আজকাল ওয়েবডেস্ক: সারা পৃথিবীতে প্রতি ২০০০ জনের মধ্যে অন্তত তিন জন কানের সমস্যা নিয়ে জন্মান। যা পরবর্তীতে আর ঠিক হয় না। আজীবন এই রোগ বয়ে যেতে হয়। তিনটি জেনেটিক মিউটেশনের ফলে সৃষ্ট জন্মগত শ্রবণ সমস্যার সমাধান করতে পারে ইরেক্টাইল ডিসফাংশন ড্রাগ সিলডেনাফিল দাবি বিজ্ঞানীদের। যা ভায়াগ্রা নামে ব্যাপকভাবে বিক্রি হয়। এটি একটি যৌন উত্তজনাবর্ধক ওষুধ। বিজ্ঞানীরা এক বিশেষ ধরণের বধিরতা এবং জন্মগত বধিরতা সারাতে ভায়াগ্রা ব্যবহারে কথা চিন্তাভাবনা শুরু করছেন।
‘জার্নাল অফ ক্লিনিকাল ইনভেস্টিগেশন’-এ সম্প্রতি বধিরতা সংক্রান্ত গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় গঠনমূলক জিন সিকোয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে গবেষকরা তিনটি জেনেটিক মিউটেশন আবিষ্কার করেছেন যেগুলি কার্বক্সিপেপটিডেস ডি(সিপিডি) নামে এক এনজাইম কোডিং জিনে ক্ষতি করে। এই মিউটেশনযুক্ত জিন শ্রবণক্ষমতা ক্ষীণ করে দেয়। এই ধরনের বধিরতা ‘sensorineural hearing loss’ হিসেবে পরিচিত।
সিপিডি জিন যদি ঠিকমতো কাজ না করে, তাহলে কানে থাকা সংবেদনশীল হেয়ার সেলগুলোর জন্য জরুরি একটি অ্যামিনো অ্যাসিড আর্জিনিন তৈরি হওয়া ব্যাহত হয়। এর ফলে নাইট্রিক অক্সাইড (নিয়ন্ত্রণকারী সঙ্কেতকারী হিসেবে অপরিহার্য) এবং সাইক্লিক গুয়ানোসিন মনোফসফেট (cGMP) নামক মলিকিউলের স্তর কমে যায়, যা শেষ পর্যন্ত সেল স্ট্রেস বাড়ায় এবং সেল মৃত্যু ঘটায়।
মানবত্বকের টিস্যু এবং ইঁদুরের কানের ভিতরের যে অংশে নিষ্ক্রিয় সিপিডি জিন থাকে, সেই ককলিয়া অংশের কোষের বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা দেখেন, সাপ্লিমেন্ট দেওয়ার ফলে সেল মৃত্যু কমেছে এবং নাইট্রিক অক্সাইডের স্তরও ফিরে এসেছে।
এছাড়া, ভায়াগ্রা ব্যবহার করে সাইক্লিক গুয়ানোসিন মনোফসফেট সিগন্যালিং পথকে উন্নত করা সম্ভব হয়েছে। ভায়াগ্রা মূলত PDE5 ইনহিবিটার — এটি সাইক্লিক গুয়ানোসিন মনোফসফেটের ভাঙনকে কমিয়ে দেয়। ফলে সাইক্লিক গুয়ানোসিন মনোফসফেটের মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং সেই মাধ্যমে সেলগুলোর প্রাণবন্ততা বজায় রাখার সুযোগ বাড়ে।
এই পরীক্ষায় ফলাফল আশাব্যঞ্জক ছিল। সংবেদনশীল কানের শ্রবণ কোষগুলির নিরাপত্তা বাড়ানো গিয়েছিল এবং ক্ষতির প্রক্রিয়া কিছুটা কমানো গিয়েছিল।
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞানী রং গ্রেস ঝাই বলেন, “এই গবেষণাটা খুবই চমকপ্রদ। কারণ, আমরা এমন একটা নতুন জিন মিউটেশনের খোঁজ পেয়েছি, যা বধিরতার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, আমরা একটা উপায় পেয়েছি যার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।”
মাছির ক্ষেত্রেও এই ধরনের পরীক্ষা করে দেখেছেন বিজ্ঞানীরা। প্রায় একই ফল মিলেছে। ঝাই বলেন, ‘‘আমরা দেখলাম, বিশেষ করে চুলের কোষে আর্জিনিনের মাত্রা ঠিক রাখে সিপিডি। তার ফলে নাইট্রিক অক্সাইড তৈরি হয় এবং দ্রুত সঙ্কেত পরিবাহিত হয়। সেই কারণেই সিপিডি হ্রাসে চুলের কোষ বেশি সংবেদনশীল। তবে স্নায়ুতন্ত্রের অন্য কোষের ক্ষেত্রেও সে কথা প্রযোজ্য।’’
তবে, গবেষকরা সতর্ক করেছেন, এই গবেষণা এখনও মানবত্বকের টিস্যু ও প্রাণীতেই সীমাবদ্ধ। মানুষের উপর পরীক্ষা এখনও বাকি আছে। তারপরে হবে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল। গবেষণা সম্প্রসারণ করার জন্য ভবিষ্যতে আরও বড় ডেটাবেস এবং রোগীদের ওপর কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
