আজকাল ওয়েবডেস্ক: পাকিস্তান নাকি লুকিয়ে লুকিয়ে মাটির তলায় নিউক্লিয়ার টেস্ট চালাচ্ছে! সহজ বাংলায় বললে পারমাণবিক বোমা পরীক্ষা। দিন কয়েক আগেই এমন দাবি করে বসেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ব্যাস। তারপর থেকেই জোর চর্চা। ট্রাম্পের দাবি যদি সত্যি হয়, তাহলে পাকিস্তানের নিউক্লিয়ার টেস্ট নিয়ে ভারত কী ভাবছে? ভারত-পাকিস্তান, দু'দেশের কাছেই রয়েছে পরমাণু বোমা। দু'দেশের সংঘর্ষকালে এই এক পয়েন্টেই ঘাম ছুটেছিল বিশ্বের।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, এই প্রসঙ্গে রাজনাথ সিং অর্থাৎ দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি বেশকিছু সহজ উত্তর দিয়েছেন। তাঁর এক কথায় উত্তর, ভারত প্রস্তুত, সবরকম পরিস্থিতির জন্য। সূত্রের খবর, তাঁর মতে, এই ধরনের আলোচনা কিংবা জল্পনায় একেবারেই বিচলিত নয় ভারত। রাজনাথ সিং জানিয়েছেন, 'যারা পরীক্ষা করতে চায়, তাদের পরীক্ষা করতে দিন; তাদের তো আমরা থামাতে পারব না।' নয়াদিল্লির প্রস্তুতি কেমন? যদি এই জল্পনা কিংবা ট্রাম্পের দাবি সত্যি হয়ে যায়? রাজনাথ সিং জানিয়েছেন, 'যাই ঘটুক না কেন, আমরা যেকোনও পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত।' প্রথমে কোন দেশ আদৌ কী করছে, সেদিকে নজর রাখার কথা বলেছেন তিনি।
যদিও এই সব আলোচনা, জল্পনার সূত্রপাত, কয়েক দিন আগে, ট্রাম্পের এক দাবিকে কেন্দ্র করে। ডোনাল্ড ট্রাম্প দিনকয়েক আগে দাবি করেন, আমেরিকা কয়েক দশক ধরে এই কাজ থেকে বিরত থাকলেও, তলায় তলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। পাকিস্তান, পরীক্ষা চালাচ্ছে পরমাণু বোমা নিয়ে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলছেন, যদিও তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে আমেরিকা পরমাণু পরীক্ষা থেকে বিরত ছিল, পাকিস্তান-সহ বেশ কয়েকটি দেশ, ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে, কাউকে কিছু জানতে না দিয়ে। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, পাকিস্তান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করছে। তিনি আরও বলেন যে রাশিয়া, চীন এবং উত্তর কোরিয়া-সহ অন্যান্য শক্তির সঙ্গে 'তাল মিলিয়ে' যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিজস্ব পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা পুনরায় শুরু করবে।
সিবিএস-এর রবিবার সিবিএস নিউজের ৬০ মিনিটস-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, 'যদিও যুক্তরাষ্ট্র তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে পরীক্ষা চালানো থেকে বিরত ছিল, তবুও পাকিস্তান সহ বেশ কয়েকটি দেশ বিশ্বব্যাপী নজরদারির বাইরে ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে।' এখানেই শেষ নয়, তারপরেই মার্কিন প্রেসসিডেন্ট বলেন, 'আমরা পরীক্ষা করতে যাচ্ছি, কারণ তারা পরীক্ষা করছে। এবং অবশ্যই উত্তর কোরিয়া পরীক্ষা করছে। পাকিস্তান পরীক্ষা করছে। ' ট্রাম্পের মতে, ওই দেশগুলি যেভাবে পরমাণু পরীক্ষা করছে, তাতে অন্যান্য দেশগুলি বুঝতেই পারছে না, কারণ পরীক্ষা চলছে মাটির নীচে। কেবল অল্প কম্পনের বেশি কিছু অনুভূত হচ্ছে না।
অন্যান্য দেশগুলির কার্যকলাপ জানিয়ে দেওয়ার পরেই, ট্রাম্প জানিয়েছেন নিজের দেশের পরিকল্পনার কথা। তিনি জানিয়েছেন, মার্কিন পারমাণবিক পরীক্ষার উপর ৩০ বছরের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়ে ট্রাম্প বলেন, ওয়াশিংটন "একমাত্র দেশ" হিসেবে পিছিয়ে থাকতে পারে না। একইসঙ্গে ট্রাম্প দাবি করেছেন যে আমেরিকার কাছে 'অন্য যেকোনও দেশের তুলনায় বেশি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে' এবং তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের কাছে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। তিনি বলেন, 'আমাদের কাছে বিশ্বকে ১৫০ বার উড়িয়ে দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে।'
ট্রাম্পের এই মন্তব্যের পর, MEA মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছিলেন, 'গোপন এবং অবৈধ পারমাণবিক কার্যকলাপ পাকিস্তানের ইতিহাসের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ, যা দশকের পর দশক ধরে চোরাচালান, রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ লঙ্ঘন, গোপন অংশীদারিত্ব, এ কিউ খান নেটওয়ার্ক এবং আরও একাধিক বিষয়কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে।'
যদিও এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, পাকিস্তান ট্রাম্পের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে, একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সিবিএস নিউজকে বলেছেন, পাকিস্তান পারমাণবিক পরীক্ষার উপর স্থগিতাদেশ বজায় রেখেছে।
