আজকাল ওয়েবডেস্ক: হেলিকপ্টারগুলোর বহুমুখীতা ও শক্তি অনস্বীকার্য। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে তারা কি জেট বা বোমারু বিমানের মতো করে পারমাণবিক বোমা নামাতে পারে? প্রাথমিকভাবে উত্তর হলো—প্রায়ই না। 


প্রথমত, অধিকাংশ পারমাণবিক বোমা মূলত বোমারু বিমান বা দ্রুত জেটবিমান দ্বারা নিক্ষেপের জন্য ডিজাইন করা হয়। বিখ্যাত বোমারুগুলো—যেমন B-52 জাতীয় বোমার বা আধুনিক ফাইটার-বোমারুগুলো—উচ্চ গতি ও উচ্চতায় নির্দিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে থাকে, যাতে বোমা ছোঁড়ে পাইলট ও বিমান নিরাপদ দূরে সরে যেতে পারে। এসব প্ল্যাটফর্মের বোমা-নিক্ষেপ, নিরাপদ বিচ্ছিন্নকরণ ও ফিউজিং সিস্টেম নির্দিষ্টভাবে কনফিগার করা থাকে।


প্রযুক্তিগতভাবে বহু হেলিকপ্টারের লিফ্টিং পাওয়ার হয় যাতে নির্দিষ্ট ওজনের বোমা বহন করা যায়। ছোটো কৌশলগত বোমাগুলোকে ওজনের দিক থেকে বহন করা সম্ভব হতে পারে। তবু সাধারণ হেলিকপ্টারগুলো পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপের জন্য সার্টিফায়েড নয়। তাদের মধ্যে এমন নিরাপত্তা ব্যবস্থা, সুরক্ষা কাঠামো বা স্ট্রাকচারের উপাদান নেই যা এই ধরনের মিশন পরিচালনার জন্য প্রয়োজন।

আরও পড়ুন: কেন অতিরিক্ত বৃষ্টি পিছু ছাড়ছে না, চোখ কপালে উঠল গবেষকদের


ইতিহাসে একটি বিরল উদাহরণ আছে—১৯৭১ থেকে ১৯৯১ সালের মধ্যে ব্রিটিশ নৌবাহিনীর কিছু হেলিকপ্টার WE.177 নামক পারমাণবিক ডেপথ চার্জ বহন ও প্রয়োগ করতে পারত। সেই যন্ত্রগুলো বিশেষভাবে সমুদ্রের মিত্রজাহাজ সাবমেরিন মোকাবিলার জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল এবং ভূমি আক্রমণের জন্য নয়। সেই কর্মপ্রণালী বিরল ছিল এবং তিন দশক আগে বন্ধ হয়ে গেছে।


হেলিকপ্টারের সবচেয়ে বড় অসুবিধা হল তারা ধীরগতি এবং নিচু রেঞ্জে ওড়ে, ফলে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কাছে সহজ লক্ষ্য হয়ে পড়ে। এছাড়া পারমাণবিক বিস্ফোরণের শকওয়েভ, তাপ ও ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক পালস এর প্রতিকূল প্রভাবের কারণে হেলিকপ্টার খুবই ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। এটি ইঙ্গিত করে যে বিস্ফোরণের কয়েক কিলোমিটার দূরত্বে থেকেও একটি হেলিকপ্টার টিকে থাকা কঠিন।


বিপরীতভাবে, জেট বা বোমার উচ্চ দূরত্ব ও দ্রুতগতির কারণে বোমা নিক্ষেপের পরে দ্রুত সরে গিয়ে জীবিত থাকার সম্ভাবনা বেশি। আধুনিক পারমাণবিক পরিকল্পনা ও বোমারু ফিউজিং কৌশলগুলোই উচ্চতায় এয়ার-বিস্ফোরণের ওপর নির্ভরশীল, যাতে প্ল্যাটফর্ম নিরাপদভাবে পালিয়ে যেতে পারে।


আজকের দিনে মাত্র বিশেষ কিছু বিমান ও কয়েকটি উন্নত ফাইটার-বোমারু পারমাণবিক অস্ত্র বহন ও নিক্ষেপের জন্য সার্টিফায়েড—তার সঙ্গে আছে কঠোর নিয়ন্ত্রণ, নেভিগেশন ও সেফটি প্রটোকল। হেলিকপ্টারগুলো বর্তমানে পারমাণবিক অস্ত্র নিক্ষেপের পরিকল্পনায় পড়ে না; তবে সাইট-সাহায্য, রক্ষণাবেক্ষণ বা জরুরি পরিবহনের কাজে পারতে পারে—এগুলোই গ্রহণযোগ্য ভূমিকা।


তত্ত্বগতভাবে এমন একটি পারমাণু ডিজাইন করা যায় যা হেলিকপ্টার বহন করতে পারবে, কিন্তু নিরাপত্তা, পালানোর পথ, স্ট্র্যাটেজিক ও অপারেশনাল ঝুঁকি বিবেচনায় তা অত্যন্ত অবাস্তব ও অপ্রয়োজনীয়। সামরিক বিশ্লেষকেরা একমত—নিকট ভবিষ্যতে জেট ও বোমারু বিমানই পারমাণবিক ডেলিভারিতে প্রধান ভূমিকা পালন করবে।