আজকাল ওয়েবডেস্ক: পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে বিরল খনিজ পদার্থ উপহার হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রদর্শন করার ঘটনায় দেশে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন। সেনাবাহিনীর কূটনৈতিক কর্মকাণ্ডে বাড়তি ভূমিকা ও বেসামরিক নেতৃত্বকে ছাপিয়ে যাওয়ার প্রবণতাকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে ক্ষোভ বাড়ছে।
আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টির প্রধান ও সেনেটর আইমাল ওয়ালি খান পার্লামেন্টে ভাষণ দিতে গিয়ে মুনিরকে তীব্রভাবে আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, “আমাদের সেনাপ্রধান যেন এক দোকানদারের মতো, দামি মালপত্র গ্রাহকের সামনে সাজিয়ে ধরছেন। কী হাস্যকর দৃশ্য!” সেনেটরের এই বক্তব্যের ভিডিও দ্রুত ভাইরাল হয়। তিনি আরও বলেন, “আমাদের চিফ অব আর্মি স্টাফ হাতে বিরল খনিজ ভর্তি ব্রিফকেস নিয়ে ঘুরছেন। এটি একেবারেই প্রহসন।”
What joke . In what capacity the Army Chief is carrying minerals in a brief case? Asks Aimal Wali Khan of ANP pic.twitter.com/mYhzWbnFnV
— Fakhar Ur Rehman (@Fakharrehman01)Tweet by @Fakharrehman01
গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউস একটি ছবি প্রকাশ করে যেখানে দেখা যায়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি কাঠের বাক্সে রাখা বিরল খনিজ পদার্থ মনোযোগ দিয়ে দেখছেন। পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন জেনারেল আসিম মুনির, আর প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ দাঁড়িয়ে ছিলেন একপাশে, অনেকটাই দর্শকের ভূমিকায়। এই সাক্ষাৎ হয় এক বৈঠকের পর। এর আগে পাকিস্তানি সামরিক প্রকৌশল ও নির্মাণ সংস্থা ফ্রন্টিয়ার ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন এবং মার্কিন ইউএস স্ট্র্যাটেজিক মেটালস একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে, যাতে পাকিস্তানের ভেতরে কৌশলগত খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান ও প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে ব্যবহারের চুক্তি হয়।
উল্লেখযোগ্য বিষয়, মুনির গত পাঁচ মাসে তৃতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়েছিলেন। বিশ্লেষকদের মতে, এটি প্রমাণ করে যে পাকিস্তান ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ক্রমবর্ধমানভাবে জড়িয়ে পড়ছে।
আইমাল খান সেনাপ্রধানকে ব্যঙ্গ করে বলেন, “কোন দেশের সেনাপ্রধান ব্রিফকেস নিয়ে ঘুরে বেড়ান? দৃশ্যটা ছিল যেন এক নামি দোকানের ম্যানেজার খুশি মনে দাঁড়িয়ে আছেন, আর দোকানদার গ্রাহককে চকচকে জিনিস কিনতে উৎসাহ দিচ্ছেন।” তিনি অভিযোগ করেন, সেনাপ্রধানের এমন কর্মকাণ্ড পাকিস্তানের সংবিধান ও পার্লামেন্টের প্রতি চরম উপহাস।
আরও পড়ুন: ইতিহাসে নতুন রেকর্ড গড়ার পথে ইলন মাস্ক, এবার তিনি কী করবেন
আইমাল খান প্রশ্ন তোলেন, “কোন ক্ষমতায় মুনির এসব উদ্যোগ নিচ্ছেন? কোন আইনে? এটি গণতন্ত্র নয়, একেবারেই স্বৈরশাসনের নমুনা। এটি কি সংসদের প্রতি অবমাননা নয়?” তিনি জোর দিয়ে বলেন, নির্বাচিত সরকারের ক্ষমতা ক্ষুণ্ণ করে সেনাপ্রধানের কূটনৈতিক ভূমিকা আসলে একনায়কতান্ত্রিক আচরণকে উৎসাহিত করছে।
খান আরও দাবি করেন, পাকিস্তান-সৌদি প্রতিরক্ষা চুক্তি, ট্রাম্পের গাজা শান্তি প্রস্তাবের প্রতি পাকিস্তানের সমর্থন, এবং সেনাপ্রধানের যুক্তরাষ্ট্র সফর সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ বিবরণ জানতে যৌথ অধিবেশন ডাকা হোক।
পাকিস্তানে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ রয়েছে যে, দেশটির সেনাবাহিনী রাজনীতি ও কূটনীতিতে অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ করছে। মুনির-ট্রাম্প ফটো-অপ সেই বিতর্ককে নতুন মাত্রা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শরিফের উপস্থিতিতে সেনাপ্রধানের নেতৃত্বে এমন কূটনৈতিক প্রদর্শন পাকিস্তানের বেসামরিক প্রশাসনের মর্যাদাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বলেই বিরোধীদের অভিযোগ।
