আজকাল ওয়েবডেস্ক: মাত্র তিন সপ্তাহ আগেই আয়ারল্যান্ডে এসে পৌঁছেছিলেন। সেখানে পৌঁছেই নৃশংস অভিজ্ঞতার শিকার হলেন এক ভারতীয় নাগরিক। ৪০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তিকে এক দল অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি মিলে বেধড়ক মারধর করেছেন ডাবলিনের তাল্লাত এলাকায়। মুখে, হাতে-পায়ে আঘাত পেয়েছেন ওই ব্যক্তি। তাঁকে তাল্লাত ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

পুলিশের এক আধিকারিক দাঁড়িয়েছেন, “তাল্লাত গার্ডা (আইরিশ জাতীয় পুলিশ)-কে ১৯ জুলাই শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ডাবলিনের পার্কহিল রোডে একটি হিংসার ঘটনা নিয়ে অবহিত করা হয়েছিল। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ৪০ বছর বয়সী একজন পুরুষকে আহত অবস্থায় তাল্লাত বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।”

পুলিশ জানিয়েছে, একটি ফৌজদারি তদন্ত শুরু করা হয়েছে। যদিও এখনও পর্যন্ত কোনও সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। দ্য আইরিশ টাইমসের মতে, ওই ব্যক্তিকে আক্রমণকারীরা শিশুদের আশেপাশে অনুপযুক্ত আচরণ করার মিথ্যা অভিযোগ মারধর করেছিলেন। তবে পুলিশ জানিয়েছে, এই দাবিগুলির সমর্থনে কোনও প্রমাণ নেই।

এক প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করেছেন, ‘বর্ণবিদ্বেষী গোষ্ঠী’র হাতে আক্রান্ত হয়েছেন ওই ব্যক্তি। তাঁর ব্যাঙ্কের কার্ড, ফোন, জুতো এবং প্যান্ট ছিনতাই করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী ওই মহিলা বলেন, “আমি আমার শাশুড়ির কাছে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলাম, ঠিক তখনই দেখি ১৩ জন কিশোর, যার মধ্যে একজন মহিলাও ছিল, লোকটিকে ঘিরে ধরেছে। আমি দেখলাম লোকটি মাথা থেকে পা পর্যন্ত সম্পূর্ণ রক্তে ভেসে যাচ্ছে।”

আরও পড়ুন: বিশ্বে হাতে গোনা কয়েকজন শিশু এই রোগ আক্রান্ত, এবার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে পাওয়া গেল দেশের সর্বকনিষ্ঠকে

ঘটনার বর্ণনা দিতে দিতে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন ওই মহিলা। তিনি বলেন, “তার প্যান্ট টেনে নামানো হয়েছিল। তাকে বেত্রাঘাত করা হয়েছিল। ওই জানোয়ার গুলির জুতোয় থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের ফলে ওই ব্যক্তির মাথা থেকে রক্ত পড়ছিল। আর এই আক্রমণটি ঘটেছিল সন্ধ্যা ৬টায়।”

ওই মহিলা আরও জানিয়েছেন, দুষ্কৃতীরা ওই ব্যক্তিকে গুরুতর আহত অবস্থায় ফেলে রেখে দিয়ে চলে যায়। তিনি ওই ব্যক্তিকে সাহায্য করতে এগিয়ে যান। একটি চাদর দিয়ে অর্ধনগ্ন ব্যক্তিটিকে মুড়ে দেন। এবং জল দিয়ে সাহায্য করেন।

আয়ারল্যান্ডে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত অখিলেশ মিশ্র সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স (পূর্বতন টুইটার)-এ এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। আঘাতের তীব্রতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি নির্যাতিতের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আইরিশ পুলিশকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।

তাল্লাত দক্ষিণের স্থানীয় ফাইন গেল কাউন্সিলর বেবি পেরেপ্পাদান হাসপাতালে ওই ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করে জানান যে তিনি এতটাই মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত যে  কথা বলতে পারছেন না। তিনি আরও বলেন, "তিন সপ্তাহ আগে ওই ব্যক্তি আয়ারল্যান্ডে এসেছেন। এই মুহূর্তে তিনি কারও সঙ্গে দেখা করতে চাইছেন না।" তিনি আরও বলেন, “জনগণের বুঝতে হবে যে আয়ারল্যান্ডে আসা অনেক ভারতীয় কর্মী ওয়ার্ক পারমিটে এখানে আছেন, স্বাস্থ্যসেবা খাতে বা তথ্যপ্রযুক্তি ইত্যাদি ক্ষেত্রে পড়াশোনা এবং কাজ করার জন্য, গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা অর্জনের জন্য।”

বিচারমন্ত্রী জিম ও'ক্যালাগান অভিবাসীদের বিরুদ্ধে বর্ণগত প্রোফাইলিং এবং মিথ্যা অভিযোগের বিপদ তুলে ধরে বলেন, ঠক্রমবর্ধমান হারে আপনি এমন কথা শুনতে পাচ্ছেন যে লোকেরা অপরাধের জন্য অভিবাসীদের দোষারোপ করছে। আমি আপনাকে শুধু এটুকুই বলতে পারি: আমি পরিসংখ্যান চেয়েছি এবং যখন আপনি অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের কারাগারের জনসংখ্যার দিকে তাকান, তখন কারাগারে অভিবাসীদের পরিমাণ সমাজের অভিবাসীদের পরিমাণের তুলনায় কম। তাই এই কথার কোনও ভিত্তি নেই যে অভিবাসীদের অপরাধ করার সম্ভাবনা বেশি।”