আজকাল ওয়েবডেস্ক: OnlyFans তারকা অ্যায়েলা সঙ্গী খোঁজার প্রচলিত উপায় ভেঙে ফেলেছেন। গত মাসে নিজের Substack-এ তিনি ঘোষণা করেন— কেউ যদি তাকে এমন একজন পুরুষের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে পারে যাকে তিনি বিয়ে করবেন, তবে সেই সুপারিশকারী পাবেন ১ লাখ ডলার। এই ঘোষণাই ইন্টারনেটজুড়ে তোলপাড় ফেলে দিয়েছে। ৩৩ বছর বয়সী অ্যায়েলা সান ফ্রান্সিসকোর বে এরিয়ায় থাকেন এবং স্বীকার করেছেন— তিনি সাধারণ ডেটার নন। তাঁর ভাষায়, “ডেট করার মতো মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন নয়। আমাকে বিয়ে করতে আগ্রহী পুরুষও কম নয়। কিন্তু যাকে আমি বিয়ে করতে চাই— সেই তালিকাটি অত্যন্ত ছোট।” তিনি জানিয়েছেন, সম্ভাব্য সঙ্গী হতে হলে প্রথম শর্ত হলো— তাকে অবশ্যই পলিআমোরিতে বিশ্বাসী হতে হবে, যেটা তাঁর দাবি অনুযায়ী, বিশ্বের মাত্র ৩ শতাংশ মানুষের মধ্যে দেখা যায়। যৌনতার ক্ষেত্রে থাকতে হবে ‘অমিমাংসিত ও অন্ধকারাচ্ছন্ন প্রবণতা’— যা তিনি মনে করেন, মাত্র ১০ শতাংশ পুরুষের বৈশিষ্ট্য। এর সঙ্গে যুক্ত হবে আর্থিক সামর্থ্য, সন্তান নেওয়ার ইচ্ছা এবং আত্ম-স্বীকৃত ব্যক্তিত্ব। রাজনৈতিক মত, বয়স, বুদ্ধিমত্তা এবং শারীরিক গঠন— এগুলো তিনি ‘অতিরিক্ত পয়েন্ট’ হিসেবে ধরে দেখেন।
শুধু বিয়ের প্রস্তাব নয়— অ্যায়েলা আরও বড় উপঢৌকন রেখেছেন। কেউ যদি এমন একজন ধনী পুরুষ খুঁজে দিতে পারে, যে কর-পরবর্তী ১০ মিলিয়ন ডলার দিয়ে শুধু তার সঙ্গে সন্তান জন্মদানের ‘চুক্তি’ করবে এবং পরে সন্তানকে তিনি একাই লালন-পালন করবেন— তবে মধ্যস্থতাকারী পাবেন ৩ লক্ষ ডলার। তিনি ইতিমধ্যে বহু ডিম্বাণু সংরক্ষণ করেছেন, যাতে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় কোনও জটিলতা তৈরি না হয়। এই পুরো ব্যবস্থার জন্য তিনি তৈরি করেছেন একটি অনলাইন ফর্ম, যেখানে সম্ভাব্য সঙ্গীকে যৌনতা, রাজনৈতিক মত, যুক্তিবোধ এবং ব্যক্তিগত অভ্যাসসংক্রান্ত প্রায়োগিক প্রশ্নের জবাব দিতে হয়। সেখানে তথ্য গোপন করা বা মিথ্যা দিলে সম্পর্ক শুরু হওয়ার আগেই ভেঙে যাবে— এমন সতর্কবার্তাও দিয়েছেন তিনি।
অ্যায়েলা মনে করেন, মানুষ এখনও প্রেম আর ম্যাচমেকিংকে রহস্যময় বা কাকতালীয় ঘটনা হিসেবে দেখে— হাত ছোঁয়া, চোখে চোখ পড়া, ভাগ্যের নির্মাণ। তাঁর যুক্তি, “২০২৫ সালে শুধু রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ঠিক মানুষটির সঙ্গে দেখা হওয়ার অপেক্ষায় থাকাটা রোমান্টিক, কিন্তু বাস্তবসম্মত নয়। প্রযুক্তি, তথ্য এবং সামাজিক নেটওয়ার্কিং সম্পর্ককে আরও কার্যকর করে তুলতে পারে।” তিনি জানিয়েছেন, তাঁর বর্তমান সম্পর্কও শুরু হয়েছিল এ ধরনের একটি সার্ভের মাধ্যমেই, যা তাঁর অনুসারীরাই পূরণ করেছিলেন।
এই ধরনের ঘোষণা নতুন নয়। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে আইনজীবী ইভ টিলি-কোলসনও ঘোষণা করেছিলেন— যদি কেউ তাকে ভবিষ্যৎ স্বামীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে পারে, তবে তিনি দেবেন ৫ হাজার ডলার। সেই ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল এবং অনেকে তাকে সম্ভাব্য সঙ্গীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন।
অ্যায়েলার ঘোষণাকে কেন্দ্র করে মতভেদ স্পষ্ট। কেউ এটিকে বলে প্রেমের বাজারীকরণ, কেউ বলে আধুনিক যুগে বাস্তবতা রহিত সম্পর্কের সংস্কার। আবার অনেকে মনে করছেন, এটি ডেটিং অ্যাপ যুগের চূড়ান্ত রূপ— যেখানে অ্যালগরিদম, তথ্য এবং অর্থ একসঙ্গে ‘যুগল খোঁজা’কে পরিকল্পিত প্রক্রিয়ায় পরিণত করছে।
কিন্তু অ্যায়েলা বিতর্কে খুব একটা বিচলিত নন। তাঁর যুক্তি সহজ— “আমরা সম্পর্ককে জাদুময় ভাবতে ভালোবাসি। কিন্তু যদি পদ্ধতিগতভাবে, যুক্তি দিয়ে, সম্পদ ব্যবহার করে আরও ভালো সঙ্গী পাওয়া যায়— তবে সমস্যা কোথায়?” শেষ পর্যন্ত প্রশ্নটা থেকে যায়— প্রেম কি আবেগের বিষয়, না ক্রমশ তা হয়ে উঠছে লেনদেন, অ্যালগরিদম আর অফারের খেলা?
