আজকাল ওয়েবডেস্ক: ইতালির নেপলস শহরের একটি গির্জায় ৩০৫ খ্রিস্টাব্দে নিহত এক সাধুর শুকনো রক্ত তরল হয়ে গিয়েছে। যা ভক্তদের কাছে একটি ‘অলৌকিক ঘটনা’ হিসেবে বিবেচিত হয়। সেন্ট জানুয়ারিয়াসের রক্তের এই আচার অনুষ্ঠানটি শত শত বছর ধরে পালিত হয়ে আসছে। সাধুর রক্ত দু’টি সিল করা কাঁচের শিশিতে ডুওমো ডি সান্তা মারিয়া আসুন্তা গির্জায় রাখা আছে এবং বিশেষ অনুষ্ঠানে একজন বিশপ বা ক্যাথলিক পুরোহিত এটি বের করে আনেন। যদি রক্ত তরল হয়ে যায়, তবে এটিকে শুভ লক্ষণ বলে মনে করা হয়। তবে, যদি এটি তরল না হয়, তবে দুর্যোগ ডেকে আনবে বলে বিশ্বাস করা হয়।
নেপলসের আর্চবিশপ ডোমেনিকো বাত্তাগ্লিয়া বলেন, “স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ১৩ মিনিটে রক্তটি ইতিমধ্যেই অর্ধ-তরল অবস্থায় দেখা যাচ্ছিল।” দ্য ডেইলি মেলের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সকাল ১০টা ০৫ মিনিটের মধ্যে গির্জা ঘোষণা করে যে এটি সম্পূর্ণরূপে তরল হয়ে গিয়েছে।
জানা গিয়েছে, শিশিতে থাকা রক্ত তরলে পরিণত হতে কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। দু’টি শিশিতে থাকা পদার্থটি গাঢ় লাল হয়ে যায় এবং বুদবুদ উঠতে শুরু করে। ফাদার সেই আধারের ধারকটি হাতে নেন, যার ভিতরে শিশিগুলি রাখা আছে এবং সেটিকে সামান্য কাত করেন। এতে ভক্তরা রক্তটি ভালভাবে দেখতে পান। এরপর আট দিনের জন্য সেগুলিকে বাইরে রাখা হয় যাতে সবাই দেখতে পান। পরে, এটিকে ট্রেজারি চ্যাপেলের ভিতরে একটি সুরক্ষিত ভল্টে রেখে দেওয়া হয়।
এই আচারটি প্রথম পালিত হয়েছিল ১৩৮৩ সালে। যদিও অনেকে মনে করেন এটি আরও অনেক আগে শুরু হয়ে থাকতে পারে। সেন্ট জানুয়ারিয়াসকে নেপলসের রক্ষাকর্তা হিসেবে গণ্য করা হয়। আর্চবিশপ বাত্তাগ্লিয়া তাঁর ধর্মোপদেশে বলেন, “এই রক্তের প্রতিটি ফোঁটা আমাদের ঈশ্বরের ভালোবাসার কথা বলে। এই রক্ত হল যীশু খ্রিস্টের রক্ত। তাঁর যন্ত্রণার একটি প্রতীক।”
তবে, বিজ্ঞানীরা এটিকে অলৌকিক ঘটনা হিসেবে ব্যক্ত করতে রাজি নন। তাঁদের দাবি, রক্তটিতে সম্ভবত এমন একটি উপাদান রয়েছে যা এটিকে তরলে পরিণত করে। অতীতে কয়েকটি বিশ্লেষণ করা হয়েছে, কিন্তু এটি রক্ত ছিল নাকি মানুষের তৈরি কোনও মিশ্রণ, সে বিষয়ে কখনও কোনও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি। কিন্তু ভক্তরা এটিকে একটি অলৌকিক ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করেন। আর্চবিশপ বাত্তাগ্লিয়াও সতর্ক করে দিয়েছেন যে, এটিকে নিছক কুসংস্কার হিসেবে দেখা উচিত নয়।
লোকগাঁথা অনুযায়ী, সেন্ট জানুয়ারিয়াসকে তাঁর কয়েকজন সঙ্গীর সঙ্গে একটি ভালুকের খাঁচায় ফেলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পশুরা তাদের আক্রমণ করেনি। এরপর তাদের শিরশ্ছেদ করা হয় এবং তাঁদের রক্ত নেপলসে আনা হয়। সেই থেকে স্থানীয়রা তাঁকে তাঁদের রক্ষাকর্তার মর্যাদা দিয়েছেন। একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে, ১৯৪৩ সালে নাৎসি দখলদারির সময় এবং ১৯৮০ সালের ইরপিনিয়া ভূমিকম্পের সময় রক্তটি তরল হয়নি। ২০১৬ সালে এবং তারপর ২০২০ সালে কোভিড-১৯ অতিমারির সময় এটি শুকিয়ে গিয়েছিল।
