আজকাল ওয়েবডেস্ক: এটা সবারই জানা বড় আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত পৃথিবীকে ঠান্ডা করার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু হয়তো আপনি এটা ভাবেননি: এগুলো বন্যাকেও প্রভাবিত করতে পারে। শুধু স্থানীয়ভাবে নয়, বরং বৈশ্বিক স্তরেও।


নতুন গবেষণায় জানা গেছে, যখন কোনও আগ্নেয়গিরি অগ্ন্যুৎপাত হয় এবং গ্যাসকে বায়ুমণ্ডলের উচ্চস্তরে পাঠায়, তখন তা বিশ্বের বৃষ্টিপাতের ধরণ পাল্টে দিতে পারে। এর ফলে বিশাল অঞ্চল হয় ভিজে যায় নয়তো শুকিয়ে পড়ে। আর আগ্নেয়গিরিটির অবস্থান বিশেষ করে নিরক্ষরেখার তুলনায় এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।


এটি লাভার স্রোত বা আকাশ ঢেকে ফেলা ছাই নয়, বরং কয়েক মাইল ওপরে, বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে কী ঘটে তা নিয়ে। সেখানে অদৃশ্য গ্যাস অণুগুলো পৃথিবী কীভাবে তাপ ও আর্দ্রতা আদানপ্রদান করে তা বদলে দেয়। বড় আগ্নেয়গিরি সাধারণত বিপুল পরিমাণ সালফার-ডাই-অক্সাইড গ্যাস স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে ছেড়ে দেয়। সেখানে গ্যাসটি ক্ষুদ্র কণায় ঘনীভূত হয়ে এরোসল তৈরি করে।

আরও পড়ুন: শেয়ার হোল্ডারদের জন্য খুশির খবর দিলেন মুকেশ আম্বানি, নতুন বিপ্লবের পথে জিও


এই এরোসল সূর্যালোককে প্রতিফলিত করে এবং তাপ আটকে রাখে। ফলে পৃথিবীর পৃষ্ঠ ঠান্ডা হয় আর ওপরের বায়ুমণ্ডল গরম হয়। এই তাপমাত্রার পার্থক্য বিশ্বজুড়ে বাতাসের প্রবাহের ধরণ বদলে দেয়। এই গোটা প্রক্রিয়ার মূল ভূমিকায় থাকে একটি অঞ্চল, যাকে বলা হয় ইন্টার-ট্রপিকাল কনভারজেন্স জোন। এটি হল নিরক্ষরেখার একটু উত্তরে ঘিরে থাকা বজ্রঝড় ও মেঘের একটি বলয়, যেখানে উত্তর ও দক্ষিণ দিক থেকে আসা বাণিজ্যিক বাতাস মিলিত হয়। এই অঞ্চলই ভারী উষ্ণমণ্ডলীয় বৃষ্টির জন্য দায়ী এবং মৌসুম অনুযায়ী উত্তর বা দক্ষিণ দিকে সরে যায়।


আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত এই আবহাওয়া-বেল্টকে তার স্বাভাবিক অবস্থান থেকে সরিয়ে দিতে পারে। তখন যে অঞ্চল সাধারণত ভিজে থাকে তা শুকিয়ে যায়—আর যে অঞ্চল শুষ্ক থাকে, সেখানেই হঠাৎ বন্যা দেখা দেয়। এই বিষয়টি বোঝার জন্য প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা গত শতাব্দীর তিনটি বড় অগ্ন্যুৎপাতের প্রভাব খতিয়ে দেখেন: গুয়াতেমালার সান্তা মারিয়া (১৯০২), ইন্দোনেশিয়ার আগুং (১৯৬৩) এবং ফিলিপাইনের পিনাটুবো (১৯৯১)। প্রতিটি অগ্ন্যুৎপাত বন্যাকে ভিন্নভাবে প্রভাবিত করেছে।


সান্তা মারিয়ার অগ্ন্যুৎপাত (উত্তর গোলার্ধে) দক্ষিণ গোলার্ধের ট্রপিক অঞ্চলে ২৫% বেশি স্থানে বন্যার শীর্ষ প্রবাহ ঘটিয়েছিল এবং উত্তর গোলার্ধের ট্রপিকে ৩৫% স্থানে জলপ্রবাহ কমিয়ে দিয়েছিল।


আগুং (দক্ষিণ গোলার্ধে) প্রায় উল্টো ফলাফল দেয়: দক্ষিণ ট্রপিকে প্রায় ৫০% স্থানে বন্যা কমে যায়, অথচ উত্তর ট্রপিকে প্রায় ৪০% স্থানে বন্যা বেড়ে যায়।


দুটি অগ্ন্যুৎপাতের মিল ছিল—তাদের গ্যাস মেঘ প্রধানত নিজ নিজ গোলার্ধেই সীমাবদ্ধ ছিল। এতে অগ্ন্যুৎপাত থেকে দূরে সরে যায় এবং বৃষ্টিপাত ও বন্যাও সেভাবেই সরে যায়। তবে এই প্রভাব স্থায়ী হয় না। গবেষক গ্যাব্রিয়েল ভিলারিনি বলেন, “বৃষ্টিপাতের প্রভাব সাধারণত অগ্ন্যুৎপাতের পরের বছরে সবচেয়ে প্রবল হয় এবং কয়েক বছরের মধ্যে কমে আসে।”


পিনাটুবো ছিল ভিন্ন ধরনের। ১৯৯১ সালের এর অগ্ন্যুৎপাতে এরোসল প্রায় সমানভাবে দুই গোলার্ধেই ছড়িয়ে পড়েছিল। এক্ষেত্রে দুই গোলার্ধের ট্রপিক অঞ্চলেই বন্যা কমে যায়। দক্ষিণ ট্রপিকে ২০% স্থানে এবং উত্তর ট্রপিকে ৩৫% স্থানে। কিন্তু খুব শুষ্ক এলাকায় পরিস্থিতি উল্টো হয়েছিল। প্রায় ৩৫% মরু অঞ্চলে বন্যার শীর্ষ প্রবাহ বেড়ে গিয়েছিল। গবেষকরা বলছেন, এটি সম্ভবত মনসুন-ডেজার্ট কাপলিং এর সঙ্গে যুক্ত।


গবেষক হানবিন কিম বলেন, “এশিয়ার মনসুন অঞ্চলে বাতাস নিচের দিকে নামে এবং আশেপাশের শুষ্ক অঞ্চলে ওপরের দিকে ওঠে। এই ওঠা বাতাস আর্দ্রতাকে উপরে টেনে নেয়, ফলে মরু এলাকায় বৃষ্টিপাত বেড়ে যায়।” এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শুধু বিজ্ঞান নয় বরং মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে সম্পর্কিত। এই ধরনের বৃষ্টিপাতের পরিবর্তন এমন অঞ্চলে আকস্মিক বন্যা ঘটাতে পারে যেখানে কেউ তা কল্পনাও করেনি। তাই পরিকল্পনার জন্য এটি অত্যন্ত জরুরি, বিশেষ করে যখন কিছু বিজ্ঞানী কৃত্রিমভাবে পৃথিবীকে ঠান্ডা করার পদ্ধতি নিয়ে ভাবছেন, যা আগ্নেয়গিরির প্রভাবের অনুকরণ করবে।


গবেষকদের মতে, তাদের ফলাফল ইঙ্গিত দিচ্ছে যে জলবায়ুর পরিবর্তন প্রাকৃতিক হোক বা মানবসৃষ্ট বহুবিধ প্রভাব ফেলতে পারে। শুধু উষ্ণতা বা শীতলতা নয়, পৃথিবীতে কীভাবে জল প্রবাহিত হয় তাও এর দ্বারা বদলে যায়।