আজকাল ওয়েবডেস্ক: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এক যুগের অবসান ঘটল। দুই শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে প্রচলিত এক সেন্টের মুদ্রা—‘পেনি’—এর উৎপাদন আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করে দিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার ফিলাডেলফিয়া মিন্টে শেষ পেনি তৈরি হয়, যা মার্কিন কোষাধ্যক্ষ ব্র্যান্ডন বিচ নিজ হাতে মুদ্রণ করেন। সেই মুহূর্তেই শেষ হয় টানা ২৩২ বছরের উৎপাদন পর্ব।
মার্কিন মুদ্রা দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ক্রিস্টি ম্যাকন্যালি বলেন, “নতুন পেনি উৎপাদন বন্ধ হলেও এর উত্তরাধিকার চিরকাল টিকে থাকবে। এটি আমেরিকার ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং অর্থনীতির এক অপরিহার্য অংশ।”
তবে অনেকের প্রশ্ন — এখন কি বাজার থেকে পেনি সম্পূর্ণভাবে তুলে নেওয়া হবে?
প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বর্তমানে প্রায় ৩০০ বিলিয়ন পেনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রচলনে রয়েছে, এবং সাধারণ মানুষ আপাতত এই এক সেন্ট মুদ্রা ব্যবহার করতে পারবেন। তবে নতুন করে আর কোনও পেনি বাজারে আসবে না। অর্থাৎ ধীরে ধীরে প্রচলিত কয়েনগুলিই ব্যবহারের শেষ অবধি টিকে থাকবে, কিন্তু নতুন সরবরাহ বন্ধ থাকবে।
এই সিদ্ধান্তটি ওয়াশিংটনে বহু বছর ধরে আলোচিত একটি বিতর্কের অবসান ঘটিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এটি মূলত অপ্রয়োজনীয় সরকারি ব্যয় কমানোর উদ্যোগের অংশ।
পেনি বন্ধের দাবি প্রথম আনেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তিনি এই প্রস্তাব দেন। তাঁর যুক্তি ছিল, “এক সেন্ট মূল্যের মুদ্রা তৈরি করতে আমাদের তিন সেন্টেরও বেশি খরচ হচ্ছে—এটি সরাসরি অপচয়।” ট্রাম্প Truth Social-এ পোস্ট করে লিখেছিলেন, “আমরা আমাদের জাতীয় বাজেট থেকে অপ্রয়োজনীয় অপচয় দূর করব—প্রয়োজনে এক পেনি করে হলেও।” তিনি তৎকালীন অর্থমন্ত্রীকে নতুন পেনি উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ দেন।
পেনি প্রথম তৈরি হয় ১৭৯২ সালে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের Coinage Act পাসের পর। প্রাথমিকভাবে এটি ছিল বিশুদ্ধ তামার তৈরি এবং আকারে বর্তমান মুদ্রার তুলনায় অনেক বড়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নকশা ও উপাদান উভয়ই পরিবর্তিত হয়েছে। ১৯৮২ সালে, ব্যয় কমাতে এটি তামা-প্লেটেড দস্তা দিয়ে তৈরি করা শুরু হয়। তবুও উৎপাদন খরচ ক্রমেই বাড়তে থাকে।
মার্কিন মিন্টের তথ্য অনুযায়ী, এক দশক আগে যেখানে একটি পেনি তৈরি করতে খরচ হত ১.৪২ সেন্ট, বর্তমানে সেই খরচ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩.৬৯ সেন্ট। অর্থাৎ প্রতিটি পেনি তৈরি করতে সরকারের তিন গুণেরও বেশি খরচ হচ্ছে—যা আর্থিক দিক থেকে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
এই বাস্তবতা থেকেই বহু বছর ধরে কংগ্রেসে পেনি বন্ধের প্রস্তাব উঠেছে। কিন্তু প্রতিবারই জনমতের চাপে বা রাজনৈতিক টানাপোড়েনে সেই প্রস্তাব বাতিল হয়েছে। অনেক আমেরিকান এখনও পেনিকে তাদের ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে দেখেন।
তবে এবার পরিস্থিতি বদলেছে। মুদ্রাস্ফীতি ও সরকারি ব্যয়ের চাপের মুখে অবশেষে এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, “পেনি হয়তো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রিয় মুদ্রা, কিন্তু আধুনিক অর্থনীতিতে এটি আর কার্যকর নয়।”
অর্থাৎ, দীর্ঘ ২৩২ বছর পর আমেরিকার মুদ্রা ইতিহাসের এক অধ্যায় বন্ধ হল। এখন থেকে পেনি থাকবে শুধু স্মৃতিতে—একটি যুগের নিদর্শন হিসেবে, যা একসময় মার্কিন অর্থনীতির প্রতীক ছিল।
