আজকাল ওয়েবডেস্ক: পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘাত গোটা বিশ্বের নজর কেড়েছে। তবে বুধবার থেকে উভয় দেশের সীমান্তে যুদ্ধবিরতি জারি রয়েছে। কিন্তু, দীর্ঘ্য সংঘাতের অবসানের কোনও লক্ষণ নেই। ইসলামাবাদ এই সংঘর্ষের জন্য দায়ী করেছেন তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি)-র প্রধান নূর ওয়ালি মেহসুদকে।  

পাকিস্তানি নিরাপত্তা বিভাগের শীর্ষ কর্তাদের মতে, গত সপ্তাহে কাবুলে একটি বিমান হামলায় একটি সাঁজোয়া টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজারে আঘাত হানা হয়েছিল। সেই গাড়িতে ছিলেন নূর ওয়ালি মেহসুদ। কিন্তু হামলায় তিনি মারা যাননি বলে দাবি পাকিস্তানি নিরাপত্তা কর্মকর্তারাদের। ওই হামলার পর তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান-ও মেহসুদের কণ্ঠস্বর দাবি করে একটি অডিও বার্তা প্রকাশ করেছে বলে জানা যায়।

পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে কাবুলে ওই বিমান হামলার দায় স্বীকার করেনি। তবে, ২০২২ সালে আল কায়েদা নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সফল নিশানার পর গত সপ্তাহে ওই হামলাই ছিল কাবুলে প্রথম কোনও বিদেশি আক্রমণ।

ইসলামাবাদের অভিযোগ, আফগানিস্তানের মাটিতে পাক বিরোধী জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি)-কে মদত দেওয়া হচ্ছে। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আফগানিস্তানের তালিবান অন্তবর্তী সরকারের শীর্ষ কর্তারা। পরিবর্তে, ইসলামাবাদকে সতর্ক করেছে তালিবানরা। অভিযোগ, পাকিস্তান নাকি তাদের দেশে তালিবানদের প্রধান সশস্ত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামিক স্টেট গ্রুপের (আইএসআইএস) স্থানীয় শাখাকে আশ্রয় দিচ্ছে

মেহসুদের নেতৃত্বে টিটিপি-র উত্থান
তাঁর পূর্বসূরী মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হওয়ার পর ২০১৮ সালে মেহসুদ তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর নেতৃত্বভার গ্রহণ করেন। ততদিনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অভিযান মূলত তাদের পূর্বের শক্ত ঘাঁটি তছনছ হয়ে গিয়েছে। ফলে উপায় না দেখে টিটিপি তখন আফগানিস্তানে চলে গিয়েছে।

বিশ্লেষকদের দাবি, নূর ওয়ালি মেহসুদের নেতৃত্বেই তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) পুনরুজ্জীবিত হয়। কৌশল পরিবর্তন করে সংগঠনটি। মেহসুদের কূটনৈতিক দক্ষতায় যুদ্ধরত জঙ্গি দলগুলিকে একত্রিত করা হয়। একজন ধর্মীয় পণ্ডিত হিসেবে মেহসুদ অস্ত্রের পাশাপাশি একটি আদর্শ কেন্দ্রিক যুদ্ধ শুরু করেন।

ইসলামাবাদ বলেছে যে, ২০২১ সালে তালিবানরা আফগানিস্তান দখন করে। যা  টিটিপি-কে নতুন করে জঙ্গি কার্যকলাপে উজ্জিবীত করে। টিটিপি-র হাতে আসে বিপুল অস্ত্র। যা দিয়ে টিটিপি নূর ওয়ালি মেহসুদের নেতৃত্বে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে হামলা চালাতে শুরু করে। বেশিরভাগ হামলাই হতে থাকে  পাক-আফগান সীমান্তবর্তী উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে।

অতীতে, টিটিপি মসজিদ এবং বাজারের মতো অসামরিক জায়গায় হামলা চালিয়েছিল, যার মধ্যে ২০১৪ সালে স্কুলে হামলায় ১৩০ জনেরও বেশি শিশু নিহত হয়েছিল। তবে এই নধরণের হামলায় মেহসুদ উদ্বিগ্ন ছিলেন। কারণ তিনি বুঝেছিলেন যে, এই হিংসা তাঁর সংগঠন পাকিস্তানে জনসাধারণের কাছে বিদ্বেষের কারণ উঠছিল। এরপর টিটিপি শুধু পাক সামরিক বাহিনী এবং পুলিশকে লক্ষ্য করেই হামলা চালাতে থাকে। 

চলতি বছরের শুরুতে প্রকাশিত এক বিরল ভিডিও ভাষণে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি)-র প্রধান নূর ওয়ালি মেহসুদকে বলতে শোনা যায়, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী 'ইসলাম-বিরোধী'। তিনি দাবি করেন, "গত ৭৮ বছর ধরে জনগণকে বন্দি করে রেখেছে।" যদিও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর পাল্টা দাবি, টিটিপি ইসলামকে বিকৃত করেছে এবং ভারত এই জঙ্গি সংগঠনকে সমর্থন করেমদত দিয়ে চলেছে। নয়াদিল্লি অবশ্য ইসলামাবাদের এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। 

উপজাতীয় বিদ্রোহ
মেহসুদ ধর্মের সঙ্গে জাতীয়তাবাদকে মিশিয়ে দিয়েছেন। তিনি কমপক্ষে তিনটি বইয়ের লেখক, যার মধ্যে ৭০০ পৃষ্ঠার একটি গ্রন্থ রয়েছে যা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামের জন্য এই গোষ্ঠীর বিদ্রোহের তথ্য তুলে ধরেছেন। 

এই অঞ্চলের জঙ্গিবাদের কার্যকলাপের একজন স্বাধীন বিশেষজ্ঞ আব্দুল সাঈদ বলেনদের মতে, আফগান তালিবানরা মূলত পশতুন।  মেহসুদ তাই উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানে বসবাসকারী পশতুন জাতিগত গোষ্ঠীর পক্ষে কথা বলে থাকেন। সাঈদ বলেন, "মেহসুদ পশতুন উপজাতিদের অধিকারের জন্য লড়াই করেছেন। এই নেতার লক্ষ্য হল পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমে তালিবানের মতো এক ইসলামিক শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলা।" তবে বিশ্লেষকদের এও দাবি যে দাবি, পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল বা দেশের অন্য কোথাও টিটিপির জনসমর্থন অতি নগণ্য।

সাম্প্রতিক দিনগুলিতে উপজাতীয় মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় জঙ্গিরা আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী পাকিস্তানের অংশে তাদের ব্র্যান্ডের ইসলামী আইন প্রয়োগ, সেই অঞ্চল থেকে সেনাবাহিনীর প্রস্থান এবং সেখানে তাদের প্রত্যাবর্তনের দাবি জানিয়েছে। তবে পাক কর্তৃপক্ষ জঙ্গিদের সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।

আরও পড়ুন-  বেনজির, বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রথম ১০ পাসপোর্ট তালিকা থেকে বাদ আমেরিকা! কী অবস্থা ভারতের?