আজকাল ওয়েবডেস্ক: ছিল রুমাল, হয়ে গেল বেড়াল। ঠিক তেমনই একটি আস্ত স্কুলবাস বদলে গেল আস্ত বাড়িতে। অদ্ভুত শোনালেও এটাই সত্যি। স্বাধীনতা, স্বনির্ভরতা এবং অ্যাডভেঞ্চারের খোঁজে থাকা মানুষদের কাছে এই 'বাস লাইফ' এখন নতুন স্বপ্ন। সম্প্রতি পল এবং শে নামে এক দম্পতি এই স্বপ্নকেই বাস্তবে পরিণত করেছেন।
২০০৬ সালের একটি পুরনো স্কুল বাসকে তাঁরা তিন বছরের পরিশ্রমে বানিয়ে ফেলেছেন এক অত্যাধুনিক চলন্ত বাড়ি।ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করা একটি ভিডিওতে তাঁরা তাঁদের এই অবিশ্বাস্য যাত্রার ঝলক দেখিয়েছেন, যা দেখে মুগ্ধ নেটিজেনরা। ভিডিওতে একটি সাধারণ হলুদ বাসকে এক ঝকঝকে, আরামদায়ক বাড়িতে রূপান্তরিত করার পুরো পর্বটি তুলে ধরা হয়েছে।
সাদা ভিনাইল র্যাপে মোড়া বাসটির গায়ে লেখা তাঁদের নিজস্ব লোগো 'BusLife4Me'। সামনে একটি মজবুত বাইক র্যাক, নতুন টায়ার এবং নিরাপত্তার জন্য ক্যামেরা- কোনও খুঁটিনাটিই বাদ দেননি তাঁরা। তবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হল বাসের ছাদে তৈরি করা কাঠের ডেক, যা রাতের আকাশ বা মনোরম দৃশ্য দেখার জন্য আদর্শ। পাশে লাগানো হয়েছে ১৫ ফুটের একটি সানশেড, যা দিয়ে বাইরে বসার জায়গা তৈরি করা যায়। ছাদে রয়েছে চারটি ৪৫০ ওয়াটের সোলার প্যানেল এবং নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগের জন্য সেল সিগন্যাল বুস্টার।
৪২ ফুট লম্বা এই বাসের অন্দরসজ্জাও তাক লাগানোর মতো। আরাম এবং কার্যকারিতা - দুই দিকই মাথায় রাখা হয়েছে। সামনের দিকে রয়েছে দুটি আলাদা অফিস স্পেস, যেখানে ডেস্ক, ঘূর্ণি চেয়ার এবং স্টোরেজের ব্যবস্থা রয়েছে। তার মাঝেই একটি ছোট্ট লাউঞ্জ, যেখানে বসার জায়গা, গোপন স্টোরেজ এবং একটি ভাঁজ করা টেবিল রয়েছে।
এর উল্টোদিকেই রয়েছে আধুনিক রান্নাঘর, যেখানে ইন্ডাকশন কুকটপ থেকে শুরু করে ওভেন এবং এয়ার ফ্রায়ার- সবই মজুত। বাসের একেবারে পিছনের অংশে রয়েছে শান্ত, ছিমছাম শোবার ঘর। সেখানে কুইন সাইজের বিছানা এবং তার নিচে ৭৫ লিটারের জলের ট্যাঙ্ক ও পোশাক রাখার জন্য গোপন স্টোরেজও তৈরি করা হয়েছে। ছাদে বাঁশের প্ল্যাঙ্ক এবং কাঠের কাউন্টারটপ বাড়িটিকে একটি 'রাস্টিক' বা গ্রাম্য সৌন্দর্য দিয়েছে।
পল এবং শে জানিয়েছেন, ২০২২ সালের মার্চ মাসে তাঁরা মাত্র ৬,০০০ ডলারে (প্রায় ৫ লক্ষ টাকা) বাসটি কিনেছিলেন। এরপর প্রতি সপ্তাহান্তে কাজ করে তিন বছরে বাসটিকে সম্পূর্ণ নতুন রূপ দিতে তাঁদের মোট খরচ হয়েছে প্রায় ২৫,০০০ ডলার (প্রায় ২১ লক্ষ টাকা)।
ভিডিওর সঙ্গে তাঁরা লিখেছেন, "আমাদের জীবনের সেরা প্রকল্পের শুরু থেকে শেষটা একটা ভিডিওতে দেখতে পাওয়া সত্যিই অবিশ্বাস্য! যাঁরা এই যাত্রাপথে আমাদের পাশে থেকেছেন, তাঁদের সবাইকে ধন্যবাদ। আর যাঁরা নতুন, তাঁদের আমাদের 'বাস লাইফ' পরিবারে স্বাগত জানাই।"
কয়েক মাস ধরে পল এবং শে তাঁদের নিজেদের হাতে গড়া এই বাড়িতেই থাকছেন এবং ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাঁদের কঠোর পরিশ্রম এবং নিষ্ঠা এই স্বপ্নকে এক অন্য মাত্রা দিয়েছে।
