আজকাল ওয়েবডেস্ক: যৌনতা মানেই কি শুধুমাত্র শারীরিক মিলন? ক্রমশ এই ধারণা থেকে ধীরে ধীরে সরে আসছে আধুনিক সম্পর্ক ভাবনা। সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের মতে, স্নেহ ভরা শরীরী স্পর্শ-বিশেষ করে আদর-দম্পতিদের মধ্যে বিশ্বাস, মানসিক সংযোগ ও দীর্ঘস্থায়ী ঘনিষ্ঠতা গড়ে তুলতে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখে। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, নিয়মিত আলিঙ্গন বা কাছাকাছি থাকা মানসিক চাপ কমায়, সম্পর্কের টান মজবুত করে এবং নানা সমস্যা সামলাতেও সাহায্য করে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেন মেডিসিনের গবেষণা অনুযায়ী, স্নেহপূর্ণ স্পর্শ কর্টিসল বা স্ট্রেস হরমোন কমাতে সাহায্য করে এবং অক্সিটোসিনের মতো ‘ফিল গুড’ হরমোন নিঃসরণ বাড়ায়। কিছু ক্ষেত্রে রক্তচাপ কমারও ইঙ্গিত মিলেছে। অর্থাৎ, আদর শুধু আবেগের বিষয় নয়, শরীরের স্বাস্থ্যের পক্ষেও ইতিবাচক বলে মনে করা হচ্ছে।
‘সেক্স উইথ ড. জেস’ পডকাস্টের সঞ্চালক ও সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ড. জেসিকা ও’রাইলির বক্তব্য, “নিয়মিত শারীরিক আদর করা হলে সঙ্গী আপনাকে বেশি বিশ্বাসযোগ্য ও আকর্ষণীয় বলে মনে করবে। আদর এমন এক ঘনিষ্ঠতা তৈরি করে, যা সব সময় যৌনতায় গিয়েই যে শেষ হবে তার দরকার নেই।” তাঁর মতে, এই অভ্যাস দম্পতিদের মধ্যে মনোমালিন্য কমাতে সাহায্য করে এবং সমস্যা মেটানোর ক্ষমতা বাড়ায়।
তবে প্রতিটি সম্পর্ক আলাদা। ‘আদর’ কীভাবে হবে, তার কোনও বাঁধাধরা নিয়ম নেই। কারও কাছে তা হতে পারে সোফায় পাশাপাশি বসে থাকা, আবার কারও কাছে শুয়ে পড়ে আলিঙ্গন। ২০১১ সালের এক সমীক্ষার তথ্য তুলে ধরে ও’রাইলি জানান, প্রায় ১৬ শতাংশ ক্ষেত্রে স্নেহের ছোঁয়া থেকে যৌনতায পর্যন্ত গড়ায়, কিন্তু অনেক দম্পতির কাছেই আদর নিজেই পরিপূর্ণ তৃপ্তির উৎস।
এই প্রসঙ্গে সম্পর্ক ও অন্তরঙ্গতা কোচ আইরিন ফেয়ারের ব্যাখ্যা, “সচেতনভাবে আদর করলে দু’জনেই একে অপরের শরীরী উপস্থিতি অনুভব করেন- শ্বাসপ্রশ্বাস, স্পর্শ, সুখ। কোনও ব্যাঘাত ছাড়া এই সময়টুকু শুধু সঙ্গীর জন্য বরাদ্দ থাকলে সম্পর্কের ভিত্তি আরও শক্ত হয়।”
এদিকে, শারীরিক ঘনিষ্ঠতার বিভিন্ন ভঙ্গি নিয়েও আলোচনা চলছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন যৌনতায় স্বাচ্ছন্দ্যই শেষ কথা। অনেক দম্পতি চেয়ারে বসে যৌনতার অভিজ্ঞতা নিতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। সে ক্ষেত্রে শক্তপোক্ত কাঠের চেয়ার বা আরামকেদারা ব্যবহার করা যেতে পারে। শর্ত একটাই, বসে আরাম পাওয়া জরুরি। ‘আর্মচেয়ার লোটাস’, ‘বোস্ট্রিং’ বা ‘জিল’ ইত্যাদি এমন ভঙ্গির কথা শোনা গেলেও, সঙ্গীর শারীরিক অসুবিধা হচ্ছে কি না, তা খেয়াল রাখাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে কয়েকটি সতর্কতা:
সম্পর্ককে ‘রঙিন’ করতে গিয়ে জোর করে কোনও পরীক্ষা-নিরীক্ষা নয় বরং দু’জনের সম্মতি ও স্বাচ্ছন্দ্যই গুরুত্বপূর্ণ।
কোমর বা হাড়ের ব্যথা থাকলে চেয়ারে যৌনতা এড়িয়ে চলাই ভাল।
বিছানার বদলে অন্য জায়গায় মিলন করতে চাইলে আগে সঙ্গীর মতামত জেনে নেওয়া জরুরি।
প্রথমবার করার অভিজ্ঞতা সুখকর না হলে, সেটা বারবার করার প্রয়োজন নেই।
সব মিলিয়ে, বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য একটাই—ঘনিষ্ঠতা কোনও নিয়মে বাঁধা নয়। পারস্পরিক সম্মান, আরাম ও আবেগের জায়গা থেকেই সম্পর্কের উষ্ণতা তৈরি হয়। কাডলিং হোক বা অন্য কোনও শারীরিক সান্নিধ্য—উদ্দেশ্য একে অপরের কাছে আরও কাছাকাছি হওয়া।
