বিভাস ভট্টাচার্য: মস্তিষ্কের ভিতরে তৈরি হওয়া একটি বিনাইন বা নন্ ক্যান্সারাস টিউমারের চিকিৎসাতেও রেডিও সার্জারির সুফল মিলছে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে প্রথম এধরনের একটি টিউমার এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা করলেন সেখানকার চিকিৎসকরা। বিনা অস্ত্রোপচারে রেডিওথেরাপি প্রয়োগের মাধ্যমে তাঁরা টিউমারটি সম্পূর্ণ সরিয়ে দিয়েছেন। রোগী আপাতত সুস্থ এবং ভবিষ্যতে এই টিউমার ফিরে আসার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ বলেই জানিয়েছেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের রেডিয়েশন অঙ্কোলজি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত প্রধান অধ্যাপক ডাঃ সুব্রত চ্যাটার্জি। চিকিৎসার ভাষায় এই পদ্ধতি হল 'স্টিরিওট্যাক্টিক রেডিও সার্জারি'। বিষয়টি যথেষ্টই জটিল এবং যেখানে রেডিয়েশন অনেক বেশি মাত্রায় প্রয়োগ করা হয় বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
এবিষয়ে বলতে গিয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের অধ্যক্ষ ডাঃ ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, 'আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির যে বিভিন্ন প্রয়োগ এবং সেখানে ক্যান্সার ছাড়া অন্য ক্ষেত্রেও যে রেডিও থেরাপি প্রয়োগের মাধ্যমে নিরাময় করা সম্ভব সেটাই করে দেখালেন এই হাসপাতালের রেডিয়েশন অঙ্কোলজি বিভাগের চিকিৎসকরা। এর সঙ্গে আরও একটি বড় বিষয় হল সমস্ত আধুনিক চিকিৎসা যাতে এই হাসপাতালে পাওয়া যায় তার জন্য সবদিক দিয়েই সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে।'
গোটা এই বিষয়টি পরিচালনা করেছেন রেডিয়েশন অঙ্কোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডাঃ সুব্রত চ্যাটার্জি। তাঁর কথায়, এর আগে ক্যান্সারাস টিউমারের ক্ষেত্রে রেডিওথেরাপি প্রয়োগ হলেও বিনাইন বা নন্ ক্যান্সারাস টিউমারে এটাই এই হাসপাতালে প্রথম প্রয়োগ। এটা কারুর একার সাফল্য নয়। সম্পূর্ণ বিষয়টি হল একটি দলগত সাফল্য। কারণ, এই ধরনের চিকিৎসা খুবই সুক্ষ্ম পদ্ধতি। যেখানে একটু এদিক ওদিক হলেই রোগীর সমস্যা তৈরি হতে পারে।' বিভাগীয় প্রধান জানিয়েছেন তিনি ছাড়াও এই 'অপারেশন'-এ অংশগ্রহণ করেন ডা: সপ্তর্ষি ব্যানার্জি, ফিজিসিস্ট জয়ব্রত বিশ্বাস প্রমুখ।
চলতি সপ্তাহের প্রথমদিকেই এই চিকিৎসা করা হয়। যদিও তার আগে রোগীর মাথায় স্ক্যান করে টিউমারটি ঠিক কোন জায়গায় আছে সেটি দেখে নেন চিকিৎসকরা। সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা করা হয়। বছর চল্লিশের এই রোগী একজন মহিলা। ডাঃ সুব্রত চ্যাটার্জি জানান, এর আগে ওই রোগীর মাথায় একটি টিউমার হয়েছিল। যেটা নিউরো সার্জারির চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচার করে বের করে নিয়ে আসেন। কিন্তু দেখা যায় ফের টিউমারটি হয়েছে। কিন্তু এবার আর ওই জায়গায় অস্ত্রোপচার করা সম্ভব ছিল না। এরপরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় রেডিও থেরাপির মাধ্যমে টিউমারটি বিনষ্ট করা হবে।
বিভাগীয় প্রধান বলেন, 'এরপর রোগীর মাথায় ওই অংশে রেডিও থেরাপি প্রয়োগ করা হয়। এক্ষেত্রে একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল থেরাপি প্রয়োগের সময় মাথা যেন এতটুকু না নড়ে যায়। তাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে। সেজন্য মাথাটা একটি বিশেষ 'ছাঁচ'- এর মধ্যে রাখা হয়। যদি এই থেরাপি মাথায় সুস্থ কোনও অংশে গিয়ে পড়ে তবে তবে সেই অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়। কিন্তু সবদিক দেখেশুনে এই চিকিৎসার কাজ সুসম্পন্ন হয়েছে। যেখানে রোগীকে আলাদা করে অজ্ঞান করার প্রয়োজন পড়েনি। রোগীর 'ফলো আপ ট্রিটমেন্ট' হবে এবং আমাদের ধারণা ভবিষ্যতে তাঁর এই টিউমার আর ফিরে আসবে না। আরও একটি বড় বিষয় হল এই চিকিৎসা যদি কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে করা হয় তবে তার খরচ প্রায় ৩ লক্ষ টাকা। কিন্তু সরকারি হাসপাতাল হওয়ায় রোগীর ১ টাকাও লাগেনি।'
