আজকাল ওয়েবডেস্ক: অসমের জনপ্রিয় গায়ক জুবিন গর্গ প্রয়াত হয়েছেন। সিঙ্গাপুরে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন তিনি। বয়স হয়েছিল মাত্র ৫২ বছর। শুক্রবার সমুদ্র ভ্রমণে বেরিয়ে স্কুবা ডাইভিংয়ের সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও, শেষ রক্ষা হয়নি।
ঘটনার পরদিনই একটি ভিডিও প্রকাশ্যে আসে, যেখানে দেখা যায় জুবিনকে লাইফ জ্যাকেট পরে সমুদ্রের জলে নামতে। আনন্দে ভেসে বেড়ানোর সেই কয়েক মুহূর্তই হয়ে উঠল তাঁর জীবনের শেষ দৃশ্য। ওই ভিডিওতে গায়ককে দেখা যায় জ্যাকেট ঠিক করতে করতে সমুদ্রে ঝাঁপ দিচ্ছেন। কয়েক মিনিট পরই ঘটে অঘটন। জুবিনের শনিবার উত্তর-পূর্ব উৎসবে মঞ্চে গাইবার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই ভক্তদের কাঁদিয়ে চলে গেলেন তিনি। খবর ছড়িয়ে পড়তেই গোটা অসম এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নেমে আসে শোকের ছায়া।
?utm_source=ig_embed&utm_campaign=loading" target="_blank" rel="noopener">A post shared by India Today NE (@indiatodayne)
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক্স-এ শোকবার্তা জানিয়ে লিখেছেন, “জনপ্রিয় গায়ক জুবিন গর্গের আকস্মিক মৃত্যুতে আমি মর্মাহত। ভারতীয় সঙ্গীতে তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা নিজের শোকবার্তায় লিখেছেন, “আজ অসম তার এক প্রিয়তম সন্তানকে হারাল। ভাষাহীন হয়ে পড়েছি আমি। জুবিনকে বর্ণনা করার মতো কোনও শব্দ খুঁজে পাচ্ছি না। তিনি খুব তাড়াতাড়ি চলে গেলেন। এই বয়সে তাঁর চলে যাওয়া মেনে নেওয়া যায় না।”
বলিউড সঙ্গীত পরিচালক বিশাল দাদলানি গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন। তিনি এক্স-এ লিখেছেন, “এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না। মস্তিষ্ক অবশ হয়ে গেছে, হৃদয় ভেঙে টুকরো টুকরো। জুবিনের চলে যাওয়া এমন এক শূন্যতা তৈরি করল যা পূরণ হওয়ার নয়। তিনি ছিলেন প্রকৃত সুপারস্টার, মানুষের গায়ক, অসমের আসল প্রেমিক। ভক্তদের ভালোবাসা তাঁর জন্য সীমাহীন ছিল। আজ তাদের যন্ত্রণা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তাঁর পরিবার এবং অসংখ্য ভক্তকে আমার গভীর সমবেদনা। যদি কাউকে সত্যিই রক অ্যান্ড রোল বাঁচতে হয়, তবে তিনি ছিলেন সেই মানুষ।”
১৯৭২ সালের ১৮ নভেম্বর অসমের তেজপুরে জন্মগ্রহণ করেন জুবিন। কিশোর বয়স থেকেই গানকে সঙ্গী করেছিলেন। শুধু অসম নয়, গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতে সঙ্গীতপ্রেমীদের কাছে তিনি ছিলেন এক আবেগের নাম। ‘ইয়া আলি’ গানটির মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান তিনি। মহেশ ভাটের ছবি গ্যাংস্টার (২০০৬)-এর এই গান রাতারাতি তাঁকে সর্বভারতীয় তারকা বানিয়ে দেয়। এরপর থেকে বলিউড ও আঞ্চলিক সঙ্গীতে একের পর এক জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন তিনি।
অসম সংস্কৃতি ও সঙ্গীতচর্চায় তাঁর অবদান অপরিসীম। নাটক, চলচ্চিত্র, সুরসৃষ্টি—সর্বত্রই ছাপ রেখেছিলেন তিনি। শুধু গায়ক নয়, অভিনেতা, গীতিকার, পরিচালক হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। ভক্তরা তাঁকে আদর করে ডাকতেন ‘জনতার গায়ক’। জুবিনের হঠাৎ চলে যাওয়া উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গীত জগতের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। অসম সহ সমগ্র দেশ শোকাহত। ভক্তদের একটাই আক্ষেপ—এমন প্রতিভা এত তাড়াতাড়ি চলে গেলেন, যখন আরও অনেক কিছু দেওয়ার ছিল তাঁর।