আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রেমিকার সঙ্গে প্রথম দেখা, ভেবেছিলেন অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা হবে। অভিজ্ঞতা হল বটে। কিন্তু সেই অভিজ্ঞতা মধুর নয়, বরং ভয়ঙ্কর! সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রেমের ফাঁদে পা দিয়ে অপহৃত হয়ে যান দিল্লির তরুণ। শেষ পর্যন্ত বহু চেষ্টার পর উদ্ধার করল পুলিশ। নতুন দিল্লির ঘটনা।
দু’মাসের ভার্চুয়াল আলাপচারিতা গড়িয়েছিল গভীর সম্পর্কে। সেই সূত্র ধরেই প্রেমিকার সঙ্গে প্রথমবার দেখা করার উত্তেজনা নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন দিল্লির বছর কুড়ির এক তরুণ। কিন্তু সেই বহু প্রতীক্ষিত মুহূর্তই যে তাঁর জীবনের এক বিভীষিকায় পরিণত হবে, তা দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি তিনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় পাতা ‘হানিট্র্যাপ’ বা প্রেমের ফাঁদে পা দিয়ে চরম হেনস্থার শিকার হতে হল তাঁকে। তবে শেষ পর্যন্ত বড় কোনও ক্ষতি হওয়ার আগেই অপহরণকারীদের খপ্পর থেকে তাঁকে উদ্ধার করেছে দিল্লি পুলিশ। ঘটনায় ইতিমধ্যেই একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনাটি গত ৩ জুলাইয়ের। নয়া দিল্লির শকরপুর এলাকার বাসিন্দা নিখিল (নাম পরিবর্তিত) ওই দিন বাড়িতে জানান, তিনি খুশি নামে এক বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন। এই খুশির সঙ্গেই গত দু’মাস ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিয়মিত কথা হত তাঁর। কিন্তু বাড়ি থেকে বেরোনোর পর ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যায়। নিখিল না ফেরায় চিন্তায় পড়ে পরিবার। এর পরেই নিখিলের মোবাইল থেকে তাঁর বোনের কাছে একটি ফোন আসে। কিন্তু ফোনের ওপার থেকে ভাইয়ের গলা শুনতে পাননি তিনি। বরং এক কর্কশ, অচেনা পুরুষ কণ্ঠ নিজেকে খুশির ভাই বলে পরিচয় দেয়। সে জানায়, নিখিলকে তাদের বোনের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় ধরা হয়েছে। কোনও মতেই তাকে ছাড়া হবে না। এই কথা বলেই ফোন কেটে দেয় অভিযুক্ত।
আরও পড়ুন: ‘ধরবে নাকি?’ পুরুষাঙ্গ দেখিয়ে কুপ্রস্তাব দেন প্রযোজক! টাকার বিনিময়ে সঙ্গমও করেন কামসূত্রের নায়িকা?
আরও পড়ুন: ২৬৪৫ লিটার স্তন্য উৎপন্ন হয় বধূর শরীরে! 'রোজ রাতে ৩ ঘণ্টা..' বিপুল দুগ্ধ উৎপাদনের রহস্য ফাঁস করলেন নিজেই
এই ফোন পেয়েই আতঙ্কে শিউরে ওঠেন নিখিলের বোন। সময় নষ্ট না করে তিনি ছুটে যান শকরপুর থানায়। গোটা ঘটনা পুলিশকে জানান তিনি। বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে পূর্ব দিল্লির ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (ডিসিটি) অভিষেক ধনিয়ার নেতৃত্বে একটি বিশেষ দল গঠন করে তদন্তে নামে প্রশাসন। অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ নিখিলের মোবাইল ফোনের টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করার কাজ শুরু করে। তদন্তে জানা যায়, ফোনটির অবস্থান ময়ূর বিহার মেট্রো স্টেশনের কাছে যমুনা খাদার এলাকায়।
অবস্থান চিহ্নিত হতেই পুলিশের দলটি দ্রুত সেই এলাকায় পৌঁছয়। পুলিশ আধিকারিকরা দেখেন, সেখানে ৫-৬ জন যুবক মিলে নিখিলকে ঘিরে ধরে বেধড়ক মারধর করছে। পুলিশের গাড়ি দেখেই দুষ্কৃতীরা পালাতে শুরু করে। অধিকাংশই অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে পালাতে পারলেও, পুলিশ ধাওয়া করে একজনকে ধরে ফেলে। ধৃতের নাম সঞ্জীব কুমার লোহিয়া (৩১), সে ত্রিলোকপুরীর বাসিন্দা বলে জানিয়েছে পুলিশ। ডিসিপি অভিষেক ধনিয়া জানান, ধৃতের কাছ থেকে নিখিলের মোবাইল ফোনটিও উদ্ধার করা হয়েছে।
আহত ও আতঙ্কিত নিখিলকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করে পুলিশই। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের দাবি, গোটা ঘটনাটিই পরিকল্পিত। প্রেমের ফাঁদে ফেলে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের ছক কষেছিল অপরাধীরা। এমনকী, ‘খুশি’ নামে ওই মহিলার প্রোফাইলটিও আসলে ভুয়ো বলেই মত পুলিশের। এই ধরনের চক্র সোশ্যাল মিডিয়ায় সুন্দরী মহিলাদের ছবি ব্যবহার করে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খোলে এবং তরুণদের প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে নির্জন জায়গায় ডেকে আনে। তার পরেই শুরু হয় আসল খেলা, মারধর এবং মোটা টাকা মুক্তিপণ আদায়।
ইতিমধ্যেই অপহরণ এবং মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টার অভিযোগে মামলা রুজু করেছে পুলিশ। ধৃত সঞ্জীবকে জেরা করে বাকি অভিযুক্তদের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। এক পুলিশ কর্তা বলেন, “সোশ্যাল মিডিয়ার এই ফাঁদ নিয়ে তরুণ প্রজন্মকে আরও সতর্ক হতে হবে। অচেনা কারও সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার আগে তার পরিচয় যাচাই করা অত্যন্ত জরুরি।” এই ঘটনা রাজধানীর বুকে অনলাইন প্রতারণার ভয়ঙ্কর দিকটি আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল মত বিশেষজ্ঞদের।
