আজকাল ওয়েবডেস্ক: পাকিস্তান সরকার প্রথমবার প্রকাশ্যে স্বীকার করল যে ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী বিমান হামলায় তাদের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি ও সেনার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শেহবাজ শরিফ সরকারের মন্ত্রী ভারতের নির্ভুল বিমান হামলার প্রভাব মেনে নিয়ে আগের অবস্থান থেকে সরে এলেন। 


এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী ও উপপ্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার জানান, ভারতের নির্ভুল এয়ার স্ট্রাইকে রাওয়ালপিন্ডির চাকালায় অবস্থিত নূর খান এয়ারবেস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি স্বীকার করেন, শুধু সামরিক পরিকাঠামোই নয়, সেখানে থাকা পাকিস্তানি সেনাও সেদিন আহত হয়েছিলেন। ইসহাক দার বলেন, ভারত পাকিস্তানের দিকে ড্রোন পাঠিয়েছিল। ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে অন্তত ৮০টি ড্রোন পাঠানো হয়। আমরা এর মধ্যে ৭৯টি ড্রোন প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছি। তবে একটি ড্রোন সামরিক বেসে আঘাত হানে এবং এতে আমাদের সেনা সদস্যরা আহত হন।


প্রসঙ্গত, ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পাহালগাঁওতে ভয়াবহ সন্ত্রাসবাদী হামলায় ২৬ জনের মৃত্যুর পর এর জবাবে ৭ মে ভোররাতে ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর অংশ হিসেবে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালায়। এই অভিযানের পর থেকেই দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে ওঠে।


ইসহাক দার আরও জানান, পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হতে থাকায় ৯ মে রাতে পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব এক জরুরি বৈঠকে বসে। তিনি দাবি করেন, ১০ মে ভোরে নুর খান এয়ারবেসে হামলা চালিয়েছে ভারত।


ভারতের এই কৌশলগত অভিযানে পাকিস্তান ও পিওকে-র মোট ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করা হয়। এর মধ্যে ছিল মুজফফরাবাদের সাওয়াই নালা ও সৈয়দনা বিলাল ক্যাম্প, কোটলির গুলপুর ও আব্বাস ক্যাম্প, ভিম্বেরের বারনালা ক্যাম্প, সিয়ালকোটের সারজাল ও মেহমুনা জোয়া ক্যাম্প, মুরিদকের মারকাজ তাইবা এবং বাহাওয়ালপুরের মারকাজ সুবহানাল্লাহ। লস্কর-ই-তইবার মুরিদকে ঘাঁটি ও জইশ-ই-মহম্মদের বাহাওয়ালপুর কেন্দ্র ছিল ভারতের প্রধান লক্ষ্য।


স্যাটেলাইট ছবিতে নূর খান এয়ারবেস, পিএএফ বেস মুশাফ, ভোলারি এয়ারবেস ও জ্যাকোবাবাদের শাহবাজ এয়ারবেসে হামলার স্পষ্ট প্রমাণ মিলেছিল। তবুও শুরুতে পাকিস্তান ভারতের সামরিক অভিযানের কথা অস্বীকার করে।


কয়েকদিন ধরে সীমান্তে গোলাবর্ষণ চলার পর অবশেষে পাকিস্তানের ডিরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশনস ভারতের ডিজিএমও-র কাছে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেন, যা ১০ মে গ্রহণ করা হয়।


উল্লেখযোগ্যভাবে, এবারেই প্রথম নয়। এর আগেও মে মাসে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ স্বীকার করেছিলেন যে ভারতের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নুর খান এয়ারবেস ও অন্যান্য এলাকায় আঘাত হেনেছে। এই স্বীকারোক্তি দুই দেশের সাম্প্রতিক উত্তেজনার বাস্তব চিত্র আরও স্পষ্ট করে তুলল।