চিকিৎসাবিজ্ঞানে নতুন যুগের সূচনা করেছেন গবেষকরা। সুইজারল্যান্ডের জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা তৈরি করেছেন এক অভিনব ‘পুপ টেস্ট’ যা মলের নমুনা বিশ্লেষণ করে ৯০ শতাংশ নির্ভুলতায় কোলন ক্যানসার শনাক্ত করতে পারে।
এই পরীক্ষাটি চালায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি। মানুষের অন্ত্রে থাকা লক্ষ লক্ষ ব্যাকটেরিয়ার গঠন ও তাদের পরিবর্তন বিশ্লেষণ করে এই এআই সিস্টেম এমন সব সূক্ষ্ম জৈব সংকেত খুঁজে বার করে, যা ক্যানসারের উপস্থিতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত।
গবেষকদের দাবি, এটি প্রচলিত কোলনোস্কোপি পরীক্ষার প্রায় সমান কার্যকর, অথচ কোলনোস্কোপির মতো অস্বস্তিকর, সময়সাপেক্ষ বা ব্যয়বহুল নয়। বর্তমানে ব্যবহৃত ফেকাল টেস্ট বা রক্ত পরীক্ষার তুলনায় এই নতুন পদ্ধতি অনেক বেশি সংবেদনশীল ও নির্ভুল।
কীভাবে কাজ করে এই ‘পুপ টেস্ট’? আমাদের অন্ত্রে অসংখ্য জীবাণু বা গাট মাইক্রোবায়োম বাস করে। ক্যানসার বা অন্য কোনও গুরুতর রোগ হলে এই জীবাণুদের বিন্যাসে সূক্ষ্ম পরিবর্তন ঘটে। জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল সেই পরিবর্তনগুলি শনাক্ত করার জন্য একটি বিশাল ব্যাকটেরিয়া ডেটাবেস ও মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম ব্যবহার করেছেন। এআই সিস্টেমটি প্রতিটি মল নমুনা থেকে ব্যাকটেরিয়ার ‘মাইক্রোবিয়াল ফিঙ্গারপ্রিন্ট’ তৈরি করে এবং স্বাভাবিক নমুনার সঙ্গে তুলনা করে নির্ণয় করে কোনটিতে ক্যানসারের সংকেত রয়েছে।
এই পদ্ধতিতে রোগীর শরীরে কোনও যন্ত্র ঢোকানো বা অস্বস্তিকর প্রক্রিয়ার প্রয়োজন পড়ে না। শুধু মলের একটি ছোট নমুনা সংগ্রহ করলেই যথেষ্ট।
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এটি হতে পারে ভবিষ্যতের সবচেয়ে সহজ, কম খরচের ও নন-ইনভেসিভ ক্যানসার স্ক্রিনিং টেস্ট।
কেন এই উদ্ভাবন এত গুরুত্বপূর্ণ? আসলে বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় দেড় কোটি মানুষ কোলন বা রেকটাল ক্যানসারে আক্রান্ত হন, যার মধ্যে লক্ষাধিক মানুষ প্রাণ হারান। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি মারণ রোগটি প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে নিরাময়ের হার ৯০ শতাংশ পর্যন্ত থাকে। কিন্তু ব্যয়বহুল ও অস্বস্তিকর পরীক্ষার কারণে অনেকেই সময়মতো স্ক্রিনিং করান না। তবে এই এআই-নির্ভর পুপ টেস্ট সেই চিত্রটাই বদলে দিতে পারে। একটি সহজ, ব্যথাহীন ও সুলভ পরীক্ষার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হবে।
গবেষক দল জানিয়েছে, ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এখনও চলছে। প্রাথমিক ফলাফল অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। তাঁরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে একই পদ্ধতি দিয়ে ইনফ্ল্যামেটরি বাওয়েল ডিজিজ (আইবিডি), লিভার ডিজঅর্ডার, এমনকী মেটাবলিক রোগও শনাক্ত করা সম্ভব হবে একটি মাত্র মল পরীক্ষার মাধ্যমেই। এই প্রযুক্তি শুধু ক্যানসার শনাক্ত নয়, বরং চিকিৎসাবিজ্ঞানের সম্পূর্ণ নতুন দিগন্তের সূচনা করতে পারে।
