আজকাল ওয়েবডেস্ক: মায়ানমারে ভূমিকম্পের সপ্তাহ অতিক্রান্ত হয়নি এখনও। কম্পনের আঁচ পড়েছে থাইল্যান্ডেও। এরই মাঝে আশঙ্কার বাণী শোনালো জাপান। সে দেশের সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী, নানকাই ভূতাত্ত্বিক খাত বরাবর ‘মহাকম্প’ হয়ে কাঁপতে পারে জাপান। এর ফলে রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা হতে পারে ৮ বা তারও বেশি। এর ফলে সুনামির সম্ভাবনাও রয়েছে। প্রাণ হারাতে পারেন প্রায় তিন লক্ষ মানুষ। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হতে পারে প্রায় দুই ট্রিলিয়ন ডলার।
গত ১,৪০০ বছর ধরে, নানকাই খাতে প্রতি ১০০ থেকে ২০০ বছরে একবার মহাভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। এর মধ্যে সর্বশেষটি ঘটেছিল ১৯৪৬ সালে। ২০১২-১৩ সালেও এই সম্ভাব্য ‘মহাকম্প’ নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল জাপানের সরকার। তখন সম্ভাব্য মৃত্যু সংখ্যা তিন লক্ষ ২৩ হাজার জন। বর্তমান পরিস্থিতিতে পর্যালোচনা করে জাপান সরকার মনে করছে, সেই মৃত্যুর সংখ্যা আরও কমাতে তারা সমর্থ হবে। প্রযুক্তি এবং আগে থেকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা করেই একমাত্র এটা সম্ভব। তাদের লক্ষ্য, ‘মহাকম্প’ হলে এই মৃত্যুর সংখ্যা ৮০ শতাংশ কমানো। বাড়ি ভেঙে পড়ার ঘটনাও ৫০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে তারা। বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের রিপোর্ট অনুযায়ী, আগামী ৩০ বছরের মধ্যে সেই মহাভূমিকম্পের সম্ভাবনা ৭৫ থেকে ৮২ শতাংশ। এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে দুই লক্ষ ১৫ হাজার মানুষ মারা যেতে পারে সুনামির ফলে, ৭৩ হাজার মৃত্য হতে পারে বাড়ি ধসে, নয় হাজার মৃত্যু হতে পারে অগ্নিকাণ্ডের ফলে।
নানকাই ভূতাত্ত্বিক খাতের দৈর্ঘ্য প্রায় ৮০০ কিলোমিটার। টোকিয়োর পশ্চিমে শিজুয়োকা থেকে দক্ষিণে কিয়ুশু দ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে সেটি। এই খাত আসলে দু’টি টেকটনিক পাতের সংযোগস্থল। জাপান যে পাতের উপর রয়েছে, ক্রমে তার নীচে প্রবেশ করছে ফিলিপাইন সাগর টেকটনিক পাত। বিশ্বের সবচেয়ে ভূমিকম্পপ্রবণ দেশগুলির মধ্যে একটি। শক্তিশালী ভূমিকম্প সহ্য করতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য কঠোর নির্মাণ নিয়মকানুন বাস্তবায়ন করেছে দেশটি। প্রায় সাড়ে ১২ কোটি মানুষের বসবাস দেশটিতে। প্রতিবছর গড়পড়তা দেড় হাজার কম্পন অনুভূত হয় জাপানে।
সাম্প্রতিক সময় জাপানে সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প হয়েছিল ২০১১ সালে। রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পের ফলে সুনামির উৎপত্তি হয়েছিল। সেই বিপর্যয়ে প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল বিপুল। ফুকুশিমা পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের তিনটি রিঅ্যাক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। যা কি না চেরনোবিলের বিপর্যয়ের পর বিশ্বে সবচেয়ে বড় পরমাণু বিপর্যয় ছিল। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল ১৬.৯ ট্রিলিয়ন ইয়েন (১১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। ২০২৪ সালে ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্পে ১৪ জনের মৃত্যুর পর প্রথম মহাকম্প নিয়ে সতর্কতা জারি করেছিল জাপান সরকার। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে এই বিপর্যয়ের ফলে দেশের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে ফেলতে হবে।
