আজকাল ওয়েবডেস্ক: গ্যালাপাগোসের অ্যালবাট্রস থেকে মেরু ভালুক, শিম্পাঞ্জি থেকে ওরাংওটাং—বিভিন্ন প্রাণীজগতে দেখা যায় চুম্বনের মতো আচরণ। এবার গবেষকরা বলছেন, বিলুপ্ত মানবপ্রজাতি নিয়ান্ডারথালরাও চুম্বন করত—এমনকি সম্ভবত আধুনিক মানুষের সঙ্গেও।
এটি প্রথমবার নয় যে বিজ্ঞানীরা নিয়ান্ডারথাল এবং প্রাচীন আধুনিক মানুষের মধ্যে ঘনিষ্ঠতার প্রমাণ খুঁজে পেয়েছেন। এর আগের গবেষণায় দেখা গেছে, দুই প্রজাতি বিলুপ্ত হওয়ার বহু আগেই তারা একই ধরনের মুখের ব্যাকটেরিয়া ভাগাভাগি করত, যা ইঙ্গিত দেয় লালার আদান-প্রদান হয়েছে—অর্থাৎ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তনবিদ ড. ম্যাটিল্ডা ব্রিন্ডেল, নতুন গবেষণাপত্রের প্রথম লেখক, বলেছেন—বিভিন্ন ব্যাখ্যা থাকলেও প্রমাণগুলো একটি সাধারণ সিদ্ধান্তের দিকেই ইঙ্গিত করছে।
“সম্ভবত তারা চুম্বন করছিল,” তিনি বলেন। “এটি মানুষের ডিএনএ-তে পাওয়া নিয়ান্ডারথাল জিনের সঙ্গেও মিলছে, যা তাদের মধ্যে মিলন ঘটেছিল বলে প্রমাণ করে।”
তিনি হেসে বলেন, “এতে নিয়ান্ডারথালদের ইতিহাসে খানিকটা রোমান্টিক রং যোগ হলো।”
গবেষণা জার্নাল Evolution and Human Behavior-এ প্রকাশিত এই কাজের জন্য প্রথমেই গবেষকদের চুম্বনের এমন একটি সংজ্ঞা দাঁড় করাতে হয়েছে, যা কেবল মানুষের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়।
ব্রিন্ডেল বলেন, “এতদিনের সংজ্ঞাগুলো মানুষকেন্দ্রিক ছিল, ফলে অন্যান্য প্রাণীদের আচরণ চুম্বনের পর্যায়ে পড়ত না। এখন আমরা জানি, অনেক প্রাণী চুম্বনের মতো আচরণ করে—যদিও মানুষের মতো নয়।”
তিনি জানান, চুম্বনের মতো কিছু আচরণ আসলে খাদ্য দেওয়া বা “কিস ফাইটিং”—যেমন ফ্রেঞ্চ গ্রান্টস নামে মাছের ক্ষেত্রে দেখা যায়—তাই এগুলো বাদে বন্ধুত্বপূর্ণ, মুখ-মুখে যোগাযোগ এবং মুখের নড়াচড়া থাকা আচরণকে তারা চুম্বন হিসেবে সংজ্ঞাবদ্ধ করেন।
গবেষকেরা আফ্রিকা ও এশিয়ার ওরাংওটাং, বনোবো এবং শিম্পাঞ্জিদের আচরণ বিশ্লেষণ করেন এবং ইউটিউব ভিডিও দিয়েও তা নিশ্চিত হন।
পরবর্তীতে জীবিত এবং বিলুপ্ত প্রাইমেটদের বিবর্তনীয় ডেটার সঙ্গে এসব আচরণের মিল খুঁজে দেখা হয়। ফলাফলে দেখা যায়—চুম্বনের আচরণ অত্যন্ত প্রাচীন, বড় বানরের পূর্বপুরুষদের মধ্যে আনুমানিক ২১.৫ থেকে ১৬.৯ মিলিয়ন বছর আগে এটি বিবর্তিত হয়।
এই বিবর্তনীয় বংশগতি অনুযায়ী নিয়ান্ডারথালরাও সেই আচরণের ধারক ছিল—এমন সম্ভাবনা অত্যন্ত জোরালো। আর আধুনিক মানুষ যেহেতু নিয়ান্ডারথালের সঙ্গে প্রজননে যুক্ত ছিল—তাই গবেষকদের মতে তাদের চুম্বনও ছিল সম্পূর্ণ স্বাভাবিক।
ব্রিন্ডেল আরও বলেন, চুম্বনের বিবর্তন নিয়ে বিতর্ক থাকলেও এটি যৌন আচরণে সঙ্গী বেছে নেওয়া, প্রজননের সাফল্য বৃদ্ধি এবং প্লেটোনিক সম্পর্কে বন্ধন শক্তিশালী করায় ভূমিকা রাখতে পারে।
গবেষণায় যুক্ত না থাকা ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃহৎ বানর আচরণবিশেষজ্ঞ ড. জেক ব্রুকার বলেন, “যেহেতু বহু প্রাইমেটে চুম্বনের আচরণ দেখা যায়, তাই এটি অত্যন্ত প্রাচীন একটি বিবর্তনীয় আচরণ—আরো প্রাণীর ক্ষেত্রে বিশ্লেষণ করলে সময়সীমা আরও পেছাতে পারে।”
ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবউৎপত্তি প্রত্নতত্ত্ববিদ পেনি স্পাইকিন্স বলেন, চুম্বনের সাংস্কৃতিক রূপ সব সমাজে সমান নয়। তবে তিনি যোগ করেন:
“মানুষ বেঁচে থাকে আবেগিক সম্পর্ক, বিশ্বাস এবং অন্তরঙ্গতার ওপর। তাই এমন আচরণ বহু মিলিয়ন বছর ধরে থাকা অপ্রত্যাশিত নয়। নিয়ান্ডারথালদের কঠোর, নির্মম রূপে ভাবতে আমরা অভ্যস্ত—কিন্তু বাস্তবতা হতে পারে তারা গল্পের চেয়ে নরম এবং মানবিক ছিল।”
গবেষকদের মতে—হয়তো ইতিহাসের শুরুতে মানুষের গল্প ছিল আরও মানবিক, আরও ঘনিষ্ঠ, এবং হয়তো আরও প্রেমময়।
