আজকাল ওয়েবডেস্ক: এশিয়ার দীর্ঘতম নদীর বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে মাছের সংখ্যা রক্ষার জন্য চীন উচ্চতর ইয়াংসি নদীর একটি প্রধান উপনদীতে ৩০০টি বাঁধ ভেঙে দিয়েছে এবং বেশিরভাগ ছোট জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছে। গত সোমবার প্রকাশিত চীনের একটি রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থার এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চিশুই হে উপনদীর (লাল নদী নামেও পরিচিত) ৩৫৭টি বাঁধের মধ্যে ৩০০টি ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে ভেঙে ফেলা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩৭৩টি ছোট জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে ৩৪২টি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যার ফলে অনেক বিরল প্রজাতি মাছ তাদের প্রাকৃতিক প্রজনন চক্র পুনরায় শুরু করতে সক্ষম হয়েছে।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ ইউনান, গুইঝো এবং সিচুয়ানের মধ্য দিয়ে ৪০০ কিলোমিটার (২৪৯ মাইল) এরও বেশি পথ জুড়ে লাল নদী প্রবাহিত হয়েছে। জীব বিশেষজ্ঞরা এটিকে ইয়াংসি নদীর উপরের অংশে বিরল এবং স্থানীয় মাছের প্রজাতির শেষ আশ্রয়স্থল হিসাবে বিবেচনা করেন। গত কয়েক দশক ধরে, জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং ঘন বাঁধের কারণে জলপ্রবাহ ক্রমশ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যার ফলে নদীতে জলের পরিমাণ সীমিত হয়ে পড়েছে এবং কিছু অংশ সম্পূর্ণ শুকিয়েও গিয়েছে। এর ফলে উপযুক্ত আবাসস্থল এবং প্রজননের জায়গা মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে। প্রজনন ক্ষেত্র এবং অ-প্রজনন ক্ষেত্রগুলির মধ্যে তৈরি হওয়া জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি পরিযায়ী মাছের প্রজাতির পথও বন্ধ করে দিয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে শুরু হওয়া বৃহৎ পরিসরে সংশোধন কাজের ফলে জলজ বন্যপ্রাণী প্রজাতি, যার মধ্যে ইয়াংসি স্টার্জন আবাসস্থল এবং প্রাণশক্তি ফিরে পেয়েছে। চীনা প্যাডেলফিশের পাশাপাশি, মিষ্টি জলের স্টার্জন প্রজাতি (যা ইয়াংৎজির শেষ দৈত্য হিসেবে পরিচিত)কে ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ ইউনিয়ন বিলুপ্ত ঘোষণা করেছিল।
১৯৭০ সালের পর থেকে স্টার্জনের প্রাকৃতিক জনসংখ্যা তীব্রভাবে হ্রাস পেয়েছে। মূলত বাঁধ নির্মাণ এবং ইয়াংসি নদীতে জাহাজ শিল্পের বিকাশের ফলে। ২০০০ সালের পর থেকে সমগ্র ইয়াংজি নদীতে কোনও প্রাকৃতিকভাবে প্রজনন করা তরুণ স্টার্জন পাওয়া যায়নি। তবে, চাইনিজ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেসের ইনস্টিটিউট অফ হাইড্রোবায়োলজির বিজ্ঞানীদের একটি দল পুনরুদ্ধারের আশাব্যঞ্জক লক্ষণ জানিয়েছে।
উহান ইনস্টিটিউটের গবেষক লিউ ফেইয়ের নেতৃত্বে দলটি ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে রেড নদীতে ইয়াংজি স্টার্জনের দু’টি দল ছাড়ে। বন্য পরিবেশের সঙ্গে স্টার্জনগুলি সফলভাবে খাপ খাইয়ে নিয়েছে এবং বেড়ে উঠছে। এই বছর, গবেষকরা আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে মাছটি প্রাকৃতিকভাবে প্রজননের জন্য স্থানান্তরিত হতে পারে কি না। এপ্রিল মাসে, তাঁরা গুইঝোতে নদীর একটি অংশে ২০টি প্রাপ্তবয়স্ক ইয়াংসি স্টার্জন ছেড়েছেন। গবেষকরা জানিয়েছেন, এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে, মাছটির প্রাকৃতিক প্রজনন আচরণ এবং সফলভাবে ডিম ফুটতে দেখা গিয়েছে।
ইনস্টিটিউটের সর্বশেষ পর্যবেক্ষণের ফলাফল অনুসারে, রেড রিভারের জলজ জীববৈচিত্র্য ক্রমাগত উন্নত হচ্ছে, নদীর বিভিন্ন অংশে সংগৃহীত মাছের প্রজাতির সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। জলজ আবাসস্থল হিসেবে ইয়াংসি নদীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রক্ষার জন্য চীন একাধিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। যার সবকটিই ২০২০ সালে চালু করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ১০ বছরের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা এবং জীববৈচিত্র্যকে প্রভাবিত করেছে এমন ছোট জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির উপর নিয়ন্ত্রণ। স্থানীয় প্রশাসনও নদীতে বালি উত্তোলন কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে।
