আজকাল ওয়েবডেস্ক: আত্মসম্মান না প্রেম? এই দুইয়ের মধ্যে যদি একজন পুরুষকে বেছে নিতে বলা হয়, আপনি কোনটা বেছে নেবেন? তাহলে অধিকাংশ পুরুষই বেছে নেবেন আত্মসম্মান। এক মার্কিন সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ৭৪ শতাংশ পুরুষ নিঃসঙ্গ থাকার ঝুঁকি নিতে রাজি, কিন্তু অপমানিত হয়ে বাঁচতে চান না।
এই সমীক্ষাটি পরিচালনা করেছিলেন জেফ ও শঁটি ফেল্ডহান, নামের দুই গবেষক। তাঁদের ‘ফর উইমেন অনলি’ শীর্ষক গবেষণামূলক গ্রন্থে উঠে এসেছে এই আশ্চর্য পরিসংখ্যান। পুরুষদের বৃহৎ অংশ জানিয়েছেন, তাঁরা অপমানিত হওয়ার বদলে নিঃসঙ্গতা বেছে নেবেন। এক কথায়, তাঁদের কাছে ভালবাসার চেয়েও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ‘আত্মসম্মান’।

আরও পড়ুন: ১২ জন স্ত্রী! বাচ্চা করাই নেশা! ১০২ সন্তানের বাবা হয়ে অবশেষে থামলেন ৬৮-র মুসা, কেন ক্ষান্ত দিলেন? কী বললেন এ যুগের ধৃতরাষ্ট্র?

আরও পড়ুন: ‘ধরবে নাকি?’ বিরাট পুরুষাঙ্গ দুলিয়ে কুপ্রস্তাব দেন বিখ্যাত ‘খান’! বলিউডের অন্ধকার দিক নিয়ে বিস্ফোরক শার্লিন চোপড়া

সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের সামনে দু’টি পরিস্থিতি পেশ করা হয়েছিল। এক, তাঁরা নিজেকে নিঃসঙ্গ ও অবাঞ্ছিত অনুভব করছেন। দুই, তাঁরা অনুভব করছেন যে তাঁদের সম্মান নেই, তাঁরা মূল্যহীন। এই দুই পরিস্থিতির মধ্যে কোনটা বেছে নেবেন তাঁরা? এই প্রশ্নের উত্তরে, ৭৪ শতাংশ উত্তরদাতা বেছে নিয়েছেন প্রথম বিকল্পটি। অর্থাৎ, তাঁদের মতে ভালবাসার অনুপস্থিতি মেনে নেওয়া যায়, কিন্তু অপমান মেনে নেওয়া যায় না।

মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, এই মানসিকতা অদ্ভুত শোনালেও গভীর ভাবে চিন্তা করলে খুব একটা অপ্রত্যাশিত নয়। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষদের ভূমিকা চিরকাল ‘দায়িত্বগ্রহণকারী’, ‘নেতা’, ‘সংরক্ষক’ ইত্যাদি রোলে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তাতে তাঁদের জীবনে আত্মসম্মানবোধ একটা আবশ্যিক ভিত্তিপ্রস্তরের মতো। ছোট থেকে শেখানো হয়েছে, ‘ছেলে হয়ে এত দুর্বলতা দেখাচ্ছিস কেন?’, ‘পুরুষরা কাঁদে না’, ‘তোর কথা কে শুনবে?’ ইত্যাদি। এসব বাক্য তাঁদের মধ্যে পৌরুষের এক মেকি মুখোশ গড়ে তোলে। এই মুখোশ ভাঙতে গিয়ে অনেকেই মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হন।

বিশেষজ্ঞরা আরও জানাচ্ছেন, এই প্রবণতা শুধু সম্পর্ক নয়, কর্মক্ষেত্র বা বন্ধুত্বেও প্রভাব ফেলে। পুরুষরা অনেক সময় নিজেকে একঘরে করে নেন, সম্পর্ক থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন, কারণ তাঁরা অসম্মানিত বোধ করেন। এর পরিণতিতে একাকীত্ব, অবসাদ এবং আত্মহত্যার প্রবণতাও বেড়ে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার হার মহিলাদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।

ভারতীয় সমাজেও এই প্রবণতার ছায়া লক্ষ করা যায়। বহু পুরুষ মনের কথা বলতে সংকোচ করেন, কাউন্সেলিং করাতে চান না, বা নিজেদের দুর্বলতা প্রকাশ করতে লজ্জিত বোধ করেন। ফলে সম্পর্ক ভাঙে, বন্ধুত্ব ভেঙে যায়, অথচ তারা কিছু বলে উঠতে পারেন না। 
সমীক্ষা যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কেন্দ্রীভূত, তবু এর প্রতিধ্বনি শোনা যায় বিশ্বজুড়েই। প্রেম, সহানুভূতি, বা সঙ্গ, সবই যদি অবজ্ঞার বর্মে ঢাকা থাকে, তবে আজকের পুরুষ সেটা মেনে নিতে নারাজ। বরং তাঁরা বলবেন, ‘নিঃসঙ্গ থাকাই ভালো। অন্তত সম্মান নিয়ে বাঁচব।’

সময় এসেছে এই ভাবনাটাকে আরেকটু গভীরভাবে ভাবার। পুরুষেরও মন আছে, তাঁদেরও সম্মান দরকার, ভালবাসাও প্রয়োজন। এই সমীকরণে ভারসাম্য খুঁজে পাওয়াই আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ।