আজকাল ওয়েবডেস্ক: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মেধাবী ছাত্র থাড রবার্টস (Thad Roberts) স্বপ্নপূরণের পথে বড় পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। পদার্থবিদ্যা, ভূতত্ত্ব এবং ভূ-ভৌত বিজ্ঞানের ত্রৈ-মেজর রবার্টসের লক্ষ্য ছিল একদিন মহাকাশচারী হওয়া, এমনকি প্রথম মানুষ হিসেবে মঙ্গলে যাওয়া। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি, বরং তিনি এমন এক কাণ্ড ঘটালেন যা বিজ্ঞানের ইতিহাসে আজও বিতর্কিত—চাঁদের পাথরের ওপর যৌনসঙ্গম। নাসায় ইন্টার্নশিপ করতে গিয়ে প্রথমে উত্তেজনায় ভরা রবার্টস কিছু "শেনানিগান" শুরু করেন। একসময় সেগুলো সীমা ছাড়িয়ে যায়, যখন তিনি নাসার ল্যাবরেটরিতে রাখা চাঁদের পাথরের নমুনা চোখে পড়ে। রবার্টস সিদ্ধান্ত নিলেন, এগুলো চুরি করে বিক্রি করবেন।
হলিউডি হাইস্ট সিনেমার মতো চতুর কৌশল বা পোশাক পরিবর্তন কিছুই ছিল না। তিনি তাঁর দুই সহকর্মী ইন্টার্ন, টিফানি ফাউলার ও শে সাওয়ার-কে নিয়ে এক রাতে নাসার পরিচয়পত্র ব্যবহার করে ল্যাবরেটরিতে প্রবেশ করেন। ভল্ট খুলতে না পেরে, তারা পুরো সেফটাই ডলি ট্রলি দিয়ে বাইরে নিয়ে যায়। চুরি করা নমুনাগুলো মুক্ত করার পর রবার্টস নতুন এক "প্রথম" রেকর্ড করার সিদ্ধান্ত নেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি স্বীকার করেন, তিনি বিছানার চাদরের নিচে চাঁদের পাথর ও একটি মঙ্গলীয় উল্কাপিণ্ড রেখে যৌনসঙ্গম করেন। তিনি বলেন—"কেউ কখনো চাঁদে যৌনসঙ্গম করেনি। আমরা প্রতীকীভাবে সেটাই করলাম। আরামদায়ক ছিল না, কিন্তু সেটাই উদ্দেশ্যও ছিল না।"
আরও পড়ুন: আগামী ১১ বছরে তছনছ হবে পৃথিবী! রক্ষকই হবে ভক্ষক
চাঁদের পাথর বাজারে অমূল্য—মূল্য প্রায় ২১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। রবার্টস এগুলো বিক্রি করতে চাইলেন বেলজিয়ামের অ্যান্টওয়ার্প মিনারলজি ক্লাবের ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন দিয়ে। এতে সন্দেহ জাগে এক সংগ্রাহকের মনে। তিনি এফবিআইকে সতর্ক করেন।
ফলস্বরূপ, এফবিআই ভুয়ো ক্রেতার ছদ্মবেশে ইমেল করে রবার্টসকে ফাঁদে ফেলে। "অরব রবিনসন" নামে পরিচিত হয়ে রবার্টস পেনসিলভানিয়ায় এক রেস্তোরাঁয় সাক্ষাতের আয়োজন করেন। কিন্তু "ক্রেতারা" আসলে ফেডারেল এজেন্ট ছিলেন। ঘটনাস্থলেই তিনি ধরা পড়েন। তাঁর বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় কেবল চাঁদের পাথর নয়, কয়েকটি চুরি করা ডাইনোসরের জীবাশ্মও।
এফবিআই জানায়, "এই তরুণ চোরেরা শুধু চাঁদের নমুনাই চুরি করেনি, সেগুলো দূষিতও করেছে। ফলে গবেষণার জন্য সেগুলো কার্যত অকার্যকর হয়ে গেছে।" আরও ভয়াবহ ক্ষতি হয়, কারণ চুরি হওয়া সেই সেফের ভেতরে থাকা নাসা বিজ্ঞানীদের তিন দশকের হাতে লেখা গবেষণার নোট ধ্বংস হয়ে যায়। ঘটনার ফলে রবার্টসকে আট বছরের ফেডারেল কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়। লেখক বেন মেজরিচ তাঁর কাহিনী নিয়ে ২০১১ সালে Sex on the Moon নামে একটি বই লেখেন, যেখানে রবার্টসকে কিছুটা সহানুভূতিশীল দৃষ্টিতে তুলে ধরা হয়। তবে বৈজ্ঞানিক মহলে তিনি ইতিহাসের সবচেয়ে "খারাপ ইন্টার্নদের" একজন হিসেবেই চিহ্নিত। চাঁদের পাথর চুরি ও যৌনকাণ্ডের এই ঘটনা দেখিয়ে দেয় কিভাবে এক মেধাবী ছাত্রের অযৌক্তিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও "প্র্যাঙ্ক" করার মানসিকতা বৈজ্ঞানিক ঐতিহ্যের অপূরণীয় ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।
