আজকাল ওয়েবডেস্ক: কবি, দার্শনিক এবং রোমান্টিকদের কাছে ভালোবাসা পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস। কিন্তু যখন বাস্তব সৃষ্টির কথা আসে, তখন অতি ধনীরা তাঁদের দৃষ্টি বিরল এবং অসামান্য সম্পদের উপর রাখেন। যেমন, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির সালভেতর মুন্ডি বা এক ধরণের বুগাত্তি লা ভয়েচার নোয়ারের কথা ভাবুন। তবে, পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল উপাদান সোনা, হীরা বা বিলিয়নেয়ারদের প্রিয় ক্রিপ্টো মুদ্রা নয়। এটি অনেক বেশি রহস্যময় এবং অনেক বেশি মূল্যবান কিছু।

এই বিরল পদার্থের মাত্র এক গ্রাম দিয়ে বিশ্বের প্রতিটি ইয়ট, প্রাসাদ এবং ব্যক্তিগত দ্বীপ কেনা সম্ভব- এমনকি মহাকাশ কর্মসূচির জন্যও যথেষ্ট। কিন্তু পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল পদার্থটির মূল্য সত্যিই বুঝতে হলে, ভেবে দেখুন, এর মাত্র এক গ্রাম দিয়ে ১,৫৫,০০০ অতিবিলাসী বিমান কেনার পরেও টাকা বেঁচে থাকবে। 

এটি হল অ্যান্টিম্যাটার। কোনও পদার্থ বা ম্যাটার এবং অ্যান্টিম্যাটারের পরমাণুর ভর একই। কিন্তু ইলেকট্রিকাল চার্জ উল্টো। কোয়ান্টাম নাম্বারও ভিন্ন। তাই অ্যান্টিম্যাটারকে ম্যাটারেরই 'যমজ ভাই' বলা হয়। পদার্থ এবং অ্যান্টিম্যাটারের মিলন হলে কী ঘটে? তারা একে অপরকে ধ্বংস করে দেয় এমন শক্তির বিস্ফোরণে যা এতটাই শক্তিশালী যে সহজেই একটি সুপারনোভাকে ছাড়িয়ে যায়।

অ্যান্টিম্যাটার তৈরি করা অবিশ্বাস্যরকম কঠিন এবং সংরক্ষণ করা আরও কঠিন! CERN-এর বিজ্ঞানীদের লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারে অ্যান্টিম্যাটার তৈরি করার ক্ষমতা রয়েছে। তবে তা খুবই কম পরিমাণে। এটি তৈরিতে প্রচুর শক্তি এবং সময় ব্যয় করে। এখনও পর্যন্ত, মাত্র কয়েকটি ন্যানোগ্রাম তৈরি করা হয়েছে, এবং কোনওটিই এত বেশি সময় ধরে স্থায়ী হয়নি।

এমন কিছু নিয়ে মাথা ঘামানো কেন যা চিহ্নিত করা এত কঠিন? অ্যান্টিম্যাটার জ্বালানি এবং মহাকাশ ভ্রমণের ভবিষ্যৎ বদলে দিতে পারে। তত্ত্ব অনুযায়ী, মাত্র এক গ্রাম অ্যান্টিম্যাটার দীর্ঘস্থায়ী তেজস্ক্রিয় বিস্ফোরণ ছাড়াই পারমাণবিক বোমার সমতুল্য শক্তি উৎপাদন করতে পারে। যতক্ষণ না বিজ্ঞানীরা এটিকে নিরাপদে সংরক্ষণ করতে পারেন এবং অর্থনৈতিকভাবে কার্যকর করার উপায় খুঁজে বার করেন, ততক্ষণ পর্যন্ত এর ব্যবহারের সম্ভাবনা কম।

প্রতি গ্রামে অ্যান্টিম্যাটারের আনুমানিক মূল্য প্রায় ৬২ ট্রিলিয়ন ডলার - অর্থাৎ ৬২ লক্ষ কোটি ডলার। অ্যান্টিম্যাটার এখন বেশিরভাগ মহাদেশের মোট সম্পদের চেয়েও মূল্যবান পদার্থ। এটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ব্যয়বহুল পদার্থ।