আজকাল ওয়েবডেস্ক: অপেক্ষার প্রহর গুনেছে গোটা বিশ্ব। শেষের কয়েকঘণ্টা চোখের পলক পড়েনি দেশের। চোখ খবরে, চোখ ঘড়ির কাঁটায়। সেই অপেক্ষার অবসান।  ভারতীয় সময় ৩টা পেরিয়ে মিনিটে, নির্ধারিত সময়ের কয়েকমিনিট পরে, সাগরের জলে ভাসল ড্রাগন ক্যাপসুল। মহাকাশ থেকে নেমে সাগরে ভাসলেন শুভাংশুরা। ক্যালিফোর্নিয়া উপকূলে তখন মধ্যরাত, ঘুটঘুটে অন্ধকার। অন্ধকারে, আলো হয়ে ঘরে ফিরলেন ঘরের ছেলেরা। এখন ঘণ্টাখানেক চলবে হ্যাচ ক্লোজিং প্রক্রিয়া। তারপর বিশেষ জলযানে স্থলে উঠে আসবেন মহাকাশচারীরা।

১৮ দিন মহাকাশে কাটিয়ে সোমবার নির্ধারিত সময়ের দশমিনিট পরে শুরু হয় শুভাংশুদের প্রত্যাবর্তন-প্রক্রিয়া। নাসা-র সবুজ সংকেত পাওয়ার পরেই আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন, সংক্ষেপে আইএসএস থেকে আনডকিং প্রক্রিয়া শুরু হয় ক্রু ড্রাগন ক্যাপসুলের। একে একে ধাপ পেরিয়ে মহাকাশযান ফিরেছে পৃথিবীতে।আইএসএস থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর, পৃথিবীর জল ছুঁতে সময় লেগে গেল প্রায় ২২ ঘণ্টা। 

আরও পড়ুন: রাশিয়াকে চরম হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের! বেঁধে দিলেন ৫০ দিনের সময়সীমা, শর্ত খেলাপে কী পদক্ষেপ? ...

মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে আসতে ঠিক কোন কোন ধাপ পেরোতে হল ড্রাগনকে? নজর ছিল সেদিকেও। সোমবার আনডকিং প্রক্রিয়া শুরুর পরেই আইএসএস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় মহাকাশযান। আনডকিং প্রক্রিয়ার কিছুক্ষণ আগে দেখা গিয়েছিল, কমান্ডার পেগি হুইটসন, মিশন পাইলট শুভাংশু 'শুক' শুক্লা এবং মিশন বিশেষজ্ঞ স্লাওস উজানানস্কি-উইজননিউস্কি এবং টিবর কাপুকে মহাকাশযানে প্রবেশ করতে।  মহাকাশ থেকে তাঁরা ফিরছেন প্রায় ২৫০ কেজি মালপত্র নিয়ে।  সঙ্গে রয়েছে, নানা পরীক্ষার নমুনা, যন্ত্রপাতি। 

?ref_src=twsrc%5Etfw">July 15, 2025

ক্যাপসুল যখন মহাকাশ থেকে পৃথিবীর বায়মণ্ডলে প্রবেশ করে, তখন তার গতিবেগ ছিল ২৮ হাজার কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়। তবে বায়ুমণ্ডলে ঢুকলেই তীব্র তাপ এবং ঘর্ষণের মুখোমুখি হয় মহাকাশযান। স্বাভাবিকভাবেই  মধ্যাকর্ষণ ক্ষেত্রে ঢুকতে রওনা দেওয়ার পরেই রেট্রোরকেট ইঞ্জিনের সাহায্যে কমানো হয় ড্রাগন ক্যাপসুলের গতি। অবতরণের আগে স্প্ল্যাশডাউন প্রক্রিয়ায় ড্রাগন ক্যাপসুলের গতিবেগ ছিল মাত্র ২৩ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়। কক্ষপথ থেকে বিচ্যুত হওয়ার পর, ২০ মিনিটেরও কম সময়ে ড্রাগন ক্যাপসুল ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলে মহাসাগরে ভেসে ওঠে। 

চার দশক পরে আবার মহাকাশে ভারতের পদচিহ্ন। আর সেই ঐতিহাসিক যাত্রার অন্যতম নায়ক গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা রবিবার (১৩ জুলাই, ২০২৫) আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র (ISS) থেকে পৃথিবীতে ফেরার আগে এক আবেগঘন ভাষণে বলেন, 'আজকের ভারতকে মহাকাশ থেকে দেখে মনে হয়, এ দেশ আগ্রাসী নয়, বরং আত্মবিশ্বাসী, নির্ভীক, স্বপ্নময়। কারণ এই দেশ আজ কেবলই উন্নয়নশীল নয়—এটা স্বপ্নপূরণের পথে চলেছে। আজও আমি গর্ব করে বলতে পারি, ‘আজকের ভারত এখনও সারে জাঁহাঁ সে আচ্ছা দিখতা হ্যায়।'
 
আড়াই সপ্তাহ ধরে মহাকাশ কেন্দ্রে অবস্থানের সময় শুক্লা এবং তাঁর তিন আন্তর্জাতিক সহকর্মী একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও ‘আউটরিচ’ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেন। ভারতীয় বৈজ্ঞানিক গবেষণা সংস্থা ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রস্তাবিত গবেষণার ভিত্তিতে তিনি বিভিন্ন মাইক্রোগ্র্যাভিটি এক্সপেরিমেন্ট পরিচালনা করেন। তিনি বলেন, 'এখানে আমরা শুধু বিজ্ঞানের কাজ করিনি। আমরা পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে দেখেছি মানুষ কী করতে পারে যখন তারা বিভাজনের বদলে ঐক্য বেছে নেয়। মহাকাশে একসাথে থাকার অভিজ্ঞতা আমাকে এই বিশ্বাস দিয়েছে—যদি আমরা ভৌগোলিক সীমা অতিক্রম করে একত্র হই, তাহলে সব অসম্ভবই সম্ভব।'