আজকাল ওয়েবডেস্ক: এই যুগে যেখানে একাকীত্ব একটি বৈশ্বিক উদ্বেগ হিসেবে উঠে আসছে, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বেনামী পরিবার যাবতীয় পারিবারিক ও সহচরিতার সংজ্ঞাকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করছে। এই অনন্য গৃহস্থালির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ট্রেল নামক এক ব্যক্তি। তিনি তাঁর দুই স্ত্রী এবং এক প্রেমিকাকে নিয়ে এক ছাদের নিচে বসবাস করছেন। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে সন্তানদের লালন-পালন করছেন। এই কারণেই সম্প্রতি এই পরিবারটিকে সমাজের তীক্ষ্ণ সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, এই পরিবারে রয়েছেন ট্রেল, তাঁর দুই স্ত্রী এমিলি ও অ্যালি, এবং নতুন সদস্য কাইলি। তিনি কিছুদিন আগে প্রেমিকা হিসেবে তাঁদের পরিবারে যুক্ত হয়েছেন। চারজন মিলে কেবল একটি বাড়িতে একসঙ্গে থাকেন না, বরং একসঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছেন দৈনন্দিন দায়িত্ব এবং সন্তানদের যত্নের কাজও। এই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে রয়েছে চার বছর বয়সী রেইন, দুই মাস বয়সী শিকাগো এবং ট্রেলের ১৬ বছর বয়সী মেয়ে লিলি। সে ছোটবেলা থেকেই এই অপ্রচলিত পারিবারিক পরিবেশে বেড়ে উঠছে।

তাঁদের এই ব্যতিক্রমধর্মী জীবনধারা এবং পারিবারিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে তাঁরা সম্প্রতি কথা বলেছেন ইউটিউব চ্যানেল 'ট্রুলি' (“Truly”) -তে। সেখানে তাঁরা জানিয়েছেন, তাঁরা চারজনই একটি সম্পর্কের অংশ, কেউই আলাদা ঘরে ঘুমান না। বরং তাঁরা সবাই একসঙ্গে একটি বিছানায় ঘুমান, যা তাঁদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা এবং একতা বজায় রাখে।

এমিলি বলেন, 'আমরা সবাই বিছানায় সাঁড়াশির মতো একসঙ্গে ঘুমাই।' তিনি ব্যাখ্যা করেন, পরিবারের সদস্যরা পালাক্রমে দায়িত্ব ভাগ করে নেন। কেউ ক্লান্ত হলে অন্য কেউ তাঁর জায়গা নেন, বিশেষ করে যখন শিশুদের দেখভালের কথা আসে। এমিলি বলেন, 'আমি বুঝি না একা মায়েরা কীভাবে এটা সামলান। যখন আমরা শুধু দু’জন ছিলাম, তখনও এটা চরম কষ্টসাধ্য মনে হত।'

আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশের পর নেপাল, গণ-অভ্যুত্থান না কাঠমান্ডুতে কাঠপুতুল?

অ্যালিও জানান, কাইলির আসায় তাঁদের কাজ অনেকটা সহজ হয়ে গিয়েছে। কাইলিকে তিনি 'একটি বাড়তি সহায়কের মতো' উল্লেখ করেন। যদিও কাইলি আগে কখনও পলিঅ্যামরাস সম্পর্কে ছিলেন না, তিনি বলেন, সবসময়ই নতুন অভিজ্ঞতা গ্রহণে তিনি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। শুরুতে কিছু দ্বিধা থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি মানিয়ে নেন। ট্রেল বলেন, কাইলিকে এই সম্পর্কের অংশ করার সিদ্ধান্ত পূর্বপরিকল্পিত ছিল না। 'আমরা কোনও নতুন সদস্য খুঁজছিলাম না। কিন্তু যখন কাইলির সঙ্গে দেখা হলো, তাঁর শক্তি বা ব্যক্তিত্ব এতই গভীর ছিল যে প্রেমে পড়তে বাধ্য হই,' তিনি বলেন।

তবে এই পরিবর্তনে সবাই একসঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারেননি। ট্রেলের মেয়ে লিলি শুরুতে কাইলিকে মেনে নিতে কিছুটা সময় নিলেও, এখন তাঁদের সম্পর্ক স্বাভাবিক ও মধুর হয়েছে। ট্রেল বলেন, বাইরের সমাজ সাধারণত এই ধরনের সম্পর্ক শিশুদের জন্য অনুপযুক্ত মনে করে। কিন্তু তাঁর মতে, বাস্তবে বিষয়টি একেবারেই উল্টো। 'শিশুরা শুধু এটুকুই বোঝে যে, তারা বাড়িতে আরও বেশি ভালোবাসা পাচ্ছে,' তিনি বলেন।

তাঁদের এই খোলামেলা জীবনযাত্রা এবং সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় উপস্থিতি ইতিমধ্যেই ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ট্রেলকে ‘দালাল’ বলে অভিহিত করেছেন এবং এই পারিবারিক রীতি-কে অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন। তবে এই সমালোচনা নিয়ে তাঁরা খুব একটা ভাবেন না বলেই জানিয়েছেন। ট্রেল বলেন, 'আমরা যদি একে অপরকে ভালোবাসি এবং একটি পরিবার গঠন করি, তাহলে অন্যদের এত মাথাব্যথার কী আছে? এটা কেবল অজ্ঞতার পরিচয়।' এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, এই পথ বেছে নেওয়ার ফলে অনেক বন্ধুকে হারাতে হয়েছে, কিন্তু তাতে তাঁর কোনও আক্ষেপ নেই।

এমিলি এবং অ্যালি বলেন, তাঁদের পরিবার কোনও সামাজিক প্রথা ভাঙার উদ্দেশে তৈরী হয়নি। বরং এটি গঠিত হয়েছে পারস্পরিক সম্মান, ভালোবাসা এবং সহযোগিতার ভিত্তিতে। অ্যালি বলেন, 'বলা হয়, একটি শিশুকে ঠিকভাবে বড় করতে একটি বড় পরিবার দরকার হয়। আমাদের পরিবার তারই একটি বাস্তব উদাহরণ।'