আজকাল ওয়েবডেস্ক: সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (SCO) শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও চিনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং-এর মধ্যে হওয়া বৈঠক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। রবিবার ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিস্রি সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে সীমান্ত–পার সন্ত্রাসবাদ, মার্কিন শুল্কনীতি, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও সরাসরি বিমান পরিষেবা পুনরারম্ভের মতো নানা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু আলোচিত হয়েছে।
সীমান্ত–পার সন্ত্রাসবাদে চিনের সমর্থন জানিয়েছে চিন। মিস্রির বক্তব্য অনুযায়ী, মোদি বৈঠকে সীমান্ত–পার সন্ত্রাসবাদকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের বিষয় হিসেবে তুলেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে ভারত ও চিন উভয়ই সন্ত্রাসবাদের শিকার এবং এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় দুই দেশের মধ্যে বোঝাপড়া ও সহযোগিতা অপরিহার্য। মিস্রি জানান, চিনের পক্ষ থেকেও ভারতের অবস্থানের প্রতি সমর্থন জানানো হয়েছে। এই স্বীকৃতি কেবল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেই নয়, আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিপ্রেক্ষিতেও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
ট্রাম্পের শুল্কনীতি ও বৈশ্বিক অর্থনীতিও আলোচনায় উঠে এসেছে বলে জানা যাচ্ছে। বৈঠকের পর সাংবাদিকরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক আমদানি শুল্ক নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করেছেন এবং রাশিয়া থেকে তেল কেনা অব্যাহত রাখার কারণে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক ধার্য করেছেন। তবে চিন তুলনামূলকভাবে এ ধরনের চাপ থেকে অনেকটাই মুক্ত।
মিস্রি জানান, বৈঠকে মার্কিন শুল্কনীতি সরাসরি আলোচিত না হলেও মোদি ও শি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেছেন। তারা উভয়েই একমত হন যে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি জটিল হলেও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করাই প্রধান অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। বাণিজ্য ও বিনিয়োগের নতুন সুযোগ সৃষ্টি করে এই চ্যালেঞ্জকে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগানো সম্ভব বলেও মত প্রকাশ করেছেন দুই নেতা।
ফের শুরু হবে ভারত–চিন সরাসরি ফ্লাইট। কোভিড–পরবর্তী সময়ে স্থগিত থাকা ভারত–চিন সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় শুরু হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। মিস্রি জানান, গত কয়েক মাস ধরে এই নিয়ে দুই দেশের মধ্যে নিবিড় আলোচনা হয়েছে এবং সম্প্রতি ভারতীয় অসামরিক বিমান চলাচল দপ্তরের একটি প্রতিনিধি দল বেজিং সফরে গিয়েছিল। এর ফলে আলোচনায় যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “এখনও কিছু কার্যনির্বাহী বিষয়—যেমন এয়ার সার্ভিস চুক্তি, শিডিউল ও ক্যালেন্ডার—নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে এগুলো আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই মিটে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি-ও এই পরিষেবা দ্রুত পুনরায় চালুর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।”
দীর্ঘস্থায়ী বাণিজ্য ঘাটতি প্রসঙ্গে আলোচনা হয় বৈঠকে। ভারত–চিন বাণিজ্যের অন্যতম বড় সমস্যা হল বিপুল বাণিজ্য ঘাটতি। মিস্রি জানান, এ ইস্যু দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত হচ্ছে এবং সম্প্রতি চিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-এর দিল্লি সফরেও বিষয়টি ওঠে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর তখন চিনা পণ্যের প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরশীলতার ফলে ঘাটতি বাড়ার বিষয়টি স্পষ্টভাবে তুলে ধরেন।
মিস্রির মতে, “বাণিজ্য ঘাটতির সমস্যাকে কেবল অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নয়, বরং কৌশলগত সম্পর্কের বৃহত্তর পরিসরে দেখতে হবে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়লে এবং ঘাটতি কমলে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।” তিনি আরও জানান, সরকারি স্তরের পাশাপাশি বাণিজ্যিক সংস্থা ও শিল্পক্ষেত্রেও আলোচনার প্রক্রিয়া চলছে।
মোদি–শি বৈঠকে আলোচিত বিষয়গুলো প্রমাণ করে যে দুই দেশই বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে এগোচ্ছে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে চিনের সমর্থন, সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালুর ইঙ্গিত ও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রসঙ্গে আলোচনার অগ্রগতি ইতিবাচক সংকেত। তবে দীর্ঘস্থায়ী বাণিজ্য ঘাটতি ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক চাপের মতো চ্যালেঞ্জ ভবিষ্যত সম্পর্ককে প্রভাবিত করবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
