আজকাল ওয়েবডেস্ক: দুঘণ্টারও বেশি সময়ের গোপন বৈঠকের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে “অসাধারণ ও ঐতিহাসিক” বৈঠকের ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, এই বৈঠক মার্কিন-চীন সম্পর্কের ক্ষেত্রে “একটি দুর্দান্ত নতুন সূচনা” হিসেবে চিহ্নিত হবে। বৈঠকের পর ট্রাম্প ঘোষণা করেন, দুই দেশের মধ্যে ব্যাপক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সমঝোতা হয়েছে—যার মধ্যে রয়েছে শুল্ক ১০% কমানো, সোয়াবিন কেনা পুনরায় শুরু, এবং দীর্ঘদিনের বিতর্কিত রেয়ার আর্থ রপ্তানিতে বড় অগ্রগতি।
ট্রাম্প বলেন, “অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিছু বিষয় শিগগিরই প্রকাশ করা হবে।” সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি জানান, “সব কিছু আলোচনা হয়নি, তবে এটি ছিল এক অসাধারণ বৈঠক। প্রেসিডেন্ট শি ফেন্টানিল নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নিতে রাজি হয়েছেন, সোয়াবিন কেনা অবিলম্বে শুরু হবে, এবং চীনের উপর শুল্ক ৫৭% থেকে কমিয়ে ৪৭% করা হবে।”
রেয়ার আর্থ চুক্তিতে অগ্রগতি
বৈঠকের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ সাফল্য ছিল রেয়ার আর্থ খাতে অচলাবস্থা দূর হওয়া। এই গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থগুলো আধুনিক প্রযুক্তি, বৈদ্যুতিক গাড়ি ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জামে অপরিহার্য। ট্রাম্প বলেন, “রেয়ার আর্থ ইস্যুটি সম্পূর্ণ সমাধান হয়েছে। এখন আর কোনো বাধা থাকবে না, চীন থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি স্বাভাবিকভাবে চলবে।”
ট্রাম্পের সঙ্গে থাকা এক মার্কিন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন যে, বেইজিং এক বছরের জন্য রেয়ার আর্থ রপ্তানি অব্যাহত রাখতে সম্মত হয়েছে, যা পরবর্তীতে নবায়নের সম্ভাবনা রয়েছে।
আরও পড়ুন: ফেডের সুদহ্রাসের পর MCX-এ সোনার দামে তীব্র পতন, রুপোর দরও নিম্নমুখী
শুল্কে ছাড় ও নতুন কাঠামো
ট্রাম্প ঘোষণা করেন, চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক ১০% হ্রাস করা হবে—৫৭% থেকে কমিয়ে ৪৭%। তিনি এটিকে “সদিচ্ছার নিদর্শন” বলে অভিহিত করেন এবং জানান, “বৈঠকটি অত্যন্ত গঠনমূলক ছিল। আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছি।”
এই শুল্ক হ্রাস দুই দেশের মধ্যে গত কয়েক মাস ধরে চলা বাণিজ্যিক উত্তেজনা প্রশমনের ইঙ্গিত দেয়। ট্রাম্প বলেন, “চীন এখন থেকে অবিলম্বে মার্কিন সোয়াবিন কিনতে শুরু করবে। এটি আমাদের কৃষকদের জন্য বড় জয়।”
ফেন্টানিল ও কূটনৈতিক সহযোগিতা
ট্রাম্প জানান, প্রেসিডেন্ট শি ফেন্টানিল উৎপাদন ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ফেন্টানিল—একটি শক্তিশালী মাদক—মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ওপিওয়েড সংকটের জন্য দায়ী হিসেবে বিবেচিত। ট্রাম্প বলেন, “ফেন্টানিলের কারণে আমি চীনের ওপর ২০% শুল্ক আরোপ করেছিলাম, এখন তা কমিয়ে ১০% করা হয়েছে, যা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর।”
কৃষিপণ্যে বড় চুক্তি
বৈঠকের আরেকটি বাস্তব ফলাফল হল চীনের পক্ষ থেকে মার্কিন কৃষিপণ্য, বিশেষত সয়াবিন, পুনরায় আমদানি শুরু করার প্রতিশ্রুতি। ট্রাম্প বলেন, “আমরা বিশাল পরিমাণ সোয়াবিন এবং অন্যান্য কৃষিপণ্য রপ্তানির বিষয়ে একমত হয়েছি।” এটি মার্কিন কৃষকদের জন্য বড় স্বস্তির খবর, কারণ মে মাসে শুল্কবৃদ্ধির পর থেকে চীন আমদানি বন্ধ রেখেছিল।
উষ্ণ সম্পর্ক ও ভবিষ্যৎ সফর
বাসানে এই বৈঠকটি ছিল ট্রাম্প ও শির মধ্যে পুনর্নির্বাচনের পর প্রথম মুখোমুখি সাক্ষাৎ। বৈঠক শেষে ট্রাম্প বলেন, “শূন্য থেকে দশের স্কেলে এই বৈঠক ছিল বারো। সম্পর্কের দিক থেকে এটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ইতিবাচক।” তিনি শিকে “একজন মহান নেতা” বলে প্রশংসা করেন।
সম্পর্কের উষ্ণতা বজায় রাখতে ট্রাম্প ঘোষণা করেন, তিনি আগামী এপ্রিল মাসে চীন সফর করবেন, এবং শি জিনপিং পরবর্তীকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর করবেন। তিনি জানান, “আমি এপ্রিল মাসে চীন যাচ্ছি, এরপর তিনি আসবেন—ফ্লোরিডা, পাম বিচ বা ওয়াশিংটন ডিসিতে।”
উল্লেখযোগ্যভাবে, ট্রাম্প জানান যে, তাইওয়ান ইস্যুটি এই বৈঠকে একবারও আলোচনায় আসেনি—যা সাম্প্রতিক মার্কিন-চীন সম্পর্কের প্রেক্ষিতে একটি বিরল ঘটনা।
