আজকাল ওয়েবডেস্ক:  গাজার দিগন্তে আবারও নেমে এসেছে মৃত্যু ও শোকের ছায়া। রবিবার দক্ষিণ গাজায় ইজরায়েলের হামলায় কমপক্ষে তিনজন প্যালেস্তাইনি নিহত হয়েছেন বলে আল জাজিরা জানিয়েছে। বহু মাস ধরে চলা সংঘাত ইতিমধ্যেই অসংখ্য পরিবার, মহল্লা ও স্থানীয় সমাজকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে, তার মধ্যেই নতুন করে জীবন হারানোর এ ঘটনা গাজার মানুষের ক্ষত আরও গভীর করেছে।

অধিকৃত পশ্চিম তীরেও পরিস্থিতি একই রকম মর্মান্তিক। নাবলুসের পূর্বে আসকার শরণার্থী শিবিরে ইজরায়েলের অভিযানের সময় গুলিতে এক তরুণ নিহত হয়েছেন বলে প্যালেস্তাইন রেড ক্রিসেন্ট আল জাজিরাকে জানিয়েছে। দীর্ঘদিনের দমনের মধ্যে আরেকটি জীবন নিভে যাওয়ায় শিবিরজুড়ে শোকের আবহ নেমে এসেছে।

গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বহু মৃতদেহ দীর্ঘ সময় পর স্বজনদের কাছে ফিরছে। ইজরায়েল রবিবার আরও ১৫ জন প্যালেস্তাইনের দেহ হস্তান্তর করেছে, যাদের যুদ্ধ চলাকালীন আটক করা হয়েছিল। ১০ অক্টোবরের যুদ্ধবিরতির পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ৩৩০টি দেহ ফেরত দেওয়া হয়েছে। মৃত্যুর এই অন্তহীন মিছিল গাজার মানুষের জন্য এখন দুর্ভাগ্যজনকভাবে নিয়মিত দৃশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এরই মধ্যে গাজা শহর থেকে বাস্তুচ্যুত মানুষদের সামনে নতুন বিপদ হয়ে দেখা দিয়েছে প্রচণ্ড বৃষ্টি। অস্থায়ী তাঁবুগুলো ভিজে কাদায় পরিণত হয়েছে, শীতল জলে  ডুবে গেছে বহু এলাকার ত্রাণশিবির। যেসব পরিবার ইতিমধ্যেই ঘরবাড়ি, জীবনধারণের উপায় ও নিরাপত্তা হারিয়েছে, তারা এখন প্রকৃতির নির্মমতা সামলানোর জন্যও পর্যাপ্ত সামগ্রী পাচ্ছে না। সাধারণ প্লাস্টিকের চাদর দিয়ে অনেকেই ঠান্ডা আর বৃষ্টির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।

জাতিসংঘ সতর্ক করেছে যে ইজরায়েলের নিষেধাজ্ঞার কারণে পর্যাপ্ত ত্রাণ গাজায় ঢুকতে পারছে না। এতে লক্ষ লক্ষ মানুষ আশ্রয়ের অভাবে শীত ও যুদ্ধ—দুইয়ের সঙ্গেই লড়াইয়ে বাধ্য হচ্ছেন। মানবিক সহায়তা সীমিত হয়ে যাওয়ায় গাজার পরিস্থিতি দিন দিন আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় ইজরায়েলের হামলায় কমপক্ষে ৬৯,১৮৭ জন প্যালেস্তাইনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১,৭০,৭০৩ জন বলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। অন্যদিকে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস-সমর্থিত আক্রমণে ইজরায়েলে ১,১৩৯ জন নিহত হয় এবং প্রায় ২০০ জনকে অপহরণ করা হয়েছিল।

ধ্বংসস্তূপে ভরা বাড়ি, প্লাবিত ত্রাণশিবির, নিরন্তর ড্রোনের গুঞ্জন—সব মিলিয়ে গাজা যেন এক অশেষ বেদনার ভূমি হয়ে উঠেছে। তবুও অসম্ভব প্রতিকূলতার মধ্যে গাজার মানুষ লড়ে যাচ্ছে, ক্ষতবিক্ষত হলেও এখনো মাথা নোয়ায়নি।