আজকাল ওয়েবডেস্ক: আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন। তার আগে সেদেশের নির্বাচন কমিশনের আওতায় ভোট পদ্ধতির একাধিক সংস্কার চলছে। এসবের মধ্যেই বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের বড় ঘোষণা বড় ধাক্কা শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের জন্য। কমিশন সাফ জানিয়ে দিয়েছে যে, দেশের বাইরে থেকে আর ভোট দিতে পারবেন না মুজিব-কন্যা তথা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হাসিনার ন্যাশনাল আইডেন্টিটি কার্ড বা জাতীয় পরিচয়পত্র 'লক' করে দেওয়া হয়েছে। ফলে তাঁর পরিবারের আর কারও ভোটাধিকার রইল না। 

ঢাকার নির্বাচন ভবনে সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময়ে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের সচিব আখতার আহমেদ বলেন, "যাঁদের এনআইডি কার্ড লক করা আছে তাঁরা বিদেশ থেকে ভোট দিতে পারবেন না। শেখ হাসিনার এনআইডিও লক করা হয়েছে।" আখতার আহমেদ অন্য কারও নাম উল্লেখ না করলেও, বেশ কয়েকটি বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে যে, দেশত্যাগী হাসিনার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের এনআইডি-ও লক করা হয়েছে।

গত বছরে আগস্ট অভ্যুথানের পর হাসিনা এবং তাঁর বোন রেহানা ভারতে চলে এসেছিলেন। এরপর থেকেই বিচারের জন্য হাসিনার প্রত্যর্পণ চেয়ে একাধিক পদক্ষেপ করেছিল ঢাকা। এই অবস্থায় চাইলে কি দেশে ফিরে ভোট দিতে পারবেন প্রাক্তন প্রধনমন্ত্রী? এতেও অবশ্য বাধা রয়েছে। বিচারপ্রক্রিয়া চলায় হাসিনা দেশে পা রাখলেই তাঁকে গ্রেপ্তার করার সম্ভাবনা প্রবল। ফলে হাসিনার পক্ষে আর ভোট দেওয়া সম্ভব নয়। 

কাদের এনআইডি ব্লক করা হয়েছে?
নির্বাচন কমিশনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আধিকারিকদের উদ্ধৃতি দিয়ে সেদেসের সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে- শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের এনআইডিও 'লক বা ব্লক' করা হয়েছে। এছাড়াও, রেহানার দুই সন্তান টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক ও আজমিনা সিদ্দিক এবং ভাগ্নে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির আইডিও ব্লক করা হয়েছে।

একইভাবে, শেখ হাসিনার স্বামী এবং প্রাক্তন নিরাপত্তা উপদেষ্টা, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিকি, তাঁর স্ত্রী শাহীন সিদ্দিকি এবং মেয়ে বুশরা সিদ্দিকিকেও ভোটদান থেকে বিরত রাখা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ আরও স্পষ্ট করে বলেছেন যে, যাঁরা ন্যায়বিচার এড়াতে বা অন্য কারণে বিদেশে পালিয়ে গিুয়েছেন তাঁরা কেবল তাঁদের জাতীয় পরিচয়পত্র সক্রিয় থাকলেই ভোট দিতে পারবেন। 

বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সমস্যা
ছাত্র বিক্ষোভের হিংসার পর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। এই সময় তিনি ভারতে পালিয়ে আসেন। পরবর্তীতে নোবেল বিজয়ী মহম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং সে দেশে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। হাসিনা এবং তাঁর দলের শীর্ষ নেতারা মানবতাবিরোধী অপরাধ-সহ বেশ কয়েকটি গুরুতর অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত।

শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে বর্তমানে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে। ২০২৪ সালের জুলাইয়ের বিদ্রোহের সময় সংঘটিত নৃশংসতার অভিযোগে প্রসিকিউটররা মৃত্যুদণ্ড চেয়েছেন। ইতিমধ্যে, আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ সিনিয়র নেতা আত্মগোপনে রয়েছেন অথবা নির্বাসনে রয়েছেন। বিক্ষোভ চলাকালীন, হিংস্র জনতা শাসক নেতাদের সম্পত্তিতে আগুন ধরিয়ে দেয়, যার মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমানের (হাসিনার পিতা এবং বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা) ঢাকার ধানমন্ডিতে অবস্থিত ঐতিহাসিক বাড়িও রয়েছে।