুল হারানো মানে ছিল নিজের মর্যাদা, শক্তি ও বিশ্বাসযোগ্যতা হারানো। তাই ‘ইউবিকিরি’ ছিল এমন এক প্রতিশ্রুতি, যা ভাঙা মানেই নিজের সম্মান নষ্ট হয়ে যাওয়া।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ভয়ংকর রীতির রক্তাক্ত দিক হারিয়ে যায়। সমাজ বদলায়, সংস্কৃতিতে নরম মনোভাব আসতে থাকে। আর ‘ইউবিকিরি’ ধীরে ধীরে রূপ নেয় ‘পিঙ্কি প্রমিস’-এ। যা একটি প্রতীকী অঙ্গভঙ্গি হিসেবে বন্ধুত্ব ও ভালবাসার মিষ্টি প্রকাশে পরিণত হয়। এখন এটি বিশ্বজুড়ে একটি জনপ্রিয় রীতি। বিশেষত শিশু ও তরুণদের মধ্যে, যারা হাসিমুখে ছোট আঙুল জোড়া দিয়ে বিশ্বাসের প্রতিশ্রুতি দেয়। তবু এর পেছনের বার্তাটি আজও একই রকম গভীর। যা হল ‘আমি যদি কথা ভাঙি, আমি নিজের এক অংশ হারাব।‘ তাই পরের বার কারও সঙ্গে ‘পিঙ্কি প্রমিস’ করার সময়ে মনে রাখবেন, এই ছোট্ট আঙুলের বন্ধনে একসময় লুকিয়ে ছিল জীবন-মরণের শপথ, যা আজও আমাদের শেখায়, বিশ্বাসই বন্ধুত্বের সবচেয়ে শক্ত বন্ধন।
