আজকাল ওয়েবডেস্ক:  বিবাহিত জীবনে শ্বশুরবাড়ি–সম্পর্কিত মতবিরোধ নতুন কিছু নয়। তবে, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে এক মিলেনিয়াল দম্পতির ঘটনা রীতিমতো আলোচনার ঝড় তুলেছে সামাজিক মাধ্যমে। এক তরুণী (৩০) অভিযোগ করেছেন, তার স্বামী বিনা আলোচনায় তাদের নতুন বাড়ির অতিরিক্ত চাবিটি তার মাকে দিয়ে দিয়েছেন। ঘটনাটি Reddit–এর r/AmIOverreacting ফোরামে প্রকাশিত হওয়ার পর ব্যাপক সাড়া ফেলে। সম্প্রতি ওই দম্পতি তাদের নতুন বাড়িতে উঠেছেন। বাড়ির অতিরিক্ত চাবি কীভাবে ব্যবহার হবে, তা নিয়ে দম্পতির মধ্যে আলোচনার আগেই স্বামী নিজে সিদ্ধান্ত নেন এবং শাশুড়িকে (অর্থাৎ নিজের মাকে) চাবিটি দিয়ে দেন। স্ত্রী জানান, “তার মা মানুষ হিসেবে ভালো হলেও ভীষণ হস্তক্ষেপপ্রবণ। রান্নাঘরটা তিনি প্রায়ই নিজের মতো করে সাজিয়ে দেন, কারণ তার মতে সেটাই ‘ভালোভাবে রাখা’। আমি চাই না, আমার অনুমতি ছাড়া তিনি বাড়িতে ঢুকুন।”


স্ত্রীর আপত্তি শুনে স্বামী উল্টে তাকে “ড্রামাটিক”, “অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়াশীল” এবং “কন্ট্রোলিং” বলে অভিযোগ করেন। স্বামীর এই মনোভাব আরও বেশি ক্ষোভের জন্ম দেয় স্ত্রীর মনে। ঘটনার পোস্টে প্রায় ৪০০টি মন্তব্য জমা পড়ে, যেখানে অধিকাংশই স্ত্রীর পাশে দাঁড়ান। এক মন্তব্যকারী লেখেন, “যখন একজন স্বামী একতরফাভাবে ঠিক করেন কার হাতে বাড়ির চাবি যাবে, তখন তিনি মূলত ক্ষমতার ভারসাম্য নষ্ট করছেন। এটি নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণ।” অন্য একজন পরামর্শ দেন, “জরুরি পরিস্থিতিতে চাবি দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু যদি অনুমতি ছাড়া তিনি ঘরে ঢোকেন বা জিনিসপত্র এদিক–ওদিক করেন, তবে তালা পাল্টানো উচিত। দ্বিতীয়বার ঘটলে স্বামী–স্ত্রী সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়েই নতুন করে ভাবতে হবে।”

আরও পড়ুন: গ্যারাজে ঝুলছিল মানুষের 'ওটার' আকারের বাদুড়! দেখে হাড়হিম ব্যক্তির! আসল সত্য জানলে চমকে উঠবেন

আরেকজন কঠোর মন্তব্য করেন, “আমি হলে জিনিসপত্র গুছিয়ে কিছুদিন আলাদা থাকতাম, যতক্ষণ না তিনি চাবি ফেরত আনেন। নিজের গোপনীয়তা রক্ষার জন্য স্বাভাবিক দাবি করাটাই যদি ‘কন্ট্রোলিং’ বলা হয়, তবে এভাবে সংসার টেকানো সম্ভব নয়।” এই ঘটনা অবশ্য বিচ্ছিন্ন নয়। শাশুড়ির অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ বহু দাম্পত্য জীবনে দেখা গেছে। Reddit–এর আরেকটি r/weddingshaming ফোরামে এক নববধূ জানান, তার হবু শাশুড়ি বিয়ের অনুষ্ঠানে প্রায় একই রকম পোশাক পরে হাজির হন, যা ছিল কনের পোশাকের সঙ্গে একেবারেই মিলে যাওয়া। এমনকি বিয়ের আগের রাতে জোরে কেঁদে ছেলেকে পছন্দ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন।

মনস্তাত্ত্বিকরা মনে করেন, এমন পরিস্থিতি স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে আস্থার অভাব ও পারিবারিক সীমারেখা স্পষ্ট না থাকার ফল। নতুন সংসারে গোপনীয়তা ও পারস্পরিক সম্মান বজায় রাখতে হলে দু’জনেরই সমঝোতা জরুরি। নচেৎ ছোট্ট একটি চাবি থেকেই বড় দাম্পত্য সংকটের সূত্রপাত হতে পারে। শাশুড়ির হাতে বাড়ির অতিরিক্ত চাবি দেওয়ার মতো ঘটনা শুধু পারিবারিক টানাপড়েনই নয়, এর গভীরে মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবও লুকিয়ে থাকে। দাম্পত্য সম্পর্কে বিশ্বাস ও ব্যক্তিগত সীমানা (personal boundary) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যখন এক পক্ষ অন্য পক্ষকে না জানিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেয়, তখন তা সঙ্গীর মধ্যে অবমূল্যায়নের অনুভূতি, নিরাপত্তাহীনতা এবং ক্ষোভ তৈরি করে। একইসঙ্গে, স্বামী যদি স্ত্রীর স্বাভাবিক উদ্বেগকে “ড্রামাটিক” বা “কন্ট্রোলিং” বলে উড়িয়ে দেন, তা মানসিক অবমাননার শামিল। দীর্ঘমেয়াদে এই ধরনের আচরণ আত্মমর্যাদার ক্ষয়, যোগাযোগে ভাঙন এবং সম্পর্কের ভরসার ভিত্তি দুর্বল করে দেয়।