আজকাল ওয়েবডেস্ক: সোমবার বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালীন সরকার ইনকেলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচারের ঘোষণা করেছে। এই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগেই ইনকিলাব মঞ্চের নেতারা হুমকি দিয়েছিলেন যে, নির্বাচনের আগে হাদির মৃত্যুর ন্যায়বিচার নিশ্চিত না হলে তারা দেশের পরবর্তী নির্বাচন বানচাল করে দেবেন।
শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক সংবাদিক বৈঠকে ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আবদুল্লা আল জাবের সতর্ক করে বলেন, হাদি হত্যার বিচার সম্পন্ন না হলে কোনও নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। তিনি ঘোষণা করেন, এই দাবি উপেক্ষা করা হলে আন্দোলনকারীরা রাজপথে নামবে।
জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রধান সংগঠক এবং ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকার পল্টন এলাকার বক্স কালভার্ট রোডে অজ্ঞাতপরিচয় মুখোশধারী হামলাকারীরা গুলি করে। তাঁকে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হলেও শেষরক্ষা হয়নি। ১৮ ডিসেম্বর ওসনাম হাদির মৃত্যু হয়।
ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে ইউনূসকে হুমকি
'প্রথম আলো' ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আবদুল্লা আল জাবেরকে উদ্ধৃত করে লিখেছে, "ন্যায়বিচার ছাড়া কোনও নির্বাচন নয়।" তিনি আরও বলেন যে,তাঁদের মঞ্চ দিন শেষে শাহবাগ থেকে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার পর্যন্ত একটি প্রতিবাদ মিছিলের পর তাদের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবে। জাব বলেন, এই কর্মসূচিই নির্ধারণ করবে যে ইনকিলাব মঞ্চ অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনকে সমর্থন অব্যাহত রাখবে, নাকি তার বিরুদ্ধে একটি বৃহত্তর আন্দোলন শুরু করবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূসের কথা উল্লেখ করে জাবের বলেন, বাংলাদেশের জনগণ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্ব তাঁকে অর্পণ করেছে। হাদির শেষকৃত্যে ইউনূস সহানুভূতি প্রকাশ করলেও, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে কী পদক্ষেপ করবে সে বিষয়ে তিনি কিছু বলতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে জাবের মন্তব্য করেন।
জাবের বলেন, "বাংলাদেশে নির্বাচন হবে। তারপরই মহম্মদ ইউনূস চলে যাবেন। তবে যাওয়ার আগে, তাঁকে অবশ্যই জনগণকে বলতে হবে কে তাঁকে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণে বাধা দিচ্ছে। হাদি হত্যার ন্যায়বিচার চাই। তারপর নির্বাচন হবে। তার আগে কোনও নির্বাচন নয়।"
"এফবিআই, স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডকে যুক্ত করুন"
ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আবদুল্লা আল জাব, বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে দু'টি মূল দাবি পেশ করেছেন। প্রথমটি- হাদি হত্যার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের জন্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন। দ্বিতীয়ত- প্রয়োজনে একটি বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত নিশ্চিত করার জন্য এফবিআই বা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে যুক্ত করা।
সরকারের উদ্দেশে জাব দাবি করেন, হাদির হত্যাকারীরা বাংলাদেশে থাকলে তাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে এবং তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে তাদের প্রত্যর্পণ করতে হবে। তিনি আরও ঘোষণা করেন যে, ইনকিলাব মঞ্চ একটি অনির্দিষ্টকালের জন্য রাজপথে অবস্থান ধর্মঘট শুরু করবে।
কয়েক ঘণ্টা পর, অন্তবর্তীকালীন সরকার অচলাবস্থা নিরসনের উদ্যোগ
বাংলাদেশে সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের বিচার একটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে করা হবে, যা কার্যত মঞ্চের প্রধান দাবি পূরণ করেছে। 'প্রথম আলো'র প্রতিবেদন অনুসারে, দুপুর ১.৫০ মিনিটে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্টে নজরুল জানান, মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তর করা হবে এবং ২০০২ সালের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইন অনুযায়ী পুলিশ প্রতিবেদন জমা দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে বিচারকাজ সম্পন্ন করা হবে।
