আজকাল ওয়েবডেস্ক: সবচেয়ে ছোট এইচআইভি আক্রান্তের বয়স মাত্র দশ। হ্যাঁ, এই ছোট শিশুটির খোঁজ পান প্রাক্তন যৌনকর্মী এবং সমাজসেবী সেসেনিয়েলি নাইটালা। ২০১৩ সালে তিনি যখন ফিজির সারভাইভাল অ্যাডভোকেসি নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করেন, তখনও সেই শিশুটির জন্ম হয়নি। আজ, শিশুটি হাজার হাজার ফিজিবাসীর মধ্যে একজন যারা এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত। অনেক ক্ষেত্রে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যেও এই ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে।  যে প্রায়শই মাদকের অপব্যবহারের কারণে হচ্ছে। নাইতালার সংস্থা ফিজির রাজধানী সুভায় যৌনকর্মী এবং মাদক ব্যবহারকারীদের সহায়তা করে থাকে। তিনি বিবিসিকে বলেন, “তরুণদের মধ্যে মাদকের ব্যবহার বাড়ছে।”

গত পাঁচ বছরে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র ফিজিতে এইচআইভি মহামারির আকার ধারণ করেছে। দেশটির জনসংখ্যা ১০ লক্ষেরও কম। ২০১৪ সালে দেশে এইচআইভিতে আক্রান্ত ছিলেন ৫০০ জনেরও কম। ২০২৪ সালের মধ্যে এই সংখ্যা প্রায় ৫,৯০০-এ পৌঁছেছে। এগারো গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধুমাত্র ২০২৪ সালেই দেশে ১,৫৮৩টি নতুন সংক্রমণ রেকর্ড করা হয়েছিল। যা পাঁচ বছরের গড়ের তুলনায় ১৩ গুণ বেশি। এই সংক্রমিতদের মধ্যে ১৫ বছর বা তার কম বয়সী শিশুর সংখ্যা ৪১। যা ২০২৩ সালে ছিল ১১টি। 

ফিজির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানুয়ারিতে এইচআইভি প্রাদুর্ভাব ঘোষণা করেছিলেন। সম্প্রতি, সহকারী স্বাস্থ্যমন্ত্রী পেনিওনি রাভুনাওয়া সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ দেশে তিন হাজারেরও বেশি নতুন ঘটনা দেখা যেতে পারে। তিনি জানিয়েছেন, এটি একটি জাতীয় জরুরি অবস্থা এবং এটি কমার কোনও লক্ষণ নেই।”

আরও পড়ুন: পাকিস্তানকে কোনও ক্ষেপনাস্ত্র বিক্রি করা হচ্ছে না, জানাল আমেরিকা, কপাল চাপড়াচ্ছে ইসলামাবাদ!

বিশেষজ্ঞরা এইচআইভির সংক্রমণ বৃদ্ধির নেপথ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং এইচআইভি সম্পর্কে কুসংস্কার হ্রাসকে দায়ী করছেন। যার ফলে আরও বেশি লোক পরীক্ষা করাতে উৎসাহিত হচ্ছে। তবুও অনেক সংক্রমণের খবর পাওয়া না যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যা ইঙ্গিত দেয় যে সংক্রমণের হার সরকারি পরিসংখ্যানের চেয়ে অনেক বেশি।

বিশেষজ্ঞদের মত, এই মহামারির একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ, অনিরাপদ মাদক ও যৌন অভ্যাসের বৃদ্ধি। বিশেষ করে উদ্বেগজনক একটি প্রবণতা হলো ‘ব্লুটুথিং’, যেখানে একজন শিরাপথে মাদক ব্যবহারকারী একটি ডোজ ইনজেকশন দেওয়ার পর রক্ত ​​টেনে অন্য ব্যক্তিকে সেই সিরিঞ্জ দিয়ে দেন, ওই ব্যক্তি সেটি ব্যবহার করে অন্য একজনকে দিয়ে দিলেন। এভাবেই চলতে থাকে গোটা প্রক্রিয়া। ড্রাগ ফ্রি ফিজির নির্বাহী পরিচালক কালেসি ভোলাতাবু গত মে মাসে এই ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করেছিলেন। সুভায় সকালের হাঁটার সময় তিনি একদল তরুণকে একসঙ্গে জড়ো হয়ে একটি সিরিঞ্জ দিয়ে নিজেদের দেহে রক্ত ​​প্রবাহিত করেছিলেন। তাঁকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তরুণরা শুধু একটি মাত্র সূঁচ ব্যবহার করছিলেন তাই নয়, তাঁরা রক্তও ভাগাভাগি করে নিচ্ছিলেন।”

দক্ষিণ আফ্রিকা এবং লেসোথোতে পূর্বে রিপোর্ট করা এই পদ্ধতিটি সম্প্রতি ফিজিতে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এটি তুলনায় সস্তা। একাধিক ব্যবহারকারী একটি সিরিঞ্জ ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কারণ নিয়মের বেড়াজালে সূঁচ এবং সিরিঞ্জ পাওয়া কঠিন। ফিজির স্বাস্থ্য মন্ত্রক ব্লুটুথিং এবং কেমসেক্স (যৌন কার্যকলাপের আগে বা সময় মেথামফেটামিনের মতো ওষুধ ব্যবহার) -কে এইচআইভির হার বৃদ্ধির মূল কারণ হিসাবে চিহ্নিত করেছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, ফিজিতে ক্রিস্টাল মেথ বেশিরভাগই শিরাপথে ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করানো হয়। ২০২৪ সালের প্রথম নয় মাসে রিপোর্ট করা ১,০৯৩টি নতুন এইচআইভি কেসের মধ্যে, প্রায় ২০ শতাংশ ইনজেকশনের মাধ্যমে ড্রাগ সেবন করেছিল।

পূর্ব এশিয়া ও আমেরিকার প্রধান উৎপাদক এবং অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের লাভজনক বাজারের মধ্যে অবস্থানের কারণে ফিজি গত ১৫ বছরে ক্রিস্টাল মেথ পাচারের একটি আঞ্চলিক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এই মাদক স্থানীয়দের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে। সমাজসেবীরা জানিয়েছেন, ব্যবহারকারীদের বয়স ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে।

জাতীয় এইচআইভি তথ্য অনুযায়ী, ৪৮ শতাংশ সংক্রমণ ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক ব্যবহারের কারণে, ৪৭ শতাংশ যৌন সংক্রমণের কারণে এবং বেশিরভাগ শিশুর ক্ষেত্রে মা থেকে শিশুর দেহের সংক্রমণের কারণে ঘটেছে। ভোলাতাবু এবং নাইতালা উভয়েই জোর দিয়ে বলেন যে, শিক্ষার অভাব মহামারির একটি মূল কারণ এবং তাদের সংস্থাগুলি সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করছে।

নিউজিল্যান্ডের ক্যান্টারবেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাসিফিক রিজিওনাল সিকিউরিটি হাবের প্রধান হোসে সুসা-সান্তোস একটি আসন্ন বিপর্যয়ের বিষয়ে সতর্ক করে বলেছেন, “উদ্বেগ কেবল বর্তমান সঙ্কট নিয়ে নয়, পরবর্তী তিন বছর নিয়েও। এই মহামারি সামলানোর জন্য ফিজির কাছে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাকর্মী, চিকিৎসার সুযোগ এবং অন্যান্য জরুর ব্যবস্থার অভাব রয়েছে।”