আজকাল ওয়েবডেস্ক: তানজানিয়ার রাষ্ট্রপতি সামিয়া সুলুহু হাসান দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় ফেরার পথে। একপ্রকার নিশ্চিত হয়েই গিয়েছে তিনি জয়লাভ করতে চলেছেন। এমনটাই মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল।
গত বুধবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে এগিয়ে রয়েছেন বলে প্রাথমিক ফলাফল জানা গিয়েছে। তানজানিয়ার প্রথম মহিলা রাষ্ট্রপতি হিসেবে সামিয়া হাসানের নেতৃত্বে শাসক দল বড় ব্যবধানে এগিয়ে থাকলেও, নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে দেশের দুই বৃহত্তম বিরোধী দলের প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় নির্বাচনকে ঘিরে বিতর্ক ও ব্যাপক হিংসা ছড়িয়েছে দেশজুড়ে।
দেশটির মোট ২৭২টি আসনের মধ্যে ১২০টির ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। তাতে সামিয়া সুলুহু হাসান প্রায় ৯৭ শতাংশ ভোটে এগিয়ে আছেন বলে জানা গেছে।
তবে, বিরোধী দল চাদেমার দাবি, নির্বাচনের পর থেকে সহিংসতায় অন্তত ৭০০ জন নিহত হয়েছেন এবং হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন।
চাদেমা দলের বিদেশ দপ্তরের প্রধান জন কিটোকা সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গকে জানান, ‘দেশজুড়ে আমাদের সমর্থকদের গ্রেপ্তার ও নির্যাতন চলছে। অনেককে জোর করে আটক করা হয়েছে।’
বুধবার ভোটগ্রহণের দিন থেকেই সারা দেশে বিক্ষোভ শুরু হয়। এরপর থেকেই তানজানিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী ব্যাপক অভিযান শুরু করে।
রাজধানী দার এস সালাম সহ বিভিন্ন শহরে প্রিজন ভ্যান মোতায়েন করা হয়েছে এবং এখনও রাস্তায় টহল চলছে। ভোটের দিন থেকে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে, যা এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি।
তানজানিয়ার সেনাপ্রধান জ্যাকব মুকুন্ডা টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে জানান, ‘বিক্ষোভ চলাকালীন একাধিক অপরাধমূলক ঘটনা ঘটেছে। সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করা হয়েছে, যা কোনওভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা এমন পরিস্থিতি চলতে দিতে পারি না।’
যদিও সরকারিভাবে হতাহতের কোনও তথ্য প্রকাশ করা হয়নি, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত অন্তত ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সংস্থার আফ্রিকা-বিষয়ক গবেষক রোল্যান্ড এবোলে বলেন, ‘সংখ্যাটি এখনও নিশ্চিত নয়, তবে যে পরিমাণে হিংসার খবর পাওয়া গিয়েছে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।’
বিরোধী নেতা তুনদু লিসু, যিনি গত এপ্রিল থেকে দেশদ্রোহিতার মামলায় জেলবন্দি রয়েছেন, এখনও মুক্তি পাননি। দলের সহ-সভাপতি জন হেচে-কেও পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।
চাদেমা দলের তরফে জানানো হয়েছে, সাধারণ মানুষ তাদের ‘দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত’ প্রতিবাদ চালিয়ে যাবে। এদিকে, জাতিসংঘ (UN) তানজানিয়ার বর্তমান সহিংসতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
সংস্থাটি নিরাপত্তা বাহিনীকে ‘অপ্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ’ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। সহিংসতার জেরে দার এস সালাম বন্দরের কার্যক্রমেও প্রভাব পড়তে পারে, যা আফ্রিকার দুই বড় তামা উৎপাদনকারী দেশ জাম্বিয়া ও রিপাবলিক অফ কঙ্গোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক প্রবেশদ্বার।
সব মিলিয়ে, তানজানিয়ায় সামিয়া সুলুহু হাসানের সম্ভাব্য পুনর্নির্বাচনের প্রেক্ষিতে ছড়িয়ে পড়া এই রাজনৈতিক অস্থিরতা আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
