আজকাল ওয়েবডেস্ক: দ্রুত নগরায়ন, বেসরকারি যানবাহনের ব্যবহার কমানোর প্রচেষ্টা এবং কম নির্গমনযুক্ত কার্যকর গণপরিবহন ব্যবস্থার প্রয়োজন। এই তিনটি কারণেই ২১ শতকে মেট্রো রেল এখন আধুনিক শহরগুলোর প্রাণস্বরূপ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মেট্রো নেটওয়ার্ক শুধু চলাচলের মাধ্যম নয়, বরং টেকসই নগর উন্নয়নের প্রতীক হয়ে উঠেছে। 


চীন: বিশ্বের বৃহত্তম মেট্রো নেটওয়ার্ক
২০২৫ সালের হিসাব অনুযায়ী, চীনের মেট্রো নেটওয়ার্ক বিশ্বের সবচেয়ে বড়, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ১১,০০০ কিলোমিটার, এবং এটি প্রায় ৫০টি শহরকে সংযুক্ত করেছে। এই দ্রুত সম্প্রসারণ চীনের বিরাট পরিকল্পনার একটি অংশ। বেইজিং, সাংহাই ও গুয়াংজু এই বিশাল পরিবহন নেটওয়ার্কের কেন্দ্রে রয়েছে। শুধুমাত্র বেইজিং মেট্রো-র দৈর্ঘ্যই ৮৭৯ কিলোমিটার, এতে ৪২৪টি স্টেশন রয়েছে এবং এটি বছরে ৩.৬ বিলিয়নেরও বেশি যাত্রী পরিবহন করে। চীনের মেট্রো শুধু গতি নয়, প্রযুক্তি, সময়নিষ্ঠা এবং পরিষেবার দিক থেকেও আদর্শ স্থাপন করেছে।


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র: প্রাচীনতম ও বৃহৎ সাবওয়ে ব্যবস্থা
চীনের পরে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যদিও এর নেটওয়ার্কের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম। প্রায় ১,৩০০ থেকে ১,৫০০ কিলোমিটার। বিশ্বের প্রাচীনতম সাবওয়ে ব্যবস্থাগুলোর একটি এটি। নিউ ইয়র্ক সাবওয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় মেট্রো সিস্টেম, যেখানে ৪২৪টি স্টেশন এবং বছরে প্রায় ২ বিলিয়ন যাত্রী যাতায়াত করে। নিউ ইয়র্কের পাশাপাশি বোস্টন, শিকাগো ও ওয়াশিংটন ডিসি শহরেও উন্নত মেট্রো ব্যবস্থা রয়েছে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নগর জীবনের মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করে।


ভারত: দ্রুত সম্প্রসারণশীল মেট্রো নেটওয়ার্ক
ভারত বর্তমানে মেট্রো রেল সম্প্রসারণে বিশ্বের অন্যতম দ্রুত অগ্রসর দেশ। বর্তমানে দেশজুড়ে মোট মেট্রো লাইনের দৈর্ঘ্য ১,৩০০ কিলোমিটারের বেশি। দিল্লি মেট্রো ভারতের বৃহত্তম, এবং এটি দেশের রাজধানীর দৈনন্দিন যাত্রার প্রধান ভরসা। কলকাতা, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, চেন্নাই ও পুনে শহরেও আধুনিক মেট্রো সেবা চালু হয়েছে। 

আরও পড়ুন: মৃত্যুর সময় কেমন অনুভূতি হয়, গবেষণার তথ্য দেখে মাথায় হাত বিজ্ঞানীদের


জাপান: সময়নিষ্ঠ ও প্রযুক্তির মডেল
জাপানের মেট্রো ব্যবস্থা বিশ্বজুড়ে পরিচিত তার সময়নিষ্ঠ ও নির্ভুলতার জন্য। টোকিও ও ওসাকা শহরের মেট্রো মিলিয়ে প্রায় ৯০০ কিলোমিটার দীর্ঘ। প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ এই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে। বিশেষ করে টোকিও মেট্রো, যেখানে দৈনিক প্রায় এক মিলিয়নেরও বেশি যাত্রী চলাচল করে, বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ততম ও সুশৃঙ্খল মেট্রো সিস্টেম হিসেবে বিবেচিত।


দক্ষিণ কোরিয়া: প্রযুক্তিনির্ভর যাত্রা
দক্ষিণ কোরিয়ার মেট্রো নেটওয়ার্কের দৈর্ঘ্য প্রায় ৭৬০ কিলোমিটার। রাজধানী সিওল মেট্রো বিশ্বের দীর্ঘতম ও সবচেয়ে ব্যস্ত মেট্রোগুলোর একটি, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৪০০ কিলোমিটার, এবং বছরে প্রায় ২.৩ বিলিয়ন যাত্রী এটি ব্যবহার করে। কোরিয়ার মেট্রোতে উচ্চমানের ডিজিটাল নিরাপত্তা, ওয়াই-ফাই সংযোগ এবং উন্নত টিকিটিং ব্যবস্থা রয়েছে।


রাশিয়া: শিল্পকলা ও স্থাপত্যের অনন্য উদাহরণ
রাশিয়ার মেট্রো নেটওয়ার্ক মূলত মস্কো ও সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে কেন্দ্রীভূত। এর মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৭৩০ কিলোমিটার। বিশেষ করে মস্কো মেট্রো তার অসাধারণ স্থাপত্য সৌন্দর্য ও শৈল্পিক নকশা-র জন্য বিখ্যাত। অনেক স্টেশনই “আন্ডারগ্রাউন্ড মিউজিয়াম” নামে পরিচিত।


স্পেন: ইউরোপের অন্যতম উন্নত মেট্রো সিস্টেম
স্পেনের মেট্রো নেটওয়ার্ক প্রায় ৪৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ, যার প্রধান ব্যবস্থা রয়েছে মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা শহরে। আধুনিক প্রযুক্তি, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও নির্ভরযোগ্য সেবা স্পেনের মেট্রোকে ইউরোপের সেরা নগর পরিবহন ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে স্থান দিয়েছে।


চীন থেকে স্পেন পর্যন্ত, বিশ্বের এই সাতটি দেশ প্রমাণ করেছে যে মেট্রো রেল শুধু যানবাহন নয়, এটি টেকসই নগর জীবনের রক্তসঞ্চালন ব্যবস্থা। দ্রুততা, পরিবেশবান্ধবতা এবং নাগরিকদের সময় সাশ্রয়। এই তিন বৈশিষ্ট্যই মেট্রোকে ভবিষ্যতের শহর গঠনের মূল চালিকাশক্তি করে তুলেছে।