আজকাল ওয়েবডেস্ক: বুলগেরিয়ার অন্ধ জ্যোতিষ বাবা ভাঙ্গা—যিনি ‘বলকানদের নস্ত্রাদামুস’ নামে বিশ্বজুড়ে পরিচিত—তাঁর পুরনো ভবিষ্যদ্বাণীগুলো আবারও নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। ১৯৯৬ সালে মৃত্যুবরণ করলেও, তাঁর করা ভবিষ্যদ্বাণীগুলো প্রায়ই সংবাদ শিরোনাম হয়, বিশেষ করে নতুন বছর ঘনিয়ে এলে। প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যু থেকে শুরু করে কোভিড-১৯ মহামারির পূর্বাভাস পর্যন্ত—তাঁর অনেক ভবিষ্যদ্বাণীই বাস্তবের কাছাকাছি বলে বিশ্বাস করে বহু মানুষ।

তবে এবার যে ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে, তা ইউরোপের ভবিষ্যৎকে কেন্দ্র করে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাবা ভাঙ্গা নাকি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে আগামী ১৯ বছরের মধ্যে ইউরোপের চেহারা সম্পূর্ণ পাল্টে যাবে। তাঁর কথায়, “যেমনভাবে আজ আমরা ইউরোপকে চিনি, ২০৪৪ সালের শেষের দিকে সেই ইউরোপ আর থাকবে না।”

বলা হচ্ছে, তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে মহাদেশটি প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়বে—ক্রমাগত সংঘর্ষ, প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও মানবসৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞে ইউরোপ ‘প্রায় জনহীন এক মরুভূমিতে’ পরিণত হবে। তাঁর আরেকটি ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে, আগামী ১৮ বছরের মধ্যে রোমে এক ‘খলিফা’র উত্থান ঘটবে। রোম, যা খ্রিস্টান বিশ্বের অন্যতম কেন্দ্র এবং ভ্যাটিকান সিটির অবস্থানস্থল, সেখানে ইসলামী বিশ্বনেতার আধিপত্য কায়েমের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি।

বাবা ভাঙ্গার ২০২৬ সালকে ঘিরেও কয়েকটি ভবিষ্যদ্বাণী বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে—

১. প্রাকৃতিক দুর্যোগের বৃদ্ধি:
বাবা ভাঙ্গা নাকি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে ২০২৬ সাল থেকে শুরু হবে একের পর এক মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বিশাল ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুত্পাত, আর জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রভাব পৃথিবীর নানা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়বে।

২. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) দখল:
তিনি সতর্ক করেছিলেন যে, ২০২৬ সালে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছবে, যেখানে মানুষ নিজেই তার প্রযুক্তিগত সৃষ্টির নিয়ন্ত্রণ হারাবে। বর্তমানে এআই প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতির পরিপ্রেক্ষিতে এই ভবিষ্যদ্বাণীকে অনেকে ভয়ঙ্করভাবে বাস্তবসম্মত বলে মনে করছেন।

৩. ভিনগ্রহবাসীর আগমন:
বাবা ভাঙ্গার মতে, ২০২৬ সালের নভেম্বরে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে একটি বিশাল মহাকাশযান প্রবেশ করবে—যা মানব সভ্যতার সঙ্গে প্রথম সরাসরি ‘এলিয়েন যোগাযোগ’-এর সূচনা ঘটাতে পারে।

৪. তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা:
সবচেয়ে আলোচিত ও আতঙ্কজনক ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর একটি হলো ২০২৬ সালে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনার পূর্বাভাস। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, চীন-তাইওয়ান সংঘাত, রাশিয়া-আমেরিকার সরাসরি মুখোমুখি অবস্থান এবং আন্তর্জাতিক  শক্তিগুলোর পারস্পরিক দ্বন্দ্ব এক পর্যায়ে বিশ্বযুদ্ধের রূপ নিতে পারে।

যদিও এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর কোনওটিরই বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই এবং ইতিহাসবিদরা প্রায়ই এগুলোকে লোককাহিনি বা অতিরঞ্জিত ব্যাখ্যা বলে মনে করেন, তবুও প্রতি বছর নতুন করে তাঁর কথাগুলো ভাইরাল হয়—বিশেষত যখন বিশ্বজুড়ে অস্থিরতা, যুদ্ধ বা প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের হাওয়া বইতে থাকে।

বলা চলে, মৃত্যু-পরবর্তী প্রায় তিন দশক পেরিয়ে গেলেও বাবা ভাঙ্গা আজও রহস্য ও কৌতূহলের প্রতীক হয়ে আছেন—যেখানে তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবের সঙ্গে মিলে গেলে মানুষ কেবল বিস্মিত হয়, আর মেলেনি বলে ভুলে যায় না, বরং আরও একবার তাঁর রহস্যময় ভবিষ্যদ্বাণী খুলে পড়ে নতুন করে আতঙ্কিত হয়।