আজকাল ওয়েবডেস্ক:  রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় রাতে ইউক্রেনের চালানো এক ব্যাপক ড্রোন হামলায় তীব্র চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। রুশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২৬ থেকে ২৭ অক্টোবর রাতভর এই হামলায় রুশ বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং প্রায় পাঁচ ঘণ্টার অভিযানে অন্তত ২৮টি ইউক্রেনীয় ড্রোন গুলি করে নামানো হয়। হামলার কারণে শহরের চারটি প্রধান বিমানবন্দরের মধ্যে দুটি দোমোদেদোভো ও ঝুকোভস্কি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়, জানিয়েছেন মস্কোর মেয়র সের্গেই সোব্যানিন।


রবিবার রাত ১০টার কিছু আগে শুরু হয়ে ভোর পর্যন্ত চলা এই ড্রোন হামলায় রাশিয়ার বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ‘রোসাভিয়াতসিয়া’ নিরাপত্তাজনিত কারণে বিমানবন্দর দুটি বন্ধ রাখে। রাশিয়া দাবি করেছে, ইউক্রেনের ড্রোনগুলি শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাকে টার্গেট করেছিল, তবে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর মেলেনি।


দুজন সাধারণ নাগরিক ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন বলে আঞ্চলিক গভর্নর আলেকজান্ডার বোগোমাজ জানিয়েছেন। পশ্চিমের বেলগোরোদ অঞ্চলে একই ধরনের হামলায় অন্তত ১৬ জন আহত হন, জানিয়েছেন গভর্নর ভিয়াচেস্লাভ গ্লাদকভ।


অন্যদিকে, ইউক্রেন জানিয়েছে, রাশিয়া রবিবার রাতে পাল্টা ১০১টি ড্রোন হামলা চালায়, যার মধ্যে ইউক্রেনীয় বিমানবাহিনী ৯০টি ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে। এসব হামলায় অন্তত তিনজন নিহত এবং সাতজন শিশুসহ ২৯ জন আহত হয়েছে।

আরও পড়ুন: মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের কালো মেঘ, গাজার ওপর হামলার নির্দেশ দিলেন নেতানিয়াহু


ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইহোর ক্লিমেঙ্কো বলেন, পাঁচটি ড্রোন চারটি স্থানে আঘাত হানে এবং তাদের টুকরো আরও পাঁচটি এলাকায় পড়ে। রাজধানী কিয়েভে মেয়র ভিতালি ক্লিচকো জানিয়েছেন, শহরের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় দেসনিয়ানস্কি জেলায় একটি নয়তলা ভবনে ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ পড়ে আগুন লাগে, যার ফলে একাধিক তলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আরেকটি নয়তলা ভবনেও ধ্বংসাবশেষ পড়ে, যেখানে উদ্ধারকারীরা পাঁচজনকে নিরাপদে উদ্ধার করেন।


ক্লিচকো আরও জানান, উত্তর কিয়েভের ওবোলনস্কি জেলায় একটি ১৬ তলা ভবনেও ড্রোনের টুকরো পড়ে একটি ফ্ল্যাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন দ্রুত উদ্ধার ও পুনর্গঠন কার্যক্রম শুরু করেছে।


এদিকে, এই হামলার মধ্যেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষণা করেছেন যে রাশিয়ার নতুন পারমাণবিকচালিত ক্রুজ মিসাইল “বুরেভেস্তনিক”-এর চূড়ান্ত পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ক্রেমলিন প্রকাশিত এক টেলিভিশন বৈঠকে পুতিন জানান, এই অস্ত্রটি “বিশ্বে অনন্য” এবং এর “অসীম পাল্লা” রয়েছে।


রাশিয়ার সামরিক প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ জানিয়েছেন, সর্বশেষ পরীক্ষায় ক্ষেপণাস্ত্রটি টানা ১৫ ঘণ্টা উড়ে প্রায় ১৪,০০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছে, যদিও এটি তার সর্বোচ্চ সীমা নয়।


পুতিন ২০১৮ সালেই প্রথম এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পের কথা প্রকাশ করেছিলেন। তাঁর দাবি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তে থাকা সামরিক হুমকির মোকাবিলায় রাশিয়া এই অস্ত্র তৈরি করছে, যা বিশ্বের যেকোনও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এড়িয়ে যেতে সক্ষম।