আজকাল ওয়েবডেস্ক: শনিবার ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারে নজিরবিহীন পতন দেখা যায়, যেখানে মাত্র এক দিনে ১৯ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূলধন উধাও হয়ে যায়। ডেটা ট্র্যাকার একে “ক্রিপ্টো ইতিহাসের সবচেয়ে বড় লিকুইডেশন ইভেন্ট” বলে উল্লেখ করেছে। ঘটনাটি ঘটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের ওপর ১০০% শুল্ক এবং নতুন সফটওয়্যার রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা করার পরপরই।
ট্রাম্পের এই ঘোষণায় বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তারা সম্ভাব্য নতুন বাণিজ্যযুদ্ধের আশঙ্কায় ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ থেকে টাকা তুলে নিয়ে নিরাপদ সম্পদ বা স্টেবলকয়েনে সরিয়ে নিতে থাকেন। ফলে বাজারে তীব্র বিক্রির চাপ সৃষ্টি হয়।
দুই প্রধান ক্রিপ্টোকারেন্সি—বিটকয়েন ও ইথেরিয়াম সবচেয়ে বেশি ধাক্কা খায়। সপ্তাহের শুরুতে বিটকয়েনের দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ ১২৫০০০ ছুঁয়েছিল, কিন্তু শুক্রবার রাত থেকে বিক্রির চাপে সেটি এক ঝটকায় ১২% পড়ে যায়। শনিবার সকালে লন্ডন বাজারে বিটকয়েনের দাম নেমে আসে ১১৩০০০-এর নিচে। একইভাবে ইথেরিয়ামেও ব্যাপক লিকুইডেশন দেখা যায়, কারণ ট্রেডাররা দ্রুত পজিশন বন্ধ করতে থাকেন।
আরও পড়ুন: চাকরির বাজারে বড় ধাক্কা দিল এআই, মাথায় হাত বহু পরিবারের
Coinglass জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ১.৬ মিলিয়ন ট্রেডার লিকুইডেটেড হয়েছে, যার মধ্যে মাত্র এক ঘণ্টায় ৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি পজিশন বিক্রি হয়েছে। তবে প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে, কারণ অনেক এক্সচেঞ্জ, যেমন Binance, প্রতি সেকেন্ডে কেবল একটি লিকুইডেশন তথ্য প্রকাশ করে।
বাজারে আতঙ্কের মধ্যে সবচেয়ে বড় এক্সচেঞ্জ Binance-এ ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। অনেক ব্যবহারকারী জানান, তাদের অ্যাকাউন্ট হঠাৎ জমে যায়, স্টপ-লস অর্ডার ব্যর্থ হয়, এবং কিছু অল্টকয়েনের দাম মুহূর্তের মধ্যে শূন্যের কাছাকাছি নেমে আসে। Binance ব্যাখ্যা দেয় যে “অতিরিক্ত বাজার সক্রিয়তা”-র কারণে এই ত্রুটি ঘটেছে এবং আশ্বস্ত করে যে “ফান্ডগুলো নিরাপদ ।” তবে সমালোচকদের মতে, এই বিঘ্ন বাজারের পতন আরও বাড়িয়ে দেয় এবং এক্সচেঞ্জগুলো বিপর্যয়ের মধ্যেও লাভ করে।
Multicoin Capital-এর প্রধান ট্রেডার ব্রায়ান স্ট্রুগাটস বলেন, এখন মূল নজর “বাজারে কারা কাউন্টারপার্টি এক্সপোজারে রয়েছে এবং এটি কি আরও বড় আর্থিক সংক্রমণ ঘটাবে”—সেদিকে। কিছু বিশ্লেষক অনুমান করছেন, মোট লিকুইডেশন $30 বিলিয়ন ছাড়িয়ে যেতে পারে।
Orbit Markets-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ক্যারোলিন মরন সতর্ক করে বলেন, বিটকয়েনের পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ সাপোর্ট ১০০০০০ । তার মতে, “এই স্তরের নিচে নামলে গত তিন বছরের বুল সাইকেলের সমাপ্তি ঘটবে।”
ট্রাম্পের শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণায় শুধু ক্রিপ্টো নয়, শেয়ারবাজার, তেল ও পণ্যবাজারেও ধস নামে; অপরদিকে নিরাপদ সম্পদ যেমন সোনা ও ট্রেজারি বন্ড-এর চাহিদা বেড়ে যায়।
FalconX-এর বাজার বিভাগের সহ-প্রধান রবি দোশি জানান, দিনভর তাদের প্ল্যাটফর্মে “ডাউনসাইড প্রোটেকশন”-এর চাহিদা অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের অনিশ্চয়তার প্রতিফলন।
অ্যালগরিদমিক ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম Tread.fi-এর সিইও ডেভিড জং একে “ব্ল্যাক সোয়ান ইভেন্ট” আখ্যা দিয়ে বলেন, ২৪ ঘণ্টা চালু থাকা লিভারেজড পারপেচুয়াল ফিউচারস অনেক প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
Kronos Research-এর বিনিয়োগ প্রধান ভিনসেন্ট লিউ মন্তব্য করেন, “এই পতনের সূত্রপাত হয়েছিল মার্কিন-চীন শুল্ক সংকট থেকে, তবে প্রকৃত ধ্বংস ডেকে এনেছে অতিরিক্ত প্রাতিষ্ঠানিক ঋণনির্ভর লেনদেন। এটি প্রমাণ করে ক্রিপ্টো বাজার কতটা সংবেদনশীল বিশ্বের অর্থনৈতিক ঘটনার প্রতি।”
