আজকাল ওয়েবডেস্ক: আদালতে বড় ধাক্কা খেলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিভিন্ন দেশের উপর শুল্ক আরোপ করে বিশ্ব অর্থনীতিকে যে ভাবে তিনি ওলট-পালট করে দিয়েছেন, তা বেআইনি। এমনটাই জানাল আমেরিকার এক আপিল আদালত। যদিও শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তে এখনই স্থগিতাদেশ দেওয়া হচ্ছে না। আরও কিছু দিন এ নিয়ে লড়াই করার সময় পাবেন ট্রাম্প। মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে এই রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন জানাবেন তিনি।


অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের এই আপিল আদালতের রায়ের তীব্র সমালোচনা করেছেন। ওই রায়ে তাঁর বেশিরভাগ শুল্ক আরোপকে অবৈধ বলা হয়েছিল। ট্রাম্প এই সিদ্ধান্তকে “ভুল” আখ্যা দিয়ে জোর দিয়ে বলেছেন, শুল্ক কার্যকরই থাকবে। নিজের সামাজিক মাধ্যমে ট্রাম্প লেখেন, “সব শুল্ক এখনও কার্যকর আছে! আজ এক পক্ষপাতদুষ্ট আপিল আদালত ভুলভাবে বলেছে আমাদের শুল্ক তুলে নেওয়া উচিত, কিন্তু তারা জানে শেষ পর্যন্ত আমেরিকাই জিতবে। তিনি আরও বলেন, “যদি এই শুল্ক কখনও তুলে নেওয়া হয়, তবে তা দেশটির জন্য একেবারে বিপর্যয় ডেকে আনবে।এটি আমাদের আর্থিকভাবে দুর্বল করে দেবে, অথচ আমাদের শক্তিশালী থাকতে হবে।

আরও পড়ুন:  শনিবার থেকেই সোনায় সোহাগা, ঘরে নিয়ে আসুন সৌভাগ্যের শ্রী, জেনে নিন আজকের সোনার দর


প্রেসিডেন্ট সতর্ক করে বলেন, আদালতের এই রায় বহাল থাকলে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে। তিনি বলেন,“যদি এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকে, তবে তা আক্ষরিক অর্থে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ধ্বংস করবে। শ্রমিক দিবসের ছুটির প্রসঙ্গ টেনে ট্রাম্প আরও বলেন, “এই শ্রমিক দিবসের শুরুতে আমাদের মনে রাখা উচিত, শুল্কই আমাদের শ্রমিকদের সাহায্যের সেরা হাতিয়ার এবং দেশীয়ভাবে তৈরি চমৎকার পণ্যের উৎপাদক কোম্পানিগুলোকে সমর্থনের মাধ্যম।”


তিনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জানান, শেষ পর্যন্ত বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে গড়াবে। তিনি বলেন, “এখন, মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের সহায়তায়, আমরা এই শুল্ক ব্যবহার করব জাতির কল্যাণে, এবং আমেরিকাকে আবার ধনী, শক্তিশালী ও ক্ষমতাশালী করে তুলব!”


শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের এক আপিল আদালত ট্রাম্পের বেশিরভাগ শুল্ক অবৈধ বলে রায় দিয়েছে, যা প্রেসিডেন্টের অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক হাতিয়ারে বড় ধাক্কা। ওয়াশিংটন ডিসির ফেডারেল সার্কিট আপিল আদালত বলেছে, ট্রাম্প তাঁর ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করেছেন এই শুল্ক আরোপের মাধ্যমে। এগুলো তিনি ব্যবহার করেছিলেন বাণিজ্য আলোচনায় চাপ তৈরি করতে এবং বিদেশি সরকারগুলোকে চাপে রাখতে। আদালত উপসংহারে জানায়, যদিও জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর প্রেসিডেন্টের ব্যাপক ক্ষমতা থাকে, কিন্তু সেই ক্ষমতার মধ্যে শুল্ক আরোপ বা অনুরূপ কর বসানো স্পষ্টভাবে অন্তর্ভুক্ত নয়।


যদিও আপিল আদালত জরুরি আইন ব্যবহার করে ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে, বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভারতের ওপর বসানো শুল্ক প্রত্যাহারের সম্ভাবনা কম। এর কারণ, এপ্রিলের প্রথম দফা শুল্কের পর ট্রাম্প গোপনে বিকল্প আইনি ক্ষমতার আওতায় ভারতের ওপর আরও কয়েক দফা শুল্ক বসান। তিনি আগেই অনুমান করেছিলেন, IEEPA-এর আওতায় বসানো শুল্ক আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।
উল্লেখ্য, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পরেই বিভিন্ন দেশের পণ্যের উপর চড়া হারে শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ শুল্ক রয়েছে ভারত এবং ব্রাজ়িলের উপর— ৫০ শতাংশ। ট্রাম্পের শুল্কের ফলে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্যে ব্যাঘাত ঘটেছে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেরও অবনতি হয়েছে। এমন সিদ্ধান্তের ফলে আমেরিকার অভ্যন্তরেও ট্রাম্প সমালোচিত হচ্ছেন। এবার আদালতও জানিয়ে দিল, তাঁর সিদ্ধান্ত বেআইনি।