আজকাল ওয়েবডেস্ক: ১৬ বছর আগে ঘটে যাওয়া বিডিআর বিদ্রোহের দায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপরই চাপানো হল। বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) বিদ্রোহের তদন্তের জন্য গঠিত কমিশন দাবি করেছে যে, ক্ষমতাচ্যুত বাংলাদেশি প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে এই বিদ্রোহের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এছাড়াও ওই বিদ্রোহের নেপথ্যে ভারতের ইন্ধনের কথাও তুলে ধরেছে। 

উল্লেখ্য, নভেম্বর মাসে মানবতা বিরোধী অপরাধে যুক্ত থাকার অভিযোগে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে সেদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। 

গত বছর হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন বিডি আর বিদ্রোহের কারণ খতিয়ে দেখতে কমিশন গঠন করে। ২০০৯ সালে ঢাকায় শুরু হওয়া এবং দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়া বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) বিদ্রোহে ৭৪ জন নিহত হয়েছিলেন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাও।

কমিশনের প্রধান আলম ফজলুর রহমান অভিযোগ করেন যে, তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্রোহের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল। তিনি প্রাক্তন সংসদ সদস্য ফজলে নূর তাপসকে ওই বিদ্রোহের "প্রধান সমন্বয়কারী" হিসেবে অভিহিত করেন এবং দাবি করেন যে- তাপস হাসিনার "ইশারায়" কাজ করেছিলেন। হাসিনা ওই হত্যাকাণ্ড চালানোর জন্য "সবুজ সংকেত" দিয়েছিলেন।

ভারতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ
সরকারের প্রেস অফিস থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের রহমানের সারসংক্ষেপে ২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহে একটি অজ্ঞাত বিদেশি শক্তির জড়িত থাকার অভিযোগও করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, "তদন্তে একটি বিদেশি শক্তির জড়িত থাকার বিষয়টি স্পষ্ট।"

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বিডিনিউজ২৪-এর উদ্ধৃতি অনুসারে রহমান বলেছেন, "ষড়যন্ত্রের লক্ষ্য ছিল এই বাহিনীকে দুর্বল করা এবং বাংলাদেশকে অস্থির করে তোলা। বিডিআর হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পর, সরকার তার ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চেয়েছিল, এবং প্রতিবেশী দেশ (ভারত) বাংলাদেশকে অস্থির করতে চেয়েছিল।"

যে প্রতিবেশী দেশটির কথা উল্লেখ করছেন তা স্পষ্ট করার জন্য চাপ দেওয়া হলে, কমিশনের প্রধান আলম ফজলুর রহমান বলেন যে- সেটি ভারত। রিপোর্টে উল্লেখ, "সেই সময়ে প্রায় ৯২১ জন ভারতীয়, বাংলাদেশে এসেছিলেন। এই ভারতীয়দের মধ্যে ৬৭ জনের অবস্থান অজানা।" ওই ঘটনায় ভারতের জড়িত থাকার প্রমাণ হিসাবে যা বড় ইঙ্গিত।

ভারত এই অভিযোগের কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। 

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশে ব্যাপক সরকারবিরোধী বিক্ষোভের পর হাসিনা ভারতে চলে আসেন। সেই থেকেই ঢাকা এবং নয়াদিল্লির মধ্যে সম্পর্ক বেশ তিক্ত হয়ে পড়েছে।

এদিকে, ইউনূস কমিশনের অনুসন্ধানকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, "কমিশনের প্রতিবেদনের মাধ্যমে, অবশেষে সত্য প্রকাশ পেয়েছে।" 

ঢাকা, হাসিনার প্রত্যর্পণের জন্য চাপ দিচ্ছে
ভারত "যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসিনাকে" প্রত্যর্পণ করবে, বিদ্রোহের অভিযোগের পাশাপাশি, বাংলাদেশ রবিবার আবারও এই দাবি জানিয়েছে। বিদেশ বিষয়ক উপদেষ্টা মহম্মদ তৌহিদ হোসেন ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেছেন যে, হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়টি অগ্রাধিকার হিসাবে রয়ে গিয়েছে। তাঁর কতায়, "আমি মনে করি আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কেবল একটি ইস্যুতে আটকে থাকবে না। যেহেতু হাসিনা এখন একজন দোষী সাব্যস্ত অপরাধী, তাই বাংলাদেশ চাইছে বারত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাঁকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে দিক।"  

গত বছর ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভের উপর তার সরকারের দমন-পীড়ন "মানবতাবিরোধী অপরাধের" জন্য ১৭ নভেম্বর হাসিনাকে তাঁর অনুপস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। জুলাইয়ের বিদ্রোহের ফলে ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়, এর পরই  তিনি ভারতে আশ্রয় নেন। পরে বাংলাদেশের একটি আদালত তাঁকে পলাতক হিসেবে ঘোষণা করে।