আজকাল ওয়েবডেস্ক: সৌদি আরবে তুষারপাত একটি বিরল ঘটনা। কিন্তু শীতকালে দেশটির উত্তরাঞ্চলের কিছু অংশে এই তুষারপাত ঘটেছে যা একই সঙ্গে ব্যতিক্রমী এবং উদ্বেগজনক। তাবুক এবং এর আশেপাশের পাহাড়ি অঞ্চলে তাপমাত্রা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। পাহাড়গুলি বরফে সাদা হয়ে গিয়েছে। প্রশাসনের তরফ থেকে আবহাওয়া সংক্রান্ত সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এই সব ঘটনা সাধারণত শীতল জলবায়ুর দেশগুলিতে পরিচিত।

সমাজমাধ্যমে বরফে ঢাকা মরুভূমির ভিডিওগুলি ভাইরাল হয়েছে শুধু সুন্দর দৃশ্যের জন্যই নয়, বরং সেগুলি যে ইঙ্গিত দিচ্ছিল তার জন্যও। মরুভূমিতে তুষারপাত গোটা বিশ্বকে ইঙ্গিত দিচ্ছে যে পৃথিবীর জলবায়ুতে পরিবর্তন ঘটছে এবং তার পরিণতি দৃশ্যমান। এটি স্পষ্ট করে দিয়েছে যে জলবায়ু পরিবর্তন আর কোনও হুমকি নয়। এটি বাস্তব সময়ে ঘটছে এবং সমস্ত ইতিহাসকে বদলে ফেলছে।

জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে সবচেয়ে প্রচলিত ভুল ধারণাগুলির মধ্যে একটি হল, সব জায়গায়র তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে। তবে বিজ্ঞানীদের মতে, এর উল্টোটাও সত্য। পৃথিবী উষ্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বায়ুমণ্ডল আরও বেশি আর্দ্রতা ও শক্তি ধারণ করে। যা দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠিত আবহাওয়ার ধরণকে আরও অস্থির করে তোলে। এই কারণেই ভারত-সহ সারা বিশ্ব তীব্র তাপপ্রবাহ, অতিবৃষ্টি এবং অপ্রত্যাশিত স্থানে আকস্মিক শৈত্যপ্রবাহের মতো ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছে।

এই বছর ভারত সরাসরি এই উদ্বেগজনক প্রবণতার সম্মুখীন হয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশটি উত্তর ও মধ্য ভারতজুড়ে রেকর্ড ভাঙা তাপপ্রবাহের সম্মুখীন হয়েছে। যার পরে উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশ এবং সিকিমে বিধ্বংসী মেঘভাঙা বৃষ্টি হয়েছে। বর্ষা কিছু অঞ্চলে দেরিতে এসেছে। সেই একই বর্ষা অন্য অঞ্চলে প্রাণঘাতী বন্যার কারণ হয়েছে। এগুলি কোনও কাকতালীয় ঘটনা নয়, এগুলি জলবায়ু পরিবর্তনের লক্ষণ।

ভারতের জন্য এই সতর্কতা কোনও আকস্মিক তুষারঝড় নিয়ে নয়, বরং একটি ভেঙে পড়া বাস্তুতন্ত্র নিয়ে। কৃষিচক্র, জল ব্যবস্থাপনা, নগর পরিকল্পনা এবং বিদ্যুতের চাহিদা সব কিছুই ঋতুভিত্তিক স্বাভাবিক অবস্থার উপর নির্ভরশীল। যখন এই স্বাভাবিক অবস্থা ভেঙে পড়ে, তখন ফসল নষ্ট হওয়া থেকে শুরু করে শহরে বন্যা এবং তাপপ্রবাহের কারণে মৃত্যু ইত্যাদি নানা ধরনের ক্ষয়ক্ষতি বহুগুণে বেড়ে যায়।

ভারতকে এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে হবে। তাপপ্রবাহ সহ্য করার জন্য নগর পরিকল্পনা এবং শক্তিশালী আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে বন্যা-প্রতিরোধী পরিকাঠামো এবং জলবায়ু-সহায়ক কৃষিব্যবস্থা- সব কিছুতেই আমূল পরিবর্তন দরকার। 

সৌদি আরবের তুষারপাতকে নিছক একটি ভাইরাল কৌতূহল হিসেবে উড়িয়ে দেওয়া উচিত নয়। এটি এমন একটি দেশ যেখানে জলবায়ু আরও বেশি অস্থির এবং অসহনশীল হয়ে উঠছে। বিশ্ব উষ্ণায়নের সঙ্গে সঙ্গে এই ধরনের অস্বাভাবিক ঘটনাগুলি আরও ঘন ঘন ঘটবে বলেই আশা করছেন বিজ্ঞানীরা। 

ভারত এবং বাকি বিশ্বের জন্য বার্তাটি স্পষ্ট। জলবায়ু সঙ্কট আর ভবিষ্যতের বিপদ নয়, ইতিমধ্যেই প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে।