আজকাল ওয়েবডেস্ক: সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে যখন প্রতিদিনই কিছু না কিছু ভাইরাল ভিডিও চমকে দেয়, ঠিক তখনই এক অদ্ভুত ও মজার ভিডিও ঝড় তুলেছে ইন্টারনেটে। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, এক ব্যক্তি নদীর ধারে বা পাহাড়ি অঞ্চলে পাথর ভেঙে কিছু খুঁজছেন—সম্ভবত জীবাশ্ম। হঠাৎই তিনি একটি কঠিন শিলাখণ্ড ভেঙে ফেলতেই ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে এক লম্বা, নরম, রাবারের মতো দেখতে বস্তু। মুহূর্তেই হতভম্ব হয়ে যান তিনি, তারপর হাসিতে ফেটে পড়েন। সেই দৃশ্যই এখন নেট দুনিয়ায় হাসির খোরাক।

ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়তেই নেটিজেনদের কৌতূহল তুঙ্গে। অনেকেই চোখ কপালে তুলে বলেছেন, এ যেন “পাথরের ভেতর প্রাগৈতিহাসিক কন্ডোম!” কেউ মজা করে লিখেছেন, “ডাইনোসর যুগেও নিরাপত্তা আগে!”—আবার কেউ বলেছেন, “ইতিহাসের সবচেয়ে নিরাপদ আবিষ্কার!” সোশ্যাল মিডিয়ায় হাজারো মন্তব্য, রসিকতা ও মিম তৈরি হয়েছে এই রহস্যময় বস্তুকে ঘিরে।

তবে বিতর্কও থেমে থাকেনি। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, এটি কি সত্যিই কোনও প্রাচীন জীবাশ্ম, নাকি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) দিয়ে তৈরি কোনও সাজানো দৃশ্য? বিষয়টি নিয়ে আলোচনা ছড়িয়ে পড়ে বিজ্ঞানমহলেও।

আরও পড়ুন: বয়স্ক রোগীর সামনে মিনিস্কার্ট পরে উদ্দাম নাচ নার্সের, ভিডিও দেখে অগ্নিশর্মা নাগরিকরা
 

অবশেষে মার্কিন জীবাশ্মবিদ ড. অ্যালিসন জনসন ইনস্টাগ্রামে স্পষ্ট করে জানান, ভিডিওটিতে দেখা বস্তুটি আদতে কোনও কন্ডোম নয়, বরং প্রাচীন সামুদ্রিক প্রাণী বেলেমনাইট-এর জীবাশ্ম। তিনি লিখেছেন, “এটি একটি বেলেমনাইট, যা প্রায় ২০ কোটি বছর আগের জুরাসিক যুগের সামুদ্রিক প্রাণী। এটি স্কুইড বা ঝিনুক পরিবারের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ছিল।”

বেলেমনাইটদের দেহের ভিতরে থাকত এক বিশেষ কঠিন অংশ, যাকে বলা হয় ‘গার্ড’। সেটিই পরবর্তীকালে জীবাশ্মে রূপ নেয় এবং শিলার মধ্যে আটকে যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাথরের আস্তরণ সরলে সেটির আকৃতি ও রঙ এমনভাবে ফুটে ওঠে যে দেখতে রাবারের মতো মনে হয়। ফলে অনেক সময়েই সাধারণ চোখে তা আধুনিক কোনও বস্তু বলে ভুল হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রকৃতির এই ধরনের অদ্ভুত কৌতূহল নতুন নয়। মাঝে মধ্যেই এমন কিছু জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয় যা প্রথম দেখায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। কিন্তু বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণে বেরিয়ে আসে চমকপ্রদ তথ্য—পৃথিবীর অতীত জীবনের এক দুর্লভ ঝলক।

তাই নেটিজেনরা যদিও মজা করে একে “ডাইনোসরের কন্ডোম” বলেছেন, সত্যিটা আসলে অনেক বেশি আকর্ষণীয়। এটি আমাদের নিয়ে যায় কোটি কোটি বছর পেছনে, এমন এক সমুদ্রজগতের দিকে, যেখানে আজকের মতো প্রাণচাঞ্চল্য ছিল, শুধু রূপটাই ছিল ভিন্ন। এই ভাইরাল ভিডিও তাই যেমন হাসির খোরাক জুগিয়েছে, তেমনই মনে করিয়ে দিয়েছে—প্রকৃতির রহস্য কখনও কল্পনার চেয়েও বিস্ময়কর।