আজকাল ওয়েবডেস্ক: আন্টার্কটিকার থোয়াইটস গ্লেসিয়ার—যাকে ‘ডুমসডে গ্লেসিয়ার’ নামেও ডাকা হয় ঘিরে উদ্বেগ ক্রমশ গভীর হচ্ছে। ২০০২ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, এই বিশাল হিমবাহের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিয়ার জোনের চারপাশে লাগাতার ফাটল তৈরি হচ্ছে, যা এর গঠনগত স্থিতিশীলতাকে মারাত্মকভাবে দুর্বল করে দিচ্ছে।


কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ম্যানিটোবার একদল গবেষক তাঁদের গবেষণাপত্রে জানিয়েছেন, গত দুই দশকে থোয়াইটস আইস শেলফের একটি প্রধান পিনিং পয়েন্টের উজানে অবস্থিত শিয়ার জোনের চারপাশে ক্রমাগত ভাঙন ধরেছে। তাঁদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ফাটলের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ১০০ মাইল থেকে বেড়ে ২০০ মাইলেরও বেশি হয়েছে। যদিও গড় দৈর্ঘ্য খুব বেশি না বাড়ায় গবেষকরা মনে করছেন, গ্লেসিয়ারের উপর নতুন ধরনের প্রবল চাপ কাজ করছে, যা পরিস্থিতিকে আরও বিপজ্জনক করে তুলছে।


আন্তর্জাতিক থোয়াইটস গ্লেসিয়ার কল্যাবোরেশনর আরেকটি গবেষণাতেও একই ধরনের আশঙ্কার কথা উঠে এসেছে। সেখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, আইস শেলফে তৈরি হওয়া বড় বড় ফাটল গ্লেসিয়ারের কাঠামোগত শক্তিকে ক্রমশ ক্ষয় করে দিচ্ছে। এই কারণেই থোয়াইটসকে ‘ডুমসডে গ্লেসিয়ার’ বলা হয়। বিজ্ঞানীদের মতে, যদি এটি ভেঙে পড়ে, তাহলে বিশ্বজুড়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রায় ১১ ফুট পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।


থোয়াইটস গ্লেসিয়ারকে পশ্চিম অ্যান্টার্কটিক আইস শিটের ‘দুর্বল দিক’ বলেও আখ্যা দেওয়া হয়। কারণ একবার ক্ষতি শুরু হলে তা আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। সামান্য অতিরিক্ত চাপ পেলেই এই গ্লেসিয়ার সম্পূর্ণ ভেঙে পড়তে পারে। থোয়াইটস আইস শেলফ গ্লেসিয়ারের পূর্বাংশকে ধরে রাখে কিন্তু বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, ২০৩২ সালের মধ্যেই এই আইস শেলফ ধসে পড়তে পারে। তখন গ্লেসিয়ার থেকে বরফের প্রবাহ হঠাৎ করে অনেক গুণ বেড়ে যাবে এবং পুরো ব্যবস্থাই ভেঙে পড়ার পথে এগোবে।


তবে থোয়াইটস একা নয়। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, উষ্ণ সমুদ্রজলের প্রভাবে অ্যান্টার্কটিকার একাধিক আইস শেলফ দ্রুত গলছে। পরিবর্তন এতটাই দ্রুত যে কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিনের মধ্যেই তা ধরা পড়ছে। প্রায় ১০ কিলোমিটার ব্যাসের বৃত্তাকার জলস্রোত গ্লেসিয়ারের নিচে ঢুকে পড়ছে। 

&t=220s


এই প্রক্রিয়ায় একটি ভয়ংকর ‘পজিটিভ ফিডব্যাক লুপ’ তৈরি হচ্ছে। গলতে থাকা বরফ থেকে বেরোনো ঠান্ডা জল উষ্ণ, লবণাক্ত সমুদ্রজলের সঙ্গে মিশে প্রবল সমস্যা তৈরি করছে, যার ফলে আরও দ্রুত বরফ গলছে। বিজ্ঞানীদের সতর্কবার্তা স্পষ্ট—এই প্রবণতা চলতে থাকলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ঝুঁকি ভবিষ্যতে ভয়াবহ আকার নিতে পারে।