আজকাল ওয়েবডেস্ক: মৃত্যুর পর কী ঘটে এই প্রশ্নটি মানবসভ্যতাকে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। ধর্ম বিশ্বাসের নানা ব্যাখ্যা আছে, দার্শনিকরা যুক্তিতর্কে ব্যস্ত, আর বই–ছবি–ডকুমেন্টারিতে বারবার উঠে আসে এই রহস্য। কিন্তু বৈজ্ঞানিকভাবে মৃত্যুর পর জীবনের কোনো চূড়ান্ত প্রমাণ আজও নেই। স্বর্গ–নরক তাই রয়ে গেছে বিশ্বাসের জগতে। এই আবহেই ফের আলোচনায় উঠে এল এক চাঞ্চল্যকর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা।
যুক্তরাজ্যের ৬৮ বছর বয়সি শার্লট হোমস দাবি করেছেন, তিনি ১১ মিনিটের জন্য ক্লিনিক্যালি মৃত ছিলেন। সেই সময়ে তিনি নাকি স্বর্গ ও নরক-দু’টিরই অভিজ্ঞতা লাভ করেন। তাঁর এই বর্ণনা নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছে চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে।
ঘটনাটি ঘটে একেবারে সাধারণ একটি দিনে। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন হোমস। সেখানেই ধরা পড়ে তাঁর রক্তচাপ বিপজ্জনক মাত্রায় বেড়ে গেছে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে চিকিৎসকেরা তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করেন এবং জানান, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না এলে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। চিকিৎসা চলাকালীন তাঁর স্বামীও পাশে ছিলেন।
হোমসের দাবি, ঠিক সেই সময়েই হঠাৎ সবকিছু নিস্তব্ধ হয়ে যায়। পরে চিকিৎসকেরা তাঁকে জানান, তিনি সম্পূর্ণ অচেতন হয়ে পড়েছিলেন এবং তাঁর হৃদ্স্পন্দন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পরবর্তী ১১ মিনিট ধরে চিকিৎসক দল তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা চালান। কিন্তু হোমসের বক্তব্য অনুযায়ী, তিনি তখনও ‘অচেতন’ ছিলেন না।
পরবর্তী সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, নিজের শরীরের ওপর চিকিৎসকদের ব্যস্ততা তিনি দেখতে পাচ্ছিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই চারপাশের পরিবেশ বদলে যেতে শুরু করে। বাতাসে ভেসে আসে এক অচেনা কিন্তু মনোরম ফুলের সুগন্ধ। কানে আসে সুরেলা সংগীত। চোখ মেলতেই তিনি নিজেকে এমন এক জায়গায় দেখতে পান, যাকে তিনি ‘স্বর্গ’ বলেই বিশ্বাস করেন।
তাঁর কথায়, সেখানে কোনো ভয় ছিল না, ছিল গভীর শান্তি ও প্রশান্তি। তিনি তাঁর মৃত বাবা-মা সহ পরিবারের অন্য সদস্যদের দেখেন, যাঁরা সবাই সুস্থ, আনন্দিত ও পরিপূর্ণ রূপে উপস্থিত ছিলেন। এমনকি বহু বছর আগে হারানো এক সন্তানের সঙ্গেও তাঁর দেখা হয় বলে দাবি করেন তিনি।
এরপর, তাঁর দাবি অনুযায়ী, তাঁকে এমন এক জায়গা দেখানো হয়, যাকে তিনি নরক বলে মনে করেন। এই অংশ নিয়ে তিনি খুব বেশি কথা বলতে চাননি। শুধু বলেছেন, সেখানে ছিল তীব্র যন্ত্রণা ও অসহনীয় কষ্ট, যা তাঁর জীবনের কোনও অভিজ্ঞতার সঙ্গে তুলনীয় নয়।
হঠাৎ করেই এই অভিজ্ঞতার ইতি ঘটে। হোমস জানান, তিনি তাঁর বাবার কণ্ঠ শুনতে পান, যিনি তাঁকে বলেন, “এখনো তোমার সময় আসেনি, তোমাকে ফিরে যেতে হবে।” এর পরই তিনি হাসপাতালে চোখ মেলেন।
চেতনা ফিরে পাওয়ার পর চিকিৎসকেরা তাঁকে জানান, তাঁর হৃদ্যন্ত্র ১১ মিনিটের জন্য সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল এবং সেই সময় তিনি ক্লিনিক্যালি মৃত ছিলেন। জ্ঞান ফিরতেই তিনি তাঁর স্বামীকে পুরো অভিজ্ঞতার কথা বলেন এবং জোর দিয়ে জানান, এটি কোনও স্বপ্ন নয়, বাস্তবের চেয়েও বাস্তব মনে হয়েছে।
এই ঘটনার পর থেকে হোমস বলে আসছেন, তাঁর অভিজ্ঞতাকে শব্দে পুরোপুরি প্রকাশ করা অসম্ভব। অন্যদিকে, সংশয়বাদীদের মতে, এমন ‘নিয়ার-ডেথ এক্সপেরিয়েন্স’ বা মৃত্যুপথযাত্রী অভিজ্ঞতা মস্তিষ্কের জটিল স্নায়বিক প্রতিক্রিয়ার ফল হতে পারে, বিশেষ করে চরম শারীরিক আঘাত বা অক্সিজেনের অভাবে। তবুও, শার্লট হোমসের এই দাবি বিশ্বজুড়ে কৌতূহল ও আলোচনার নতুন ঢেউ তুলেছে, মৃত্যুর ওপারে সত্যিই কি কিছু আছে?
