আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাংলাদেশের ফরিদপুরে ঐতিহ্যবাহী এক স্কুলের ১৮৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠান পরিণত হল ব্যাপক বিশৃঙ্খলায়।

শুক্রবার গভীর রাতে বাংলাদেশের কিংবদন্তি রক শিল্পী জেমসের কনসার্টে হামলা চালাল দুষ্কৃতীরা। জানা গিয়েছে, ঘটনার জেরে অনুষ্ঠান বাতিল করতে বাধ্য হন আয়োজকরা।

তবে ঘটনায় কোনও মৃত্যুর খবর না পেলেও অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় রক তারকা হিসেবে পরিচিত জেমস।

শুক্রবার ফরিদপুর জেলা স্কুলের ১৮৫তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষ্যে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তাঁর গান গাওয়ার কথা ছিল। স্কুল চত্বরে আয়োজিত এই কনসার্টে হাজার হাজার বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্ররা এসেছিলেন।

কিন্তু অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কয়েক মিনিট আগেই একদল দুষ্কৃতী ব্যক্তি মঞ্চে হামলা চালায়। কয়েক মিনিটের মধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

সূত্র মারফত জনা গিয়েছে, রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ জেমসের মঞ্চে ওঠার কথা ছিল। তার কিছু আগেই একদল দুষ্কৃতী জোর করে অনুষ্ঠানস্থলে ঢোকার চেষ্টা করে।

নিরাপত্তারক্ষীরা বাধা দিলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। মঞ্চ ও দর্শকদের লক্ষ্য করে ইট-পাথর ছোড়া শুরু হয়, যার জেরে গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

জানা গিয়েছে, আহতদের অধিকাংশই স্কুলের ছাত্র। বিশেষ করে যারা মঞ্চের সামনের দিকে ছিলেন, তারা বেশি চোট পেয়েছেন। ইটের আঘাতে বেশ কয়েক জনের মাথা ও হাতে-পায়ে চোট লাগে।

পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠলে ছাত্ররাই দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। প্রতিবাদের মুখে পড়ে এলাকা ছাড়তে হয় হামলাকারীদের।

তবে পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় জেলা প্রশাসনের তরফে কনসার্ট বাতিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। হামলার মধ্যেই অল্পের জন্য রক্ষা পান জেমস। কড়া নিরাপত্তায় তাঁকে দ্রুত অনুষ্ঠানস্থল থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

শিল্পী বা তাঁর ব্যান্ডের কোনও সদস্য আহত হননি বলেই জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানের প্রচার ও মিডিয়া টিমের সদস্য রাজিবুল হাসান খান জানান, কনসার্টের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পূর্ণ ছিল।

কিন্তু আচমকা হামলার ঘটনা ঘটে গিয়েছে। ইটের আঘাতে ১৫ থেকে ২৫ জন ছাত্র আহত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কারা এই হামলা চালাল বা কেন এমন করা হল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। আরও বড় অঘটন এড়াতেই অনুষ্ঠান বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।’

তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হামলাকারীরা গান-বাজনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের বিরোধিতা করছিল। যদিও প্রশাসনের তরফে এখনও পর্যন্ত হামলাকারীদের পরিচয় সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি।

কনসার্ট বাতিলের পর এলাকায় পুলিশ প্রহরা বাড়ানো হয়। গভীর রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত খবর মেলেনি।

উল্লেখ্য, ১৮৪০ সালে ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত ফরিদপুর জেলা স্কুল বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দু’দিন ধরে চলা ১৮৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানের শেষ লগ্নে এই কনসার্ট হওয়ার কথা ছিল।

বৃহস্পতিবার জাতীয় পতাকা ও স্মারক পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন, শপথগ্রহণ এবং বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়েছিল। শুক্রবার সন্ধ্যায় ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং বহু প্রতীক্ষিত জেমসের কনসার্ট।