আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতীয় রেলের কথা উঠলেই যাত্রীদের ভিড়ে ঠাসা কামরাই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সকলের। কেন হবে না! নিত্যদিন যেমন হাজার হাজার ট্রেন চলাচল করে, তেমনই লক্ষাধিক মানুষ সেই ট্রেনেই যাতায়াত করেন। যাতায়াতের মূল পথ এখনও ট্রেন অনেকের কাছে।
তথ্য অনুযায়ী, ভারতীয় রেলের অধীনে দেশজুড়ে সাত হাজর ৩০৮ -এর বেশি রেল স্টেশন রয়েছে। নিত্যদিন ১৩ হাজারের বেশি রেল চলাচল করে। যার মধ্যে লোকাল ট্রেন ও দূরপাল্লার ট্রেন, উভয়ই রয়েছে। জানা গেছে, শুধুমাত্র রেলপথেই ২০ মিলিয়ন মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করেন। সবচেয়ে কম খরচে যাতায়াতের অন্যতম উপায় এই রেল।
উৎসবের মরশুমে লোকাল ট্রেন, দূরপাল্লার ট্রেনে ভিড়ের মাত্রা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। অনেকেই ছুটিতে কাছের মানুষদের কাছে ফেরেন। কেউ আবার ঘুরতে যান। তাই ট্রেনের টিকিট পাওয়াও দুর্বিষহ হয়ে ওঠে বহু মানুষের কাছে। ওয়েটিং লিস্টে নাম থাকা সত্ত্বেও ট্রেনে চেপে যান অনেকে। এই পরিস্থিতিতে ভেবে দেখুন, একটি ট্রেনে শুধুমাত্র একজন যাত্রী। সেই একজন যাত্রীকে নিয়েই রোজ চলাচল করত ট্রেন! ভারতের রেল যাত্রীদের কাছে এই কাহিনি অবিশ্বাস্যই মনে হবে।
জাপানের রেল পরিষেবা:
ঘটনাটি আদতে ঘটেছে জাপানে। এই দেশের হোক্কাইডো দ্বীপে বছরের পর বছর একটি ট্রেন শুধুমাত্র একজন যাত্রীর জন্য চলাচল করেছে। গোটা ট্রেনে শুধুমাত্র এক কিশোরী ছিলেন যাত্রী। শুধু তার জন্যেই রোজ নির্দিষ্ট সময়ে ট্রেন আসত স্টেশনে। আবার সন্ধ্যায় ওই স্টেশনে নামিয়ে দাঁড়াত একজন যাত্রীর জন্য।
হোক্কাইডোর কোন স্টেশনের কাহিনি?
হোক্কাইডো দ্বীপের কিউ-শিরাতাকি স্টেশনটি ২০১৬ সাল পর্যন্ত চালু ছিল কেবলমাত্র একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রীর জন্য। কম যাত্রী এবং কোনও মালবাহী পরিষেবা না থাকায়, জাপান রেলওয়ে স্বল্প ব্যবহৃত এই স্টেশনটি বন্ধ করার পরিকল্পনা করেছিল। কোনও লাভ হত না এই লাইনে ট্রেন চলাচল করে। যখন রেলের তরফে সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছিল, তখন শুধুমাত্র আপত্তি জানিয়েছিলেন ওই স্কুল পড়ুয়া।
স্কুল পড়ুয়ার পরিচয়:
হোক্কাইডো দ্বীপের কিউ-শিরাতাকি স্টেশনের কাছেই থাকত কানা হারাদা নামের ওই স্কুল পড়ুয়া। সেই রেল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছিল, ট্রেন পরিষেবা চালু না থাকলে, তার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে। আর কখনও সে স্কুলে যেতে পারবে না। যদি ট্রেন লাইন চালু না থাকত, তাহলে কিশোরী কানাকে স্কুলে যাওয়ার জন্য এক্সপ্রেস ট্রেন ধরতে ৭৩ মিনিট হেঁটে যেতে হত।
অবশ্য কিউ-শিরাতাকি স্টেশন খোলা থাকা সত্ত্বেও, তার যাতায়াত কঠিনই ছিল। প্রতিদিন মাত্র চারটি ট্রেন যাতায়াত করত স্টেশন দিয়ে, যার মধ্যে মাত্র দু'টি তার স্কুলের সময়ের সঙ্গে মিলে গিয়েছিল। বেশিরভাগ সময়েই ওই ট্রেনে শুধুমাত্র কিশোরী কানাই যাতায়াত করত। ট্রেন পরিষেবা বন্ধ করার আগে, ওই এলাকায় আচমকাই জনসংখ্যা কমে যায়। মাত্র ৩৬ জনের বসবাস ছিল ওই এলাকায়। শুধু কিশোরী ছাত্রীর আবেদনে সাড়া দিয়ে তিন বছর বিনা লাভেই ট্রেন পরিষেবা চালু রেখেছিল জাপান রেল কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, ছাত্রীটি স্নাতক হওয়ার পর এবং শিক্ষাবর্ষ শেষ হওয়ার পর ২০১৬ সালের মার্চ মাসে স্টেশনটি বন্ধ হয়ে যায়। এই কাহিনি বিশ্বজুড়ে শিরোনামে জায়গা করে নিয়েছিল। যে কাহিনি আজও জাপানের মানুষকে আবেগপ্রবণ করে তোলে। শুধু লাভের কথা না ভেবে, কীভাবে মানুষের জন্য পরিষেবা চালু রাখতে পারে সরকার, শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতে পারে, এ যেন তারই উজ্জ্বল উদাহরণ।
